মলুটী

মলুটী বা মলুটি, একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মন্দিরময় গ্রাম যেটি ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকা জেলায় শিকারীপাড়া থানায় অবস্থিত। মলুটীর নিকটবর্তী শহর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার রামপুরহাট। বাজ বসন্ত সাম্রাজ্যের রাজত্বকালে এখানে বহু মন্দির তৈরী হয়েছিল।[1] জেলা সদর শহর দুমকা হতে মলুটীর দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার এবং নিকটবর্তী শহর পশ্চিমবঙ্গের রামপুরহাট হতে ১৬ কিলোমিটার।

মলুটী
গ্রাম
মলুটী গ্রামের মন্দির
দেশ ভারত
অঞ্চলপূর্ব ভারত
রাজ্যঝাড়খণ্ড
জেলাদুমকা
মহকুমাদুমকা সদর মহকুমা
সময় অঞ্চল+৫:৩০

ইতিহাস

পঞ্চদশ শতকের নানকর রাজের (কর-মুক্ত সাম্রাজ্য) রাজধানী হিসেবে শিরোনামে আসে মলুটী গ্রাম। গৌড় সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ এই গ্রামটি উপহার দেন গরীব ব্রাহ্মন সন্তান বসন্ত রায়কে। বসন্ত রায় সুলতালের পোষা বাজপাখিটি ধরে ফেরত দেওয়ার জন্যে পুরষ্কার স্বরূপ এই উপহার প্রদান করেন সম্রাট। তার নাম দেওয়া হয় বাজ বসন্ত। কাশী সুমেরু মঠের দন্ডি সন্যাসী বাজ বসন্তকে রাজত্ব প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন। অপর একটি মতে বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের অঞ্চল মল্লহাটি হিসেবে মলুটী নাম হয়েছে। বাঁকুড়া, বর্ধমান, মেদিনীপুর, উত্তরে পাকুড় এবং ছোট নাগপুর মালভূমির কিছু অংশ নিয়ে মল্লভূম হিসেবে পরিচিত ছিল মল্ল রাজ সাম্রাজ্য।

এই গ্রামে একই জায়গায় এতগুলি মন্দির তৈরি হওয়ার ইতিহাসটি গল্পাকারে প্রচলিত। বাজ বসন্ত রাজারা প্রাসাদ তৈরীর বদলে মন্দির নির্মান করতেন। রাজপরিবার সময়ের সাথে সাথে নানা তরফে ভেঙে যায়, প্রতিটি তরফ মন্দির তৈরী করতে থাকেন একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে। এভাবেই মলুটী গ্রাম মন্দিরে ভরে যায়। আরো অতীতে শুঙ্গ বংশের (১৮৫ খৃ:পূর্ব - ৭৫ খৃ: পূর্ব) সময় মলুটী সুখ্যাত ছিল গুপ্ত কাশী নামে। বজ্রায়নী বৌদ্ধ, তান্ত্রিক সাধকরা এখানে আসতেন। তারই সূত্রে মলুটী গ্রামের মৌলিক্ষ্যা মাতার মন্দিরটি সবচেয়ে পুরোনো ঐতিহাসিক নিদর্শন। পাটলিপুত্র রাজা অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন মলুটীতে। এও বলা হয় আদি শঙ্করাচার্য কাশী বা বারাণসী যাওয়ার পথে এখানে থেমেছিলেন এবং বৌদ্ধ ধর্ম বিরোধী হিন্দু জাগরণ আন্দোলনের সূচনা তিনি এখান থেকেই শুরু করেন। ১৮৫৭ সালে বাঙালি তান্ত্রিক সাধক বামদেব বা বামাখ্যাপা মলুটীতে আসেন। তিনি প্রায় আঠেরো মাস এই গ্রামের মৌলিক্ষ্যা মন্দিরে অবস্থান করেন। তিনি তারাপীঠে যাওয়ার আগে প্রথম সিদ্ধিলাভ করেন এখানেই।

বামাখ্যাপার মন্দির, মলুটী

প্রাগৈতিহাসিক যুগ

কিছু প্রাগৈতিহাসিক নিদর্শন মলুটীর নিকটবর্তী চিলা নদীর পাড় থেকে পাওয়া যায়। যদিও খননকার্য এখোনো করা হয়ে ওঠেনি। চিলা নদীটি দুমকা জেলার মালভূমি থেকে বেরিয়ে ঝাড়খণ্ড ও বাংলার বীরভূম জেলার সীমানা নির্দেশক হিসেবে বাহিত হয়ে পরে দ্বারকা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এই নদীর তীরে বিভিন্ন এলাকায় প্রাগৈতিহাসিক ধারালো প্রস্তর, কুঠার ইত্যাদি পাওয়া গেছে যা অনুমান প্রাচীন প্রস্তর যুগ হতে মধ্য প্রস্তর যুগের সুচনার সময়কালীন। নিওলিথিক বা ক্যালিওলিথিক উপকরনের কোনো প্রমাণ এখোনো মেলেনি। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রফেসর সুব্রত চক্রবর্তীর মতানুযায়ী এই নিদর্শন গুলি প্যালিওলিথিক যুগের।

মন্দির

মলুটীর মন্দির

মলুটী গ্রামে বর্তমানে ৭২ টি মন্দির আছে। অতীতে নানকর রাজারা এখানে ১০৮ টি মন্দির নির্মান করে ছিল বলা হয়, কিন্তু তাদের পরবর্তী প্রজন্ম এগুলির রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা করে, ফলত ৩৬ টি মন্দির ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। মন্দিরগুলিতে নির্দিষ্ট শিল্পরীতির বদলে দ্রাবিড়, নাগারা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রজাতির মিশ্র শিল্পকর্মের ছাপ পাওয়া যায়। মূলত এগুলি শিব, দূর্গা, বিষ্ণু ও কালী মন্দির। মন্দিরগাত্রে পোড়ামাটির (টেরাকোটা) কাজে হিন্দু পুরাণ রামায়ন, মহাভারতের কাহিনী চিত্রায়িত আছে। এখানকার বাৎসরিক কালীপুজা অত্যন্ত বিখ্যাত। একশোর অধিক ছাগ বলি দেওয়ার রীতি বহুকাল থেকে প্রচলিত মলুটীতে।[2][3]

তথ্যসূত্র

  1. "মলুটী"maluti.org। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৭
  2. "দুমকা-মলুটি"। বিকাশপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৭
  3. আর্যভট্ট খান (২৫ মে ২০১৫)। "গ্রামের উঠোনে জনতা-দরবার রঘুবরের"। আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৭
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.