মেরুজ্যোতি

মেরুজ্যোতি বা আরোরা বা আরোরা অস্ট্রালিস (আরোরা উষা) হলো আকাশে একধরনের প্রাকৃতিক আলোর প্রদর্শনী। প্রধানত উঁচু অক্ষাংশের এলাকাগুলোতে আরোরা'র দেখা মিলে। আরোরা দেখতে অত্যন্ত সুন্দর। আরোরা নিয়ে প্রাচীনকালে অনেক উপকথা চালু ছিল। যেমন নর্জ উপকথা অনুসারে আরোরা হলো ঈশ্বরের সৃষ্টি সেতু। আবার কিছু কুসংস্কারচ্ছন্ন মানুষ আছে যারা মনে করেন তাদের পূর্বপুরুষেরা আকাশে নাচানাচি করে তাই আকাশের রঙ বদলে যায়।

পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে মেরুজ্যোতির চিত্র।

আরোরা সৃষ্টির কারণ

সূর্য আমাদের থেকে প্রায় ৯৩ মিলিয়ন মাইল বা ১৪৯৫৯৭৮৭০৭০০ মিটার(প্রায় ১৫০ মিলিয়ন কি.মি.) দূরে অবস্থিত। কিন্তু এর প্রভাব বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। সৌরঝড়ে চার্জিত কণা (প্লাজমা) মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। পৃথিবীতে এসব কণা পৌছালে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র এবং বায়ুমন্ডল এর সাথে প্রতিক্রিয়া করে। যখন সূর্যের চার্জিত কণাগুলো আমাদের পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের অণু-পরমাণুকে আঘাত করে তখন সেই চার্জিত কণাগুলো বায়ুমন্ডলের অণু-পরমাণুগুলোকে আন্দোলিত করে এবং উজ্জ্বল করে তোলে। পরমাণু আন্দোলিত হওয়ার অর্থ হল এই যে, যেহেতু পরমাণু নিউক্লিয়াস এবং নিউক্লিয়াসকে আবর্তনকৃত ইলেক্ট্রন দ্বারা গঠিত তাই যখন সূর্য থেকে আগত চার্জিত কণা বায়ুমন্ডলের পরমাণুকে আঘাত করে তখন ইলেক্ট্রনগুলো উচ্চ শক্তিস্তরে (নিউক্লিয়াস থেকে আপেক্ষিকভাবে অনেকদূরে) ঘুরতে শুরু করে। তারপর যখন আবার কোনো ইলেক্ট্রন নিম্ন শক্তিস্তরে চলে আসে তখন সেটি ফোটন বা আলোতে পরিণত হয়।

আরোরাতে যা ঘটে তেমনটি ঘটে নিয়নের বাতিতেও। নিয়ন টিউবের মধ্যে নিয়ন গ্যাসের পরমাণুগুলোকে আন্দোলিত করবার জন্য ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ। তাই নিয়নের বাতিগুলো এরকম উচ্চ মানের রঙ্গিন আলো দেয়। আরোরাও ঠিক এভাবে কাজ করে-তবে এটি আরো বড় মাত্রায় হয়। আরোরাগুলো মাঝে মাঝে আলোর পর্দার মতো দেখায়। তবে এরা গোলাকার অথবা সর্পিল বা বাঁকানোও হতে পারে। বেশিরভাগ আরোরাতে সবুজ রঙ এবং গোলাপী রঙ দেখা যায়। তবে অনেকসময় লাল রঙ বা বেগুনী রঙের হতে পারে।

আরোরা সাধারণত দেখা যায় দক্ষিণ ও উত্তরের দেশগুলোতে। কানাডা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, গ্রীনল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে আরোরার দেখা মিলে। মানব ইতিহাস জুড়ে আরোরার রঙ গুলো রহস্যময়। বিভিন্ন মিথোলোজিতে বিভিন্ন কুসংস্কার উল্লেখ করা হয়েছে এই নিয়ে। তবে বিজ্ঞান বলেঃ আমাদের বায়ুমন্ডলের গ্যাসগুলোই হলো আরোরার বিভিন্ন রঙের কারণ। উদাহরণঃ আরোরার সবুজ রঙের কারণ হলো অক্সিজেন আবার আরোরার লাল এবং নীল রঙের জন্য দায়ী হলো নাইট্রোজেন গ্যাস(2008) ।

টীকা

    তথ্যসূত্র

      বহিঃসংযোগ

      This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.