রুবাইয়াত হোসেন

রুবাইয়াত হোসেন (সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন) আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত ও প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশী চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেখক, প্রযোজক এবং গবেষক।

রুবাইয়াত হোসেন
জন্ম
রুবাইয়াত হোসেন

১৯৮১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
পেশাচলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক
উল্লেখযোগ্য কর্ম
মেহেরজান, আন্ডার কনস্ট্রাকশন মেড ইন বাংলাদেশ
দাম্পত্য সঙ্গীআশিক মোস্তফা
ওয়েবসাইটrubaiyat-hossain.com

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে নির্মিত মেহেরজান চলচ্চিত্র পরিচালনার মাধ্যমে ২০১১ সালে চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসাবে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন। এই চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করে এবং মুক্তির মাত্র এক সপ্তাহ পরেই চাপের মুখে পরিবেশক সিনেমা হল থেকে নামিয়ে নেয়।[1] তবে এটি আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত ও বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছে।

তার দ্বিতীয় ছবি আন্ডার কন্সট্রাকশন সমকালীন ঢাকা শহরের প্রেক্ষাপটে মধ্যবিত্ত এক নারীর আত্ম-অনুসন্ধানের চিত্র। ২০১৫ সালে সিয়াটল চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ারের পর জানুয়ারি ২১, ২০১৬ বাংলাদেশে ছবিটি মুক্তি পায়।

তার সাম্প্রতিক ছবি, মেড ইন বাংলাদেশ টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসব ২০১৯ এ প্রিমিয়ারের পর একই বছরের ডিসেম্বরে ফ্রান্স, পর্তুগাল ও ডেনমার্কে ৭০টির অধিক সিনেমা হলে মুক্তি পায়। ২০২০ সালের শুরুতে কানাডা, আমেরিকা ও বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ছবিটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে।

ব্যক্তিগত জীবন

রুবাইয়াত হোসেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সৈয়দ আবুল হোসেন ও তার স্ত্রী খাজা নার্গিস হোসেনের মেয়ে। তার মা ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সুফি সাধক হযরত খাজা এনায়েতপুরীর বংশধর।

জুন ২০০৮ সাল থেকে তিনি চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক আশিক মোস্তফার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ।

শিক্ষা

সত্যজিৎ রায় এবং ঋত্বিক ঘটকের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে রুবাইয়াত হোসেন চলচ্চিত্রে আগ্রহী হন এবং ২০০২ সালে নিউইয়র্ক ফিল্ম একাডেমিতে চলচ্চিত্র পরিচালনায় ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। তিনি প্রখ্যাত স্মিথ কলেজ থেকে উইমেন স্ট্যাডিজে স্নাতক এবং পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দক্ষিণ এশীয় গবেষণা ও নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের টিশ স্কুল অফ আর্টস থেকে চলচ্চিত্র বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। সুফিবাদ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, বাঙালি আধুনিকতার গঠন এবং নারীবাদ তার প্রাথমিক অগ্রহের বিষয়।[2]

সামাজিক কর্মকান্ড

রুবাইয়াত হোসেন বাংলাদেশে বিভিন্ন নারী অধিকার বিষয়ক এনজিও যেমন আইন ও সালিশ কেন্দ্র ও নারিপক্ষ এর জন্য কাজ করেছেন। তিনি ২০০৭ সালে ব্র্যাক স্কুল অব পাবলিক হেলথ কর্তৃক আয়োজিত লিঙ্গগত বৈষম্য ও অধিকার বিষয়ক প্রথম আন্তর্জাতিক কর্মশালার সহ-সমন্বয়কারী ছিলেন।[2]

