খাজা ইউনুস আলী
খাজা ইউনুস আলী বেশি পরিচিত খাজা এনায়েতেপুরী নামে। বিশিষ্ট পীর ও সাধক খাজা মোহাম্মদ ইউনুস আলী জন্ম গ্রহণ করেন ১৮৮৬ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলার এনায়েতপুরে পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ),[1] তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত সুফী সাদেক। তার পিতার নাম শাহ সুফী মৌলানা আবদুল করিম। তিনি এলাকায় খাজা পীর বলেই বেশি পরিচিত ছিলেন। নিজ যোগ্যতায় তিনি পীর সাহেবের চব্বিশ লাখ মুরিদানের মধ্যে শীর্ঘস্থান অধিকার করে প্রাপ্তহন তরীকতের সর্বোচ্চ খিলাফত। এই তরিকা নক্সাবন্দ-মুজাদ্দেদী তরিকা নামে পরিচিত। খাজা এনায়েতপুরী ভোগবিলাসী জীবনযাপনের চরম বিরোধী ছিলেন। তিনি ইসলামের মর্মবাণী-তরিকত দর্শন প্রচারের পাশাপাশি সমাজসেবা মুলক কাজেও রেখেছিলেন অনন্য অবদান। খাজা এনায়েতপুরী কে ভক্তবৃন্দ সুলতানুল আউলিয়া এবং চিরস্থায়ী সংস্কারের জন্য আখেরী মুজাদ্দেদে বলে অভিহত করেন। তিনি ১৯৫২ সালে ইন্তেকাল করেন।
খাজা ইউনুস আলী | |
---|---|
![]() | |
ধর্ম | ইসলাম |
ব্যক্তিগত | |
জন্ম | ১৮৮৬ |
মৃত্যু | ১৯৫২ |
সমাধিস্থল | এনায়েতপুর দরবার শরীফ, সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ |
জ্যেষ্ঠ পোস্টিং | |
ভিত্তিক | এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফ |
খেতাব | সুলতানুল আউলিয়া, আখেরী মুজাদ্দেদ |
অফিসে কার্যকাল | আঠারো শতাব্দির শেষের দিকে এবং উনবিংশ শতাব্দির শুরর দিকে |
পূর্বসূরী | পীর আওলাদে রসুল খাজা ওয়াজেদ আলী (রঃ) |
উত্তরসূরী | আলহাজ্ব হযরত খাজা হাশেম উদ্দিন |
ধর্মীয় জীবন | |
ওয়েবসাইট | khwajaenayetpuri |
ব্যক্তিগত জীবন
খাজা ইউনুস আলীর জন্ম ১১ জ্বিলহজ্জ ১৩০৪, (১০ সেপ্টেম্বর ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দ), তিনি শিক্ষা এবং গবেষণা জন্য ১৭ থেকে ১৮ বছর বয়সে কলকাতার শেখ সৈয়দ ওয়াজেদ আলীকে অনুসরণ করেন।[2][3] উপমহাদেশের প্রখ্যাত ধর্মীয় নেতা,ওলিয়ে-কামেল সিরাজগঞ্জের হযরত শাহ্ সুফি খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রঃ) ইসলাম প্রচারে এক অবিসংবাদিত নেতা। তিনি তার কর্মময় জীবনের মাধ্যমে সুফীবাদকে সমগ্র বাংলা এবং ভারতের আসামে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। এজন্য তার দেখানো মানবতার দর্শন ও ইসলাম প্রচারে সাড়া দেশ তথা ভারতের আসামে ১২শ পীর আওলীয়া তাদের খানকা তথা দরবারে ভুমিকা রেখে যাচ্ছেন।
আধ্যাত্বিক সুফী সাধক হযরত খাজা ইউনুছ আলী (রঃ) মুলত ছিলেন ইয়েমেনের বংশধর। তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের ইসলাম প্রচারের জন্যই তাদের আগমন ঘঠে। খাজা এনায়েতপুরী (রঃ) এর বাবা শাহ আব্দুল করিম (রঃ) মাতা তামান্না বেগম (রঃ) এর ২ ছেলে এবং ১ মেয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।
অবিভক্ত ভারত-বাংলার অন্যতম ধর্ম প্রচারক তৎকালীন কোলকাতার মেহেদীবাগ দরবার শরীফের পীর আওলাদে রসুল খাজা ওয়াজেদ আলী (রঃ) এর সংস্পর্শে আসেন খাজা ইউনুছ আলী (রঃ)। তার আদর্শিক কর্মকান্ড এবং মানুষের প্রতি অগাধ ভালবাসা আর নির্লোভ গুণের কারনে খুব স্বল্প সময়ে খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রঃ) গুরু খাজা ওয়াজেদ আলী (রঃ) এর তরিকা লাভ করেন। ভোগ বিলাসী জীবনের বিরোধী এই মহামানব মাত্র ১৭ বছর বয়সে ইসলাম ও সুফীবাদের দর্শন ভারতের আসাম সহ সাড়া বাংলায় প্রচারে খেলাফত প্রাপ্ত হন। এরপর নিজ ভুমে ফিরে এসে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে খানকা স্থাপন করে শুরু করেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর শান্তির তরিকা প্রচার এবং আদর্শের সুফী বাদের বিস্তার কাজ। সেখানেই তিনি বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করেন। জনক হন ৮ কন্যা এবং ৫ পুত্র সন্তানের। পরবর্তীতে সমগ্র বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের আসামে সফর করে তিনি ইসলাম ও সুফীবাদ প্রচার কাজ তরান্বিত করেন। তিনি ইসলামের মর্মবাণী-তরিকত দর্শন প্রচারের পাশাপাশি সমাজসেবা মুলক কাজেও রেখেছিলেন অনন্য অবদান।
এরপর তার অনুসারীদের পরামর্শক্রমে এনায়েতপুর দরবারে ১৯১৫ সাল থেকে শুরু করেন ওরশ শরীফ। এতে সাড়া দেশ থেকেই তার ভক্ত মুরিদরা এখানে সমবেত হতে থাকেন। যা ধীরে-ধীরে অগনিত ভক্তদের আগমনে মহাসমাবেশে রুপ নেয়। এরই একপর্যায়ে তার সংস্পর্শে এসে আদর্শিক আলোর পথ প্রচারে ১২শ পীর আওলিয়া নিয়োজিত হন।
