লার্ভা (পতঙ্গ)
লার্ভা বা শূককীট বা শুঁয়াপোকা হল সকল হলোমেটাবোলাস পতঙ্গের অপূর্ণাঙ্গ একটি দশা যেটি ডিম, পিউপা ও পূর্ণাঙ্গ দশা থেকে আলাদা এবং যাদের দেহ সাধারণত নরম হয়, এছাড়া উপাঙ্গগুলো হয় হ্রাসপ্রাপ্ত। [1][2][3] তথাপি, জলজ হেমিমেটাবোলাস পতঙ্গের (অডোনাটা, এফেমেরোপ্টেরা, ও প্লাকোপ্টেরা) শেষদিকের ইনস্টারের বাহ্যিক ডানার প্যাড সংবলিত অপূর্ণাঙ্গ সদস্যদের ভুল করে লার্ভা ডাকা হয়। সত্যিকারের লার্ভা দেখতে পূর্ণাঙ্গ দশার পতঙ্গের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। লার্ভাদের খাবার এবং জীবনাচরণ পূর্ণাঙ্গ পতঙ্গের চাইতে সম্পূর্ণ ভিন্ন। লার্ভা দশাতেই এর কাঠামোতে কিছু মূখ্য পরিবর্তন (মোচন) ঘটে যেগুলোকে লার্ভাল হেটেরোমরফোসিস বা হাইপারমেটামরফোসিস বলা হয়। [1][4] আধুনিক পতঙ্গের তুলনায় আদিম পতঙ্গে লার্ভার ইনস্টারের সংখ্যার পরিমাণ বেশি। [4]

ধরণ
নানান ধরনের পতঙ্গের লার্ভাকে জাতিজনিক উপায়ে আলাদা না করে কয়েকটি কার্যিক প্রকরণে ভাগ করা যায়। অনেক সময় দেখা যায়, সম্পূর্ণ আলাদা বর্গের পতঙ্গ একই ধরনের লার্ভা উৎপন্ন করেছে। লার্ভার তিনটি খুব সাধারণ প্রকারভেদ হলঃ পলিপড, অলিগোপড এবং অ্যাপড। [1][4]
পলিপড
পলিপড লার্ভার উদাহরণ হল লেপিডোপ্টেরার শুঁয়াপোকারা। এদের দেহ বেলনাকৃতির যার বক্ষীয় পাগুলো ও উদরীয় প্রোলেগ বা ছদ্ম পাগুলো খাটো হয়ে থাকে। সিমফিটান হাইমেনোপ্টেরা এবং অধিকাংশ মেকোপ্টেরাতেও পলিপড লার্ভা রয়েছে। পলিপড লার্ভাগুলো কিছুটা নিষ্ক্রিয় এবং মূলত শাকাশী।[1]
অলিগোপড
এসব লার্ভার উদরীয় প্রোলেগ নেই, কিন্তু কর্মক্ষম বক্ষীয় পা রয়েছে। এদের মুখোপাঙ্গ অনেক সময় প্রোগনেথাস হয়ে থাকে। অলিগোপড লার্ভাদের অনেকেই সক্রিয়া শিকারী, যদিও অন্যরা হয় আলসে প্রকৃতির মাটিতে বসবাসকারি ডেট্রিভোর বা ময়লাভোজী, অথবা শাকাশী। লেপিডোপ্টেরা, মেকোপ্টেরা, ডিপ্টেরা, সাইফোনাপ্টেরা ও স্ট্রেপসিনোপ্টেরা ছাড়া আর সব বর্গের কিছু না কিছু সদস্যে এই ধরনের লার্ভা দেখা যায়।[1]
অ্যাপড
এসব লার্ভার সত্যিকার কোন পা নেই। দেখতে এরা মূলত কৃমি ও কীড়ার মতো যারা মাটি, কাঁদা, গোবর, পঁচা উদ্ভিদ বা প্রাণীতে, অথবা অন্য জীবের শরীরে পরজীবী হিসেবে বসবাস করে। সাইফোনাপ্টেরা, হাইমেনোপ্টেরা, নেমাটোসেরান ডিপ্টেরা, ও নানান গুবরেপোকাতে এ ধরনের লার্ভা দেখা যায় যাদের সুগঠিত মস্তক রয়েছে। অন্যদিকে উচ্চ পর্যায়ের ডিপ্টেরার কীড়াতে মস্তক সুগঠিত নয়। অনেক প্রজাতির পতঙ্গের অ্যাপড লার্ভার বাহ্যিক গঠন এতোই হ্রাসকৃত যে এদেরকে সনাক্ত করা বিশেষজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদের জন্যেও কঠিন হয়ে পড়ে।[1]
এছাড়াও, মস্তকের আবরণে স্ক্লেরোটিনের পরিমাণের উপর নির্ভর করে লার্ভাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়ঃ ইউসেফালাস (পূর্ণ স্ক্লেরোটিনময়), হেমিসেফালাস (অর্ধপূর্ণ), এবং অ্যাসেফালাস (ঠুলিবিহীন)।[4]
আচরণ
আকার, আকৃতি ও বর্ণে লার্ভা বিভিন্ন ধরনের হয়। বর্ণময় লার্ভারা মূলত খোলামেলা আবাসে থাকে যেখানে এসব বর্ণ তাঁদেরকে লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করে। উজ্জ্বল বর্ণ অনেক সময় তাঁদের শিকারীকে বিষাক্ততা সম্পর্কে সাবধান করে দেয়। অন্যদিকে, যেসব লার্ভা গুপ্ত স্থানে বসবাস করে তারা প্রায় সবসময় সাদা, ধূসর, কালো বা বাদামী বর্ণের মিশেলে হয়ে থাকে। [2]
তথ্যসূত্র
- Gullan, PJ and PS Cranston (২০০৪), "The insects: an outline of entomology", উইলি-ব্ল্যাকওয়েল, ৩য় সংস্করণ।
- Stehr, Frederick W. (২০০৩), Larva, In Encyclopedia of Insects ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে, edited by H. Resh Vincent and T. Cardé Ring. ইউএসএ: একাডেমিক প্রেস, এলসিভিয়ার, পৃষ্ঠাঃ ৬২২-৬২৪।
- ডেভিড গ্রিমাল্ডি ও মাইকেল এস. অ্যাঞ্জেল (২০০৫), Evolution of the Insects, ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, ক্যামব্রিজ, পৃষ্টা ৬৫৫।
- চ্যাপমেন, আর.এফ. (২০১৩), The Insects: Structure and Function, ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, ক্যামব্রিজ, ৫ম সংস্করণ।