মহিষাসুরমর্দিনী (বেতার অনুষ্ঠান)

মহিষাসুরমর্দ্দিনী (অর্থাৎ মহিষাসুরকে দমনকারী) হল ১৯৩১ সাল থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে আকাশবাণী বা অল ইন্ডিয়া রেডিওতে সম্প্রচারিত একটি বাংলা প্রভাতী বেতার অনুষ্ঠান। দেড় ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে রয়েছে শ্রীশ্রীচণ্ডী বা দুর্গা সপ্তশতী থেকে গৃহীত দেবী চণ্ডীর স্তোত্র বা চণ্ডীপাঠ, বাংলা ভক্তিগীতি, ধ্রুপদী সংগীত এবং পৌরাণিক কাহিনির নাট্যরূপ। অনুষ্ঠানটির একটি হিন্দি সংস্করণও তৈরি করা হয়, এবং বাংলা অনুষ্ঠান সম্প্রচার হওয়ার একই সময়ে সারা ভারতের শ্রোতাদের জন্য সম্প্রচার করা হয়।এটি প্রথম প্রচারিত হয় মহাসষ্ঠীতে,কিন্তু মহালয়ার ভোরে তর্পণ করা হয় বলে,ওইদিন সকলকে ভোরবেলা জাগানোর উদ্দেশ্যে প্রতি বছর মহালয়ার ভোরে এই অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়। প্রথমদিকে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হত, কিন্তু ১৯৬৬ সাল থেকে রেকর্ড করা পূর্বের অনুষ্ঠানই শোনানো হয়। এই অনুষ্ঠানটি এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল যে, প্রায় ৮০ বছর পর আজও এর জনপ্রিয়তা তথা মহিমায় বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি।

দেবীপক্ষের সূচনায় মহালয়া অমাবস্যা ও দুর্গাপুজোর সাথে এই অনুষ্ঠানের নাড়ির যোগ। এই মহালয়ার পুণ্যলগ্নে শিশিরভেজা মৃদুশীতল ভোরে প্রায় প্রত্যেক বাঙালি জেগে ওঠেন এবং "মহিষাসুরমর্দ্দিনী" সম্প্রচার শুনবার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে থাকেন। ইদানীং আকাশবাণীর স্বত্ব গ্রহণ করে এর রেকর্ডিং HMV-RPG-এর অডিও ক্যাসেট এবং কম্প্যাক্ট ডিস্ক রূপেও বিক্রি হচ্ছে। এর সিডি সংস্করণে (২০০২এ) ১৯টি ট্র্যাক আছে।

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র

মহিষাসুরমর্দ্দিনীর আড়ালে তার মন্ত্রমুগ্ধকর কণ্ঠের জন্য এবং বাঙালির মহালয়ার প্রভাতকে মোহময় করে তোলার জন্য বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র চিরস্মরণীয় থাকবেন। এই কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী চমৎকারভাবে সংস্কৃত শ্লোক এবং দেবী দুর্গার মর্ত্যে অবতরণের কাহিনি ফুটিয়ে তুলেছেন। মহালয়া উপলক্ষ্যে দেবীপক্ষের সূচনায় দেব-দেবীরা শারদোৎসবের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করেন। ১৯৩১ সালে কলকাতার আকাশবাণী বেতারে প্রথম মহালয়া সম্প্রচারিত হয়। প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় এবং রাইচাঁদ বড়াল এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন।

বীরেন্দ্রকৃষ্ণের জনপ্রিয়তা এতটাই তুঙ্গে উঠেছিল যে, ১৯৭৬ সালে বাংলার সর্বকালের সেরা অভিনেতা উত্তম কুমারকে দিয়ে সেই শ্লোকপাঠ করালে, আপামর শ্রোতা মেনে নেয়নি। বীরেন ভদ্র আবার স্বস্থানে সসম্মানে ফিরে আসেন।

বীরেন্দ্রের মৃত্যু হয়েছে অনেককাল হল, কিন্তু তার কণ্ঠ ছাড়া মহালয়ার সকাল এখনও ভাবা যায় না। আশ্বিনের ভোরের দুটো ঘণ্টা তার উদাত্ত কণ্ঠের উচ্চারণে নিমজ্জিত হয়, তার শ্লোকপাঠে মন্ত্রমুগ্ধ বাঙালি দেবীর প্রতি সশ্রদ্ধ প্রণাম জানায়।