চলচ্চিত্রের তালিকা

মেড ইন বাংলাদেশ (২০১৯, কাহিনীচিত্র - পরিচালক/প্রযোজক) বাংলাদেশ-ফ্রান্স-ডেনমার্ক-পর্তুগাল এর যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অনুদান অর্জন করে যার মধ্যে রয়েছে ফ্রান্সের সিএনসি ফান্ড, ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের ইউরিমাজ ফান্ড, ড্যানিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট ফান্ড, সোর্ফন্ড প্লাস এবং টোরিনো অডিয়্যান্স ডিজাইন ফান্ড। এছাড়াও লোকার্নো ওপেন ডোরস্ এ আর্টে পুরস্কার জিতেছিল। সম্প্রতি টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হওয়ার পর ছবিটি লন্ডন চলচ্চিত্র উৎসবসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হচ্ছে। মেড ইন বাংলাদেশ-এর ফরাসি পরিবেশক ও আন্তর্জাতিক বিক্রয় প্রতিনিধি পিরামিড ফিল্মস।

আন্ডার কন্সট্রাকশন (২০১৫, ফিচার - লেখক/পরিচালক/প্রযোজক)

  • সিয়াটল আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব
  • মন্ট্রিয়েল বিশ্ব চলচ্চিত্র উৎসব[3]
  • সাও পাওলো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব[4]
  • স্টকহোম চলচ্চিত্র উৎসব[5]
  • লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসব[6]

মেহেরজান (২০১১, ফিচার - লেখক/পরিচালক/প্রযোজক)

নির্বাচিত পুরস্কার / সম্মাননা

  • এমিলি গিমে পুরস্কার - প্যারিসের গিমে মিউজিয়াম কর্তৃক প্রদত্ত
  • জুরি এওয়ার্ড ও ক্রিটিক এওয়ার্ড, ভেসুল এশীয় চলচ্চিত্র উৎসব, ফ্রান্স
  • মহিলা পরিষদ পুরস্কার - চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সম্মাননা
  • বাংলাদেশ মহিলা নেতৃত্বায়ন পুরস্কার - বিশ্ব নারী নেতৃত্ব কংগ্রেস, ভারত
  • শ্রেষ্ঠ উদীয়মান পরিচালক পদক, নিউ ইয়র্ক এশিয়ান আমেরিকান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব
  • শ্রেষ্ঠ দর্শক পুরস্কার, ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, বাংলাদেশ
  • অরসন ওয়েলস পদক, টিবুরন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
  • সমালোচক পুরস্কার, জয়পুর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ভারত
  • জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬ - শ্রেষ্ঠ সংলাপ
  • জুরি পুরস্কার ও দর্শক পুরস্কার, এমিয়েন্স আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ফ্রান্স
  • প্রিমিও ইন্টারফেডি, তুরিন (টোরিনো) চলচ্চিত্র উৎসব
  • দর্শক পুরস্কার, আফ্রিকান ডায়াস্পোরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব

খনা টকিজ

রুবাইয়াত হোসেন এবং তার জীবনসঙ্গী আশিক মোস্তফা ২০০৮ সালে বাংলাদেশ ভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ সংস্থা খনা টকিজ (পূর্বে ইরা মোশন পিকচার্স নামে পরিচিত) প্রতিষ্ঠা করেন। খনা টকিজ দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত বেশ কিছু চলচ্চিত্র নির্মানের পাশাপাশি বাংলাদেশের তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের আন্তর্জাতিক অঙনে তুলে ধরার পেছনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

তথ্যসূত্র

  1. "Bangladeshi war film Meherjaan rekindles old enmities"BBC News। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
  2. "About"Rubaiyat Hossain। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
  3. "movie-UNDER CONSTRUCTION"www.ffm-montreal.org। ২ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০১৯
  4. "São Paulo International Film Festival (2015)"
  5. "Under Construction"। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০১৯
  6. "Under Construction"www.pardolive.ch
  7. "Schedule | Kolkata Film Festival"Kolkata Film Festival। ২০১২-০৮-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৮-১৬
  8. "Meherjaan"Fribourg International Film Festival। ২০১২-০৫-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
  9. "30 Festival de Cine de Bogotá 2012 – Pagina Oficial | 30 Festival de Cine de Bogotá 2012 – Pagina Oficial"। Xxix.bogocine.com। ২০১৩-১০-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৮-১৬
  10. "Cinemateca Uruguaya"। Cinemateca.org.uy। ২০১৩-০৮-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৮-১৬
  11. "Meherjaan"Osian's Cinefan। ২০১২-০৮-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.