ভূটানের অর্থনীতি

ভূটানের অর্থনীতি বিশ্বের ক্ষুদ্র অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি মূলত কৃষিকাজ এবং বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। দেশটির ৬০%-এরও বেশি মানুষ এই কৃষিকাজ ও বনজ সম্পদের ওপর জীবিকা নির্বাহ করে। দেশটিতে উচু নিচু পাহাড় সর্বত্র বিস্তৃত। এই জন্য ঘরবাড়ি, রাস্তা তৈরিতে বেশি খরচ পড়ে এবং তা ব্যয়বহুল। পাহাড়ি এলাকার জন্য ভূটানের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে প্রায় চারদিন সময় লাগে। অনুমোদিত আইনের বাইরে পোশাক ও ঘরবাড়ি তৈরি করা যায় না। এই জন্যে ঘরবাড়ি, রাস্তা তৈরিতে বেশি খরচ পড়ে এবং তা ব্যয়বহুল। ভূটানে টেলিভিশন কেন্দ্র একটি এবং বিমানবন্দরও একটি।[6]

ভূটান-এর অর্থনীতি
মুদ্রাগুলট্রাম (বিটিএন)
অর্থবছর১ জানুয়ারী – ৩১ ডিসেম্বর
বাণিজ্যিক সংস্থাসাফটা
পরিসংখ্যান
স্থুআউ$২.০৮৫ বিলিয়ন (২০১৫)[1]
স্থুআউ প্রবৃদ্ধি৭.৩% (২০১৫), ৭.৪% (২০১৬),
৫.৮% (২০১৭), ৫.৪% (২০১৮) [2]
মাথাপিছু স্থুআউ$৮,১০০ (২০১৫) [1] U
ক্ষেত্র অনুযায়ী স্থুআউকৃষিকাজ: ১৪.৪%, কল-কারখানা ৪১.৬%, চাকুরি ৪৪% (২০১৪)
মুদ্রাস্ফীতি৯.৬% (২০১৪)
দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থিত জনসংখ্যা১২% (২০১২)
জিনি সূচক৩৮.৭ (২০১২)
পেশা অনুযায়ী শ্রমকৃষিকাজ ৫৬%, কল-কারখানা ২২%, চাকুরি ২২% (২০১৩)
বেকারত্বের হার২.৯% (২০১৩)
প্রধান শিল্পসমূহসিমেন্ট, কাঠশিল্প, ফল-মূল, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, পর্যটন
ব্যবসা করার সহজসাধ্যতা সূচক৭৫তম (২০১৭)[3]
বৈদেশিক বাণিজ্য
রপ্তানি$৬৫০.৩ million (২০১৪)
রপ্তানি পণ্যবিদ্যুৎ (ভারতের প্রতি), এলাচ, জিপসাম, কাঠশিল্প, হস্তশিল্প, সিমেন্ট, ফল, মূল্যবান পাথর, মসলা
প্রধান রপ্তানি অংশীদার ভারত ৮১.১%
 বাংলাদেশ ৬.৪%
 হং কং ৫.৮%
 চীন ৩.৮%
   নেপাল ২.৯% (২০১৩)[4]
আমদানি$৯৮০.৬ মিলিয়ন (২০১৪)
আমদানিকৃত পণ্যফুয়েল এবং লুব্রিকেন্ট, ভূট্টা, বিমান, যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশ, গাড়ি, কাপড়, চাল
প্রধান আমদানি অংশীদার ভারত ৭৮.৩%
 চীন ৬%
 জাপান ৩.৮%
 দক্ষিণ কোরিয়া ৩.৪%
 থাইল্যান্ড ২.৬%
 সিঙ্গাপুর ২.৬% (২০১৩)[5]
সরকারি অর্থসংস্থান
সরকারি ঋণ$৭১৩.৩ মিলিয়ন (২০০৬)
আয়$৪০৭.১ মিলিয়ন (২০১৪)
ব্যয়$৬১৪ মিলিয়ন (ভূটানের মোট বাজেটের এক-চতুর্থাংশ সামগ্রীর মূল্য ভারত থেকে আসে) (২০১৪)
অর্থনৈতিক সাহায্য$৯০.০২ মিলিয়ন (ভারত) (২০০৫)
মূল উপাত্ত সূত্র: সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক
মুদ্রা অনুল্লেখিত থাকলে তা মার্কিন ডলার এককে রয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।