সংগীত

পৌরাণিক পটভূমিতে আধারিত এবং বৈদিক মন্ত্র সমন্বিত হওয়া সত্ত্বেও এই অনুষ্ঠানটি একটি অতুল্য অদ্বিতীয় সৃষ্টি। এর রচনা করেছেন বাণীকুমার ভট্টাচার্য , বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র করেছেন শ্লোকপাঠ এবং দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় (জাগো দুর্গা দশপ্রহরণধারিণী), মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় (তব অচিন্ত্য), সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, উৎপলা সেন (শান্তি দিলে ভরি ), শ্যামল মিত্র (শুভ্র শঙ্খ-রবে)এবং সুপ্রীতি ঘোষ (বাজলো তোমার আলোর বেণু) তাদের মধুর স্বরে গান গেয়েছেন। সংগীত-পরিচালনা করেছেন পঙ্কজকুমার মল্লিক। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার সাথে সাথে শঙ্খধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখর হয়ে ওঠে।

জাগো, তুমি জাগো, জাগো দুর্গা,

জাগো দশপ্রহরণধারিণী,

অভয়াশক্তি বলপ্রদায়িনী তুমি জাগো।

প্রণমি বরদা অজরা অতুলা

বহুবলধারিণী রিপুদলবারিণী জাগো মা।

শরণময়ী চন্ডিকা শংকরী জাগো, জাগো মা,

জাগো অসুরবিনাশিনী তুমি জাগো।।

মহিষাসুরমর্দিনী গীতি-আলেখ্য সম্পর্কে তথ্য:

রচনা ও প্রবর্তনা – বাণীকুমার। সঙ্গীত-সর্জন – পঙ্কজকুমার মল্লিক। গ্রন্থনা ও স্তোত্রপাঠ – বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। “আজ দেবীপক্ষের প্রাক-প্রত্যুষে জ্যোতির্ম্ময়ী জগন্মাতা মহাশক্তির শুভ আগমন-বার্ত্তা আকাশ-বাতাসে বিঘোষিত। মহাদেবীর পুণ্য স্তবনমন্ত্রে মানবলোকে জাগরিত হোক ভূমানন্দের অপূর্ব্ব প্রেরণা। আজ শারদ গগনে-গগনে দেবী ঊষা ঘোষণা করছেন মহাশক্তির শুভ আবির্ভাব-ক্ষণ।” এরপর তিনবার শঙ্খধ্বনির পর শুরু হয় অনুষ্ঠান। সুপ্রীতি ঘোষের পরিশীলিত কন্ঠে গাওয়া সেই গান – “বাজল তোমার আলোর বেণু”। ১৩৩৯ বঙ্গাব্দের আশ্বিনে প্রথম প্রচারিত হয় অনুষ্ঠানটি, কিন্তু তখন এর নাম ছিল ‘শারদ বন্দনা’। ১৯৩৪-এর ৮ ই অক্টোবর ( ১৩৪১ বঙ্গাব্দ ) মহালয়ার সকাল ছয়টা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত প্রচারিত হয়েছিল অনুষ্ঠানটি।

শিল্পী

প্রধান শিল্পী

  • বাণী কুমার ― রচনা ও প্রবর্তনা
  • পঙ্কজ কুমার মল্লিক ― সংগীত-পরিচালনা
  • বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ― গ্রন্থনা ও শ্লোকপাঠ

