রামরাজাতলা

রামরাজাতলা হল ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার হাওড়া শহরের প্রতিবেশী অঞ্চল। এটি কলকাতা মেট্রোপলিটান ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (কেএমডিএ) অধীনের একটি অংশ। এই অঞ্চলের নামটি ভগবান রামকে উৎসর্গ করে এই মন্দিরের উপস্থিতি থেকে আসে এবং প্রতি বছর মন্দিরের লোকেরা টানা তিন মাস পূজা করেন। এখানে ভগবান রামের পূজা করার ঐতিহ্য প্রায় তিন শতাব্দী ধরে চলে আসছে। [2]

রামরাজাতলা
হাওড়ার প্রতিবেশী অঞ্চল
রামরাজাতলা রেলওয়ে স্টেশন
ডাকনাম: রামতলা
রামরাজাতলা
রামরাজাতলা
Location in West Bengal, India
স্থানাঙ্ক: ২২°৩৫′১৮″ উত্তর ৮৮°১৭′৪৬″ পূর্ব
দেশ ভারত
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
জেলাহাওড়া
এলাকাকলকাতা মেট্রোপলিটন এলাকা
মেট্রো স্টেশনহাওড়া ময়দান(নির্মিয়মান) এবং হাওড়া(নির্মিয়মান)
সরকার
  ধরনপৌরসংস্থা
  শাসকহাওড়া পৌরসংস্থা
  এমএলএজটু লাহিড়ী
ভাষা
  অফিসিয়ালবাংলা, ইংলিশ, হিন্দি
সময় অঞ্চলIST (ইউটিসি+৫:৩০)
পিন৭১১১০৪[1]
টেলিফোন কোড+৯১ ৩৩
যানবাহন নিবন্ধনWB
লোকসভা কেন্দ্রহাওড়া
বিধানসভা কেন্দ্রশিবপুর
জলবায়ুসাধারণ (Köppen)
গ্রীষ্মকালীন গড় তাপমাত্রা৩৫ °সে (৯৫ °ফা)
শীতকালীন গড় তাপমাত্রা১৫ °সে (৫৯ °ফা)

ইতিহাস

জমিদার অযোধ্যারাম চৌধুরী এই অঞ্চলে সর্বপ্রথম রাম পূজা শুরু করেছিলেন। তাঁর মতে, তিনি ভগবান রামের পূজা করার জন্য ইশ্বরের কাছ থেকে নির্দেশ পেয়েছিলেন। এর পর তিনি ভগবান রামের বিশাল বারোয়ারি পুজো শুরু করেছিলেন। সময়ের সাথে সাথে সেই পুজোটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল এবং অঞ্চলটির নামকরণ করা হয়েছিল রামরাজাতলা। কিন্তু সেই সময়কালে সরস্বতী পূজা এই অঞ্চলে খুব বিখ্যাত ছিল এবং পূর্ববর্তী ৩০০ বছর ধরে গ্রামবাসীরা একই পূজার উপভোগ করত। তাই সরস্বতী পূজার অনুরাগী কিছু গ্রামবাসী রাম পূজার বিরোধিতা করেছিলেন। দুটি দল বহু আলোচনার পরে এই সিদ্ধান্তে পৌঁচ্ছালেন যে রাম পূজা হবে এবং বিদ্যার দেবী সরস্বতী দেবীকে ভগবান রাম ও সীতার শীর্ষে স্থাপন করতে হবে। সেই দিন থেকেই প্রথা অনুসারে ষষ্ঠীতলার বাঁশের ঝাড় থেকে বাঁশ কাটা শুরু করেন এবং সরস্বতী পুজোর দিন চৌধুরী পাড়া শিব মন্দিরে সেই বাঁশের প্রথম পুজো শুরু হয়। প্রথম প্রথম পুজোর মেলা তিনদিন ধরে অনুষ্ঠিত হত। এরপরে এটি দুই সপ্তাহ এবং পরে এক মাস অবধি চলতে থাকে। এখন রাম পূজা চৈত্র-বৈশাখ মাসের রামনবমীতে শুরু হয় এবং শ্রাবণ মাসের শেষ রবিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এটি বাঙালির দীর্ঘতম সময় ধরে চলা মেলা।[2]

রাম সীতার মূর্তি, রামরাজাতলা

এলাকা

হাওড়া শহরের অন্যতম প্রাচীনতম অংশ রামরাজাতলা। হাওড়া শহরের মধ্যে এই অঞ্চলটি জনবসতিপূর্ণ এলাকা। এই অঞ্চলের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত রামরাজতলা বাজার সবচেয়ে জনবহুল জায়গা। সড়ক উন্নয়ন এবং নিকাশী ব্যবস্থার মতো কার্যক্ষেত্রে এই অঞ্চলটির উন্নয়নের প্রয়োজন কারণ হাওড়ার এই অংশে জলমগ্ন হওয়া একটি বড় সমস্যা। বর্ষায় সামান্য বৃষ্টিপাত হলে পরে জল দাঁড়িয়ে যায়। যা এলাকার মানুষের জন্য অনেক সমস্যা তৈরি করে।

পরিবহন

রামরাজাতলা রেলওয়ে স্টেশনটি ছোট তবে খুব গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে স্টেশন। আশেপাশের গ্রামগঞ্জ এবং শহর থেকে প্রচুর লোক কাজের সূত্রে এই স্টেশনের মাধ্যমে যাতায়াত করেন।[3]