এর মধ্যে ফরিদপুরের সদরপুরের প্রখ্যাত আটরশি পীর, চন্দ্রপাড়া পীর, ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ পীর, টাঙ্গাইল প্যারাডাইস পাড়া, কুমিল্লার ইসলামাবাদ, মাতুয়াইল, জামালপুরের সাধুরপাড়া মোসলেম নগর, যশোরের ঘুনী দরবার শরীফ, ভারতের আসামের মেহেদীবাগ গণি খলিফার দরবার শরীফ অন্যতম। তারা একইভাবে খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রঃ) সুফী বাদের আদর্শ ও ইসলাম প্রচার করছেন। একজন পরিপূর্ণ মানবতাবাদী হিসেবে তিনি সারাটা জীবন অসহায় দুঃখী মানুষদের নিজের হাতে সহযোগীতা করে গেছেন। বাংলা ১৩৫৪ সনে নিজ দরবারে বিনামুল্যে চিকিৎসার জন্য “খাজা দাতব্য চিকিৎসালয়” নামে একটি সেবা প্রতিষ্ঠান তিনি গড়ে তোলেন। বিনা পয়সায় সেবা দিয়ে যাওয়া আধুনিক চিকিৎসার এই প্রতিষ্ঠানটি দেশ-বিদেশ থেকে আগত লাখো জাকের ও এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে যা বর্তমানে ৭০ বছর পার করছে।[4]
শিক্ষা
খাজা ইউনুস আলী শিক্ষার উপর দৃষ্টি ছিলো অনেক বেশী। তিনি মনে করতেন শিক্ষা হলো জীবনের ঐশ্বরিক, আলোকসজ্জা এবং তার শত শত, হাজার হাজার অনুগামীদের তিনি এই উপদেশই দিত।[5] খাজা ইউনুস আলির শিক্ষার প্রতি ছিল উন্নত একটি ত্রিপক্ষীয় শিক্ষণ পদ্ধতি "লেখা" "বক্তৃতা" এবং তার তরিকা দ্বারা প্রভাবিত করত। তিনি তার মুরিদ দের চার সুফী আদেশ দিতেন কাদেরিয়া তরিকা, চিশতিয়া তরিকা, নকশবন্দি তরিকা এবং মোজ্জাদ্দেদই।[6] বিশেষ করে তিনি প্রভাবিত করতেন নকশবন্দি তরিকা এবং মোজ্জাদ্দেদই উপর।[7] তিনি শরিয়তের আলো (The Light of Shariya) এবং (Ganje Asrar) নামে দুটি বই লিখেছেন।
মৃত্যু ও খেলাফত দান
মহান এই মুর্শিদ খাজা এনায়েতপুরী (রঃ) বাংলা ১৩৫৮ সনের ১৮ ফাল্গুন রোববার, ইংরেজী ১৯৫২ সালের ২ মার্চ ইন্তেকাল করলে তার প্রতিষ্ঠিত এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফের গদ্দিনশীন পীর হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন বড় ছেলে আলহাজ্ব হযরত খাজা হাশেম উদ্দিন। তার মৃত্যুর পর এ দায়িত্ব আরেক সন্তান হযরত খাজা মোজাম্মেল হকের উপর ন্যাস্ত করা হয়। পরে তিনি অসুস্থ্য হয়ে ইন্তেকাল করলে খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রঃ) এর আরেক ছেলে বর্তমান গদ্দিনশীন হুজুরে পাক হযরত খাজা কামাল উদ্দিন নুহু মিয়া দায়িত্ব গ্রহণ করে ইসলামের শান্তির মর্মবাণী প্রচারে বাবার মতই কাজ করছেন।
উত্তরাধিকার
খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়,এবং খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ[8] এর নামকরণ করা হয় খাজা ইউনুস আলির নাম অনুসারে। এই প্রতিষ্ঠান দুটি প্রতিষ্ঠিত করেন খাজা ইউনুস আলির জামাতা খাজা ডক্টর এম আমজাদ হোসেন। কথিত রয়েছে খাজা তার জীবদ্দশায় মেডিকেল কলেজ করা হচ্ছে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।[9]
তথ্যসূত্র
- Dastagir, Golam (২০০৬)। The Biographical Encyclopaedia of Islamic Philosophy। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 79–80।
- "Sufism Journal: Community: Sufism in Bangladesh"। sufismjournal.org।
- "Life and Work"। Khwaja Enayetpuri। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৮।
- "শাহ সুফি খাজা ইউনুছ আলী (রহ)"। দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- Dastagir, Golam (জুন ২০০২)। "Some Aspects of Khwaja Enayetpuri's Sūfism" (PDF)। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৮।
- "Khwaja Enayetpuri(r) and his Legacy"। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৮।
- Dastagir, Golam। "Islam & Multiculturalism in Bangladesh: A Reflection" (PDF)। International Institute of Advanced Islamic Studies। ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৮।
- "About Kyamc"। Khwaja Yunus Ali Medical College। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৮।
- "Our Vision, Our Mission"। Khwaja Yunus Ali Nursing College। ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৮।