গান ও গায়ক

  • যা চণ্ডী ― সমবেত কণ্ঠ
  • সিংহস্থা শশিশেখরা ― সমবেত কণ্ঠ
  • বাজলো তোমার আলোর বেণু ― সুপ্রীতি ঘোষ
  • জাগো দুর্গা দশপ্রহরণধারিণী ― দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়
  • ওগো আমার আগমনী-আলো ― শিপ্রা বসু
  • তব অচিন্ত্য রূপ-চরিত-মহিমা ― মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়
  • অহং রুদ্রেভির্বসুভিশ্চরা ― সমবেত কণ্ঠ
  • অখিল-বিমানে তব জয়-গানে ― কৃষ্ণা দাশগুপ্ত
  • জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ― সমবেত কণ্ঠ
  • শুভ্র শঙ্খ-রবে ― শ্যামল মিত্র, অসীমা ভট্টাচার্য, আরতি মুখোপাধ্যায় ও অন্যান্য
  • জটাজুটসমাযুক্তামর্দ্ধেন্দুকৃতশেখরাম ― সমবেত কণ্ঠ
  • নমো চণ্ডী, নমো চণ্ডী ― বিমলভূষণ
  • মাগো তব বিনে সঙ্গীত প্রেম-ললিত ― সুমিত্রা সেন
  • বিমানে বিমানে আলোকের গানে ― গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
  • জয় জয় জপ্যজয়ে ― সমবেত কণ্ঠ
  • হে চিন্ময়ী ― তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
  • অমল-কিরণে ত্রিভুবন-মনোহারিণী ― প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়
  • জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ― পঙ্কজকুমার মল্লিক ও অন্যান্য
  • শান্তি দিলে ভরি ― উৎপলা সেন

পৌরাণিক কাহিনী

অশুভ শক্তির বিনাশ আর ধর্ম রক্ষায় যুগে যুগে মর্ত্যলোকে দেবতাদের আবির্ভাব হয়েছে। যার ধারাবাহিকতাতেই অসুর কূলের হাত থেকে দেবগণকে রক্ষায় দেবী দুর্গার আগমন ঘটেছিল। পৃথিবীতে যখনই ব্রহ্মার বরপ্রাপ্তের মতো শক্তিশালী মহিষাসুরেরা ফিরে আসে বারবার, ধর্মের গ্লানি হয় এবং পাপ বৃদ্ধি পায়, তখন তাদের ত্রাস-সংহারে দেবী দুর্গা ফিরে আসেন বারবার। আর দেবীর এ শুভাগমন ঘটে শুভ মহালয়ায়। মহালয়ার শুভক্ষণে যাবতীয় আঁধার গ্লানি মুছে যায় অসুরনাশিনী দুর্গার তেজচ্ছটায়।

মহিষাসুর ভগবান ব্রহ্মের একনিষ্ঠ উপাসক ছিলেন। বহু বছর তপস্যার পর ব্রহ্মা তাকে একটি বর প্রদান করেছিলেন। মহিষাসুর নিজের শক্তি নিয়ে গর্বিত ছিলেন। তিনি ভগবান ব্রহ্মার কাছ থেকে অমরত্বের বর চেয়েছিলেন, এবং তার ইচ্ছা ছিল পৃথিবীর কোনও মানুষ বা প্রাণী তাকে যেন হত্যা করতে না পারে। ব্রহ্মা তাকে এই বর প্রদান করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে তিনি একজন মহিলার কাছে পরাস্ত এবং নিহত হবেন।

মহিষাসুর তার শক্তির ওপর এতটাই আস্থা করতেন যে তিনি বিশ্বাস করেছিলেন, এই পৃথিবীতে কোনও মহিলাই তাকে হত্যা করতে পারবে না। মহিষাসুর তার সেনাবাহিনী নিয়ে ত্রিলোক (স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল) আক্রমণ করেন এবং ইন্দ্রলোকও (ভগবান ইন্দ্রের রাজ্য) জয় করার চেষ্টা করেন। তার অত্যাচারে সারা জগৎ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল।

দেবতারা মহিষাসুরের সাথে যুদ্ধ করলেও ভগবান ব্রহ্মার আশির্বাদের ফলে কেউ তাকে পরাস্ত করতে পারেনি। এরপর, দেবতারা ভগবান বিষ্ণুর কাছে সাহায্য প্রার্থী হন। মহিষাসুরকে বধ করার জন্য সমস্ত দেবতা ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিব তাদের সমস্ত শক্তি একত্রিত হয়ে সৃষ্টি করেন দেবী দুর্গার।