কোনা এক্সপ্রেসওয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ রোড যা দ্বিতীয় হুগলি সেতু কলকাতার সাথে মুম্বাই রোড (এনএইচ৬) সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। কাছাকাছি চলে গেছে। কলকাতার আশেপাশের বিভিন্ন শহরতলি এলাকায় যেমন ডোমজুড়, বাগনান, আমতা, বালি এবং দীঘার সাথে পরিবহন ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ স্থাপন করেছে।

রামরাজাতলা থেকে ৫২ নং রুটে বাস চলাচল করে প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর বাস রামরাজাতলা থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত যায় ভায়া হাওড়া স্টেশন হয়ে। কিছু মিনিবাস রামরাজাতলা থেকে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ পর্যন্ত যেত তবে এখন বন্ধ রয়েছে।

আকর্ষনীয় স্থান

চার মাসব্যাপী পুজোর সময় মেলা বসে। শ্রাবণের মাসের শেষ রবিবার বিশেষত বিসর্জন চলাকালীন সর্বশেষ যাত্রা খুবই জনপ্রিয়।

  • শঙ্কর মঠ[4]

শঙ্করাচার্য মন্দিরে দরিদ্র এবং গৃহহীন বিদ্যার্থীদের জন্য গুরুকুল আখ্যায়িত একটি স্কুল অধ্যুষিত আশ্রমে তৈরি করেন। মঠের সামনে বিশাল একটি খেলার মাঠ রয়েছে।

  • লেক ল্যান্ড কান্ট্রি ক্লাব

এটি কোনা এক্সপ্রেস রোডে অবস্থিত, টলিউড চলচ্চিত্রের শ্যুটিংয়ের জায়গা, এখানে নানা ধরনের জাতীয়স্তরে মেধা অনুসন্ধান প্রতিযোগিতার জন্য অডিশন অনুষ্ঠিত হয়। এটি আগে রশিদ পার্ক নামে পরিচিত ছিল।

এখানে প্রতিবছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত পরিযায়ী সাইবেরিয়ান পাখি যেমন পাতি সরালি আকৃষ্ট করে।

  • ডুমুরজলা স্টেডিয়াম[5]

ভোলানাথ চক্রবর্তী রোডের কাছে একটি অভ্যন্তরীণ স্টেডিয়াম রয়েছে এই স্টেডিয়াম বেশ কয়েকটি বিশিষ্ট মেধা অনুসন্ধান প্রতিযোগিতা এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হোস্ট করা হয়েছিল।

  • বানী নিকেতন পাবলিক লাইব্রেরি[6]

রামরাজাতলায় বিশাল বইয়ের একটি বড় পাবলিক লাইব্রেরী রয়েছে, অনেকগুলি প্রতিযোগিতাও পরিচালনা করেছেন।

নিকটবর্তী এলাকা

রামরাজাতলার নিকটবর্তী কিছু জনপ্রিয় এলাকা সেগুলি হল:

  • চৌধুরীপাড়া, রামরাজাতলার একটি ছোট এলাকা, অতীতে জমিদার অযোধ্যারাম চৌধুরী এখানে বসবাস করতেন।
  • ভট্টাচার্য্যপাড়া, রামরাজাতলার পাশে ছোট এলাকা, অতীতে ভট্টাচার্য্য পরিবার এখানে বসবাস করত।
  • কামারডাঙ্গা, রামরাজাতলার প্রতিবেশী এলাকা।
  • ইছাপুর, রামরাজাতলার প্রতিবেশী এলাকা।
  • নন্দীপাড়া, রামরাজাতলার একটি ছোট এলাকা।
  • ষষ্ঠীতলা, রামরাজাতলার একটি ছোট এলাকা।
  • দশেরপল্লী, রামরাজাতলার একটি ছোট এলাকা।
  • জগাছা, রামরাজাতলার প্রতিবেশী এলাকা।
  • হাটপুকুর, রামরাজাতলার একটি ছোট এলাকা।
  • সাতাশী, রামরাজাতলার প্রতিবেশী এলাকা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

  • হাওড়া হোমসের বিখ্যাত ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট রয়েছে।
  • হাওড়ার সাঁতরাগাছি কেদারনাথ ইনস্টিটিউট বৃহত্তম হাই স্কুল। ১৯২৫ সালে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এই বিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। সাঁতরাগাছি কেদারনাথ ইনস্টিটিউশন(বালিকা বিভাগ) এই স্কুলেরই আর একটি শাখা স্কুল।[7]
  • সরকারী বিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে সাঁতরাগাছি ভানুমতী বালিকা বিদ্যালয়, ইছাপুর হাই স্কুল, সাঁতরাগাছি রেলওয়ে কলোনি হাই স্কুল এবং বেসরকারী স্কুলগুলির মধ্যে রয়েছে অগাস্টিনেস পাবলিক স্কুল,[8] মারিয়াস ডে স্কুল[9] এবং বিক্রমশিলা একাডেমি।
  • ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ডা. কানাইলাল ভট্টাচার্য কলেজ এখানে রয়েছে।

তথ্যসূত্র

টেমপ্লেট:হাওড়া জেলা

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.