লেহ জেলা
লেহ জেলা ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের লাদাখ অঞ্চলের দুইটি জেলার মধ্যে একটি জেলা এবং আয়তনের দিক থেকে গুজরাট রাজ্যের কচ্ছ জেলার পরেই ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা।
লেহ জেলা | |
---|---|
জম্মু ও কাশ্মীরের জেলা | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | জম্মু ও কাশ্মীর |
প্রশাসনিক বিভাগ | জেলা |
সদরদপ্তর | লেহ |
ভূগোল
লেহ জেলা ৩২° উত্তর থেকে ৩৬° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৭৫° পূর্ব থেকে ৮০° পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে ৪৫,১০০ বর্গকিলোমিটার ক্ষেত্রফলযুক্ত এলাকা নিয়ে গঠিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই জেলার উচ্চতার বিস্তার আনুমানিক ২৩০০ মিটার উচ্চতা থেকে ৫০০০ মিটার উচ্চতা। এই জেলার পশ্চিম দিকে কার্গিল জেলা, উত্তর পশ্চিম দিকে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের গিলগিট-বালটিস্তান রাজ্যের ঘাংচে জেলা, উত্তর দিকে ও পূর্বদিকে চীন, দক্ষিণ দিকে হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের লাহুল ও স্পিটি জেলা অবস্থিত।
এই জেলায় হিমালয়ের কারাকোরাম, লাদাখ ও জাংস্কার পর্বতশ্রেণী এই তিনটি পর্বতশ্রেনী পরস্পর সমান্তরালে অবস্থিত। এই তিন পর্বতমালার মধ্যে দিয়ে শ্যোক, সিন্ধু ও জাংস্কার নদী প্রবাহিত হয়ে বিস্তীর্ণ জনবহুল নদী উপত্যকা সৃষ্টি করেছে। এই জেলায় খার্দুং, চাং, তাংলাং প্রভৃতি বিশ্বের সর্বোচ্চ গিরিবর্ত্মগুলি অবস্থিত। [1]
জীবজগৎ
১৮৭০ এর দশকে অস্ট্রিয়ার জীববিজ্ঞানী ফার্দিনান্দ স্টোলিকজকা প্রচুর অভিযানের মাধ্যমে লাদাখ অঞ্চলের জীবজগতের বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ করেন। ভারতের গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চল থেকে পাখিরা লাদাখে গ্রীষ্মকালে চলে যায় বলে এই অঞ্চলের পাখিদের প্রায় আড়াইশো রকমের প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়। এই অঞ্চলে কালোঘাড় সারস, তুতি, রবিন, কালো গির্দি, মোহনচূড়া, খয়রামাথা গাঙচিল, খয়রা চখাচখি, দাগি রাজহাঁস, তিব্বতী তুষারমোরগ, চুকার, গৃধিনী সোনালী ঈগল প্রভৃতি পাখি উল্লেখযোগ্য। লাদাখের পশুদের সঙ্গে মূলতঃ মধ্য এশিয়া ও তিব্বতের পশুদের সাদৃশ্য আছে। এই অঞ্চলে তিব্বতী জংলী গাধা, তুষার চিতা, তিব্বতী বালি শেয়াল প্রভৃতি পশু উল্লেখযোগ্য। [1]
প্রশাসন
জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের অন্যান্য জেলাগুলির মানুষের ধর্ম ও সংস্কৃতির বিভিন্নতার কারণে লাদাখের জনগণের দাবীতে ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে ভারত সরকার ও জম্মু ও কাশ্মীর সরকার ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৮শে আগস্ট লাদাখকে এক স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দিতে সম্মত হয়। এর ফলশ্রুতি হিসেবে লাদাখ স্বায়ত্ত্বশাসিত পার্বত্য উন্নয়ন পরিষদ, লেহ তৈরী হয়। এই পরিষদ ৩০ জন উপদেষ্টা বা কাউন্সিলর নিয়ে গঠিত, যাঁদের মধ্যে ২৬ জন নির্বাচিত ও ৪ জন মনোনীত সদস্য। [2] এই পরিষদের কার্যনির্বাহী বিভাগ একজন মুখ্য কার্যনির্বাহী উপদেষ্টা ও চারজন কার্যনির্বাহী উপদেষ্টা নিয়ে গঠিত। মুখ্য কার্যনির্বাহী উপদেষ্টাই পরিষদের সভাপতি ও লেহ জেলার ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি কমিশনার। [3] জম্মুও কাশ্মীর বিধানসভায় লেহ জেলা থেকে লেহ ও নুব্রার জন্য দুইটি আসন সংরক্ষিত আছে। এই জেলা থেকে একজন সদস্য লেহ ও কার্গিল উভয় জেলার হয়ে লোকসভায় প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। [1]
