মনিরুল ইসলাম (বীর প্রতীক)

মনিরুল ইসলাম (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [1]

মনিরুল ইসলাম
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

মনিরুল ইসলাম জন্ম টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল উপজেলার কাশিল ইউনিয়নের কামুটিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম সাহেব আলী এবং মায়ের নাম হালিমা বেগম। তার স্ত্রীর নাম মমতাজ বেগম। তাদের তিন ছেলে।

কর্মজীবন

মনিরুল ইসলাম চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসে। তখন তার পদবি ছিল হাবিলদার। মার্চ মাসে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেনানিবাসের বাইরে মোতায়েন ছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে প্রথমে যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরের গঙ্গাসাগর সাব সেক্টরে। পরে ‘কে’ ফোর্সের নবম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধীনে। আখাউড়া, কর্নেল বাজার ও মুকন্দপুরসহ আরো কয়েক স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। মনিরুল ইসলাম স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে ১৯৮১ সালে নায়েব সুবেদার হিসেবে অবসর নেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সীমান্ত এলাকা থেকে কিছুটা দূরে কালাছড়া চা-বাগান। অক্টোবরে ভারতে মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে খবর এল, ওই চা-বাগানে একদল পাকিস্তানি সেনা অবস্থান নিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অধিনায়ক সিদ্ধান্ত নিলেন পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের। গঠিত হলো কয়েকটি দল। একটি দলে অন্তর্ভুক্ত হলেন মনিরুল ইসলাম। মুক্তিযোদ্ধা সব মিলে দুই কোম্পানি। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক স্বল্প প্রশিক্ষণ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা। বাকিরা পেশাদার। কেউ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, কেউ ইপিআরের। মনিরুল ইসলাম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের। মুক্তিযোদ্ধাদের অধিনায়ক খবর নিয়ে জানতে পারলেন, কালাছড়া চা-বাগানে অবস্থান নেওয়া পাকিস্তানি সেনা সংখ্যায় অনেক। প্রায় এক কোম্পানি। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। এত বড় দলকে প্রথাগত আক্রমণ করতে হলে চার গুণ শক্তি প্রয়োজন। কিন্তু তাদের শক্তি মাত্র দ্বিগুণ। তার পরও আক্রমণের সিদ্ধান্ত বহাল থাকল। একদিন রাতে মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত অতিক্রম করে মধ্যরাতে অবস্থান নিলেন কালাছড়া চা-বাগানের কাছে। সেখানে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে ভোরে একযোগে আক্রমণ চালালেন পাকিস্তানি সেনাদের। শুরু হলো ভয়াবহ যুদ্ধ। তুমুল গোলাগুলিতে সুমসাম এলাকা নিমেষে রণক্ষেত্রে পরিণত হলো। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল পাকিস্তানি সেনাদের পাল্টা আক্রমণ উপেক্ষা করে সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে যায় চা-বাগানে। এই দলে ছিলেন মনিরুল ইসলাম। তিনি ছিলেন একটি ক্ষুদ্র উপদলের নেতৃত্বে। অপর দল শুরুতেই দুর্ঘটনায় পড়ে। পাকিস্তানি সেনাদের পাল্টা আক্রমণে ওই দলের একজন শহীদ হন এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। ফলে থেমে যায় তাদের অগ্রযাত্রা! মনিরুল ইসলাম ও তার সহযোদ্ধাদের বীরত্বে তছনছ হয়ে গেল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একাংশের প্রতিরক্ষা। প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সেনারা আশ্রয় নিল সুরক্ষিত বাংকারে। মনিরুল ইসলাম কয়েকজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে দুঃসাহসিকতার সঙ্গে গ্রেনেড হামলা চালালেন বাংকারে। হতাহত হলো কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। এতে পর্যদুস্ত হয়ে পড়ল পাকিস্তানি সেনারা। এই সুযোগে মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যান্য উপদল একযোগে সাঁড়াশি আক্রমণ শুরু করল। তুমুল যুদ্ধের একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা নিহত ও আহত সহযোদ্ধাদের ফেলে পালিয়ে গেল। সেদিন যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অনেক নিহত হয়। যুদ্ধশেষে মুক্তিযোদ্ধারা গণনা করে দেখেন ২৭ জন পাকিস্তানি সেনার মৃতদেহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। পরে গ্রামবাসীর সহায়তায় মক্তিযোদ্ধারা সেই মৃতদেহগুলো দাফন করে। আহতদের ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে দুজন শহীদ ও সাতজন আহত হন।

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.