রাজমহলের যুদ্ধ

রাজমহলের যুদ্ধ (১৩ জুলাই ১৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দ; ১৫ রবিউসসানি ৯৮৪ হিজরি) মুঘল সাম্রাজ্যবাংলা সালতানাতের মধ্যে সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধের পর বাংলা সালতানাতের পতন হয়।

রাজমহলের যুদ্ধ
মূল যুদ্ধ: মুঘল বিজয়
তারিখ১২ জুলাই ১৫৭৬[1]
অবস্থানরাজমহল
ফলাফল মুঘলদের চূড়ান্ত বিজয়
কররানী রাজবংশের পতন
যুধ্যমান পক্ষ
মুঘল সাম্রাজ্য বাংলা সালতানাত
সেনাধিপতি
আকবর
মুজাফফর খান তুরবাতি
খান জাহান[1]
রাজা টোডরমল[2]
দাউদ খান কররানী
জুনায়েদ 
কালাপাহাড় [3]
কুতলু খান
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
অসংখ্য

পটভূমি

হোসেন শাহি রাজবংশের সুলতান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ ১৫৩৮ সালে মারা যান। এর ফলে হোসেন শাহী রাজবংশের সমাপ্তি ঘটে। সমসাময়িক সময়ে মুঘল সম্রাট হুমায়ুন গৌড় জয় করেন। কিন্তু সুরি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শের শাহ সুরি তাকে চৌসার যুদ্ধে পরাজিত করে বাংলার ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন।

পরবর্তীতে কররানী রাজবংশের উত্থান হয়। কররানীদের সাথে মুঘলদের সংঘর্ষ সৃষ্টি। শেষ কররানী শাসক সুলতান দাউদ খান কররানী মুঘল সেনাপতি মুনিম খানের কাছে তুকারয়ের যুদ্ধে পরাজিত হন। দুই পক্ষের মধ্যে কটক সন্ধি সম্পাদিত হয়। এর ফলে দাউদ খান বাংলা ও বিহারের অধিকার হারান এবং তার হাতে শুধু উড়িষ্যার শাসনভার থাকে। তবে এই চুক্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।[4] বারো ভূইয়াদের প্রধান ঈসা খান বাংলা থেকে মুঘল নৌবাহিনীকে বিতাড়িত করেছিলেন। মুঘল সেনাপতি মুনিম খান মারা গেলে দাউদ খান হৃত এলাকা জয়ের জন্য অভিযান শুরু করেন। তিনি উত্তর ও পশ্চিম বাংলা জয় করতে সক্ষম হন।

যুদ্ধ

দাউদ খানের কাছ থেকে বাংলা জয়ের জন্য বাদশাহ আকবর তার সেনাপতি খান-ই-জাহান হোসেন কুলি বেগকে প্রেরণ করেন। দাউদ খানের সেনাপতি ছিলেন কালাপাহাড়, জুনায়েদ ও কুতলু খান। তার পক্ষে প্রায় তিন হাজার সেনা তিনি তেলিয়াগড়িতে জমায়েত করেন।

এখানে মুঘলদের সাথে আফগানদের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে মুঘলরা তেলিয়াগড়ি দখল করে নেয়। মুঘলরা এরপর রাজমহলের দিকে এগিয়ে যায়। মুঘল সেনাপতি হোসেন কুলি বেগ কর্তৃক প্রায় চারমাস রাজমহল অবরুদ্ধ ছিল।[4] মুঘলদের জন্য অতিরিক্ত সাহায্য হিসেবে বিহারের শাসক মুজাফফর খান পাঁচ হাজার ঘোড়সওয়ার এবং নৌপথে রসদ নিয়ে এগিয়ে আসেন। শক্তিমত্তার দিক থেকে মুঘলরা এগিয়ে থাকলেও তারা জলবায়ুগত সমস্যায় পতিত হয়।[4]

এরপর রাজমহলে মুঘলদের এই সম্মিলিত বাহিনীর সাথে কররানীদের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। দাউদ খান, জুনায়েদ, কালাপাহাড় ও কুতলু খান যথাক্রমে সেনাবাহিনীর মধ্য, বাম, ডান ও অগ্রভাগের নেতৃত্ব দেন।[4]

ফলাফল

এই যুদ্ধে কররানীরা পরাজিত হয়। দাউদ খান ধরা পড়েন এবং তাকে হত্যা করা হয়। কররানী রাজবংশের পতনের ফলে বাংলা সালতানাতের সমাপ্তি ঘটে এবং বাংলা মুঘল সাম্রাজ্যের একটি সুবা বা প্রদেশে পরিণত হয়। তবে ঈসা খানের নেতৃত্বে বারো ভূইয়ারা মুঘলদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখেন। ফলে বাংলায় পুরোপুরিভাবে মুঘলদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

তথ্যসূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.