ভারতের সাথে বাণিজ্যিক, অর্থ আদান-প্রদান এবং ভারতের প্রদানকৃত অর্থের ওপর ভূটানের অর্থনীতি অনেকাংশে নির্ভরশীল। ভূটানের শিল্পগুলো তুলো বা কাপড় নির্ভর শিল্প। যেকোন উন্নয়ন পরিকল্পনা, যেমন রাস্তা তৈরি করাতেও, ভূটান ভারতীয় অস্থায়ী শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল।

ভূটানের প্রতিটি অর্থবছর এমনভাবে সাজানো হয় যেন দেশটির আবহাওয়া এবং সংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। ভূটানের সবচেয়ে বেশি আয় করে ভারতের কাছে জল শক্তি রপ্তানি করে। ভারত ভূটানের অপ্রতিদ্বন্দী রপ্তানি বাজার। তবে ভূটানের প্রতি চীনের প্রভাব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই কারণে ভারত কিছুটা চিন্তিত।[7]

সামষ্টিক অর্থনৈতিক ধারা

নিম্নে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বাজার মূল্য অনুসারে এর ভূটানের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের একটি তালিকা:

বছরমোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (মিলিয়ন গুলট্রাম)মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (মিলিয়ন ডলার)
১৯৮৫২,১৬৬১৭৫
১৯৯০৪,৮৭৭২৭৯
১৯৯৫৯,৫৩১২৯৪
২০০০২০,০৬০৪৬০
২০০৫৩৬,৯১৫৮২৮
২০০৮১২৮০

ভূটানের আয়ের প্রধান উৎস হল জল শক্তি এবং পর্যটন শিল্প। এছাড়াও ভূটান সরকার সম্প্রতি উৎপাদন শিল্পকে অনেকাংশে উন্নত করেছে। এছাড়াও সমাজ কল্যাণমূলক কাজকর্মেও মনোযোগ দিয়েছে। মোট জাতীয় উৎপাদন থেকে ভূটান এখন মোট জাতীয় সুখের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ১৯৭০-এর দশকে সাবেক রাজা জিগমে সিংঘে ওয়াংচুকের কর্মপ্রেরণা ছিল মোট জাতীয় সুখ।[6] আর শিক্ষা, সামাজ এবং পরিবেশসংক্রান্ত নানা ক্ষেত্রে ভূটান আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকে সাহায্য পেয়ে থাকে।

বাংলাদেশের সাথেও ভূটানের অর্থনৈতিক আদান প্রদান রয়েছে। ১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের সাথে ভূটান, ভারত ও নেপালের সাথে আমদানি-রপ্তানির ব্যাপারে একটি বাণিজ্য চুক্তি হয়। সেই আলোকে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারী বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ও ভূটানের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়।[8] ভূটান, ভারত এবং বাংলাদেশ মিলে ভূটানে একটি জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে। এই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এক হাজার ২২৫ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। প্রকল্পটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।[9]

২০০৪ সালে ভূটানই প্রথম দেশ হিসেবে ধূমপান এবং নেশাজাতীয় দ্রব্য বিক্রয়কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

তথ্যসূত্র

  1. https://www.cia.gov/library/publications/resources/the-world-factbook/geos/bt.html
  2. "World Bank forecasts for Bhutan, June 2018 (p. 153)" (PDF)World Bank। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
  3. "Ease of Doing Business in Bhutan"। Doingbusiness.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১১-২৯
  4. "Export Partners of Bhutan"CIA World Factbook। ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৬
  5. "Import Partners of Bhutan"CIA World Factbook। ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৬
  6. "ভুটানের 'সুখের অর্থনীতি"। দৈনিক ইত্তেফাক। ১৮ মে ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১৮
  7. "ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন ময়মনসিংহ মেডিকেলের ছাত্র লোটে শেরিং"। দৈনিক সমকাল। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১৮
  8. "বাংলাদেশ-ভুটানের পণ্য আমদানি-রপ্তানি শুরু"। এনটিভি। ২ জানুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১৮
  9. "ভুটানে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিনিয়োগ করছে বাংলাদেশ"। দৈনিক সমকাল। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১৮

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.