চণ্ডীপাঠ

চণ্ডীপাঠে দেবী দুর্গাকে সনাতনী শক্তিরূপা গুণময়ী হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। তিনিই জ্যোতির্ময়ী নারায়ণী, ব্রহ্মাণী, মাহেশ্বরী, কৌমারী, ঐন্দ্রী, শিবদূতিনী ও নৃমুণ্ডমালিনী চামুণ্ডারূপে প্রকাশমতী। দেবী চণ্ডিকা চিন্ময়ী। তার আদি নেই, তার প্রাকৃত মূর্তি নেই। বিশ্বের অনন্ত প্রকাশ তার মূর্তি। নিষ্কাসিত অসুরপীড়িত দেবতা রক্ষণে তার আবির্ভাব হয়।

দেবীর শ্বাশ্বত অভয় বাণী- ইচ্ছং যদা যদা বাধা দানবোত্থা ভবিষ্যতি, তদা তদা অবতীর্যাহং করিষ্যামি অরি সংক্ষয়ম। কোথা তুমি শঙ্খচক্র গদাপদ্মধারী ত্রিনয়নী দুর্গা। তুমি ওঠো, তুমি জাগো। জাগো! জাগো মা। তুমি না জাগলে সন্তানকূল ঘুমিয়ে পড়বে। সন্তানকে অভয় দাও মা আদ্যাশক্তি মহামায়া।

পূর্বকল্প অবসানের পর, প্রলয়কালে, সমস্ত জগৎ যখন কারণসলিলে পরিণত হল, ভগবান বিষ্ণু অখিল প্রভাব সংহত করে, সেই কারণ সমুদ্রে রচিত অনন্ত শয্যাপরে যোগনিদ্রায় হলেন অভিভূত। বিষ্ণুর যোগনিদ্রার অবসানকালে তার নাভিপদ্ম থেকে জেগে উঠলেন আদিকল্পের সৃষ্টি বিধাতা ব্রহ্মা। বিষ্ণু সুদর্শনচক্র চালনে মধুকৈটভের মস্তক ছিন্ন করলেন।পুনরায় ব্রহ্মা ধ্যানমগ্ন হলেন। ব্রহ্মার বরে মহিষাসুর অপরাজেয়, তার দ্বারা দৈত্যরাজের ক্ষয় সম্ভবপর নয় জেনে কমলযোনি বিধাতাকে মুখপাত্র করে বৈকুণ্ঠে গিয়ে দেখলেন- হরিহর আলাপনে রত। ব্রহ্মার সম্মুখে নিবেদন করলেন মহিষাসুরের দুর্বিষহ অত্যাচার কাহিনী। স্বর্গভ্রষ্ট দেবতাকূলের সব বার্তা শুনলেন তারা। শান্ত যোগীবর মহাদেবের সুগৌর মুখমণ্ডল ক্রোধে রক্তজবার মত রাঙাবরণ ধারণ করল। আর শঙ্খচক্রগদাপদ্মধারী নারায়নের আনন ভ্রুকূটিকুটিল হয়ে উঠল। তখন মহাশক্তির আহ্বানে গগনে গগনে নিনাদিত হল মহাশঙ্খ। বিশ্বজ্যোতি বিষ্ণুর রুদ্রের বদন থেকে অপূর্ব তেজরশ্মি বিচ্ছুরিত করে আবির্ভুতা হলেন দেবী দুর্গা, তিনিই দুর্গা, আদ্যাশক্তি মহামায়া।

সর্বভূতা যদা দেবী স্বর্গমুক্তি প্রদায়িনী।

ত্বং স্তুতি স্তুতয়ে কা বা ভবন্তি পরমোক্তয়।

সর্বস্য বুদ্ধিরূপেন জনস্য হৃদি সংস্থিতে,

স্বর্গাপবর্গদে দেবী নারায়নী নমোহস্তুতে।

যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃ রূপেন সংস্থিতা।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তি রূপেন সংস্থিতা।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।

উদাত্তকণ্ঠে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মন্ত্রপাঠ শারদ আকাশে মহালয়ার প্রভাতকে করে তোলে আবেগময় ও হৃদয়গ্রাহী। পূজার আনন্দে মেতে ওঠে সারা বিশ্ববাসী। শঙ্খ, ঘণ্টা আর ঢাকের তালে তালে বিশ্ববাসী শক্তির আরাধনায় রত হয়।

তথ্যসূত্র

  1. https://banglasonglyrics.com/14059/%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A7%8B-%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%BF-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A7%8B-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A7%8B-%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%97/
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.