জনসংখ্যাতত্ত্ব
১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ভারতীয় জনগণনা অনুযায়ী এই জেলার মোট জনসংখ্যা ছিল ৮৯,৫০০। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ভারতীয় জনগণনা অনুযায়ী জনসংখ্যা ১লক্ষ ১৭ হাজার [1] থেকে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ভারতীয় জনগণনা অনুযায়ী ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৭১৪ জনে বৃদ্ধি পায়। ২০০১ থেকে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এই জেলায় জনসংখ্যার প্রায় ২৫% বৃদ্ধি হয়েছে।[4] ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ভারতীয় জনগণনা অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ৭৫.৫৭% গ্রামে বসবাস করেন। লেহ জেলায় ৭৭.৩০% বৌদ্ধ, ১৩.৭৮% মুসলমান ও ৮.১৬% হিন্দু। ৩৭.৯২% মানুষ কৃষিজীবী এবং ৪.২৮% মানুষ কৃষিশ্রমিক। [1]
পর্যটন
লেহ জেলার মুখ্য পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্রগুলি্র মধ্যে অন্যতম হল লেহ শহরে অবস্থিত শান্তি স্তূপ, লেহ প্রাসাদ, জোরাওয়ার দুর্গ। এছাড়া হেমিস, থিকসে, আলচি, লামায়ুরু প্রভৃতি বহু বৌদ্ধবিহার পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় স্থান।
ঘুরতে যাওয়াটা যাঁদের কাছে অ্যাডভেঞ্চার, তাঁদের জন্য আদর্শ সফর হল মোটরবাইকে মানালি থেকে লেহ পৌঁছানো৷ একে ভারতের পথ সফরের মক্কা বলে৷ বরফে ঢাকা পাহাড় ও গভীর খাদের মধ্যে দিয়ে কনকনে ঠান্ডায় মোটরবাইক চালিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। দু’পাশে ফেলে আসা ছোট্ট গ্রাম আর প্রকৃতির সৌন্দর্য অপূর্ব ৷[5]
সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা
লেহ জেলায় ১ডি নং জাতীয় সড়ক ও লেহ-মানালি মহাসড়ক নামে দুইটি প্রধান সড়ক অবস্থিত। জোজি, ফোতু, নামিকা প্রভৃতি উচ্চ গিরিবর্ত্মের ওপর দিয়ে নির্মিত ১ডি নং জাতীয় সড়ক শ্রীনগর, দ্রাস ও কার্গিল শহরের সঙ্গে লেহ শহরকে যুক্ত করেছে। অপরদিকে রোহটাং, তাংলাং প্রভৃতি উচ্চ গিরিবর্ত্মের ওপর দিয়ে নির্মিত লেহ-মানালি মহাসড়ক লেহকে হিমাচল প্রদেশের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এই দুইটি সড়কপথ অতিরিক্ত তুষারপাতের কারণে শীতকালে বন্ধ থাকে। শীতকালে খার্দুং গিরিবর্ত্ম ও চাং গিরিবর্ত্ম তুষারপাতের জন্য বন্ধ থাকে বলে লেহ শহরের সঙ্গে দুর্বুক ও নুব্রার মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। [1]
বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা
লেহ জেলায় কুশোক বকুল কম্পোচি বিমানবন্দর ও নুব্রা উপত্যকায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিমানবন্দর অবস্থিত। লেহ শহরে অবস্থিত কুশোক বকুল কম্পোচি বিমানবন্দর থেকে সামরিক ও নতুন দিল্লী, শ্রীনগর ও জম্মু পর্যন্ত অসামরিক বিমান পরিষেবার ব্যবস্থা রয়েছে। [1]
তথ্যসূত্র
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (PDF)। ২৪ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৮ আগস্ট ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১ নভেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- "District Census 2011"। Census2011.co.in। ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-৩০।
- "মানালি-লেহ রোড ট্রিপ"।