বেদের মেয়ে জোসনা

বেদের মেয়ে জোসনা হল তোজাম্মেল হক বকুল পরিচালিত ১৯৮৯ সালের বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন অঞ্জু ঘোষ এবং তার বিপরীতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। এটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যবসাসফল ছায়াছবি। চলচ্চিত্রটির সফলতার ধারাবাহিকতায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও পুননির্মাণ করে মুক্তি দেওয়া হয়। মূল ভূমিকায় অভিনয় করেন অঞ্জু ঘোষ এবং চিরঞ্জীত

বেদের মেয়ে জোসনা
ভিসিডি কভার
পরিচালকতোজাম্মেল হক বকুল
প্রযোজকআনন্দমেলা চলচ্চিত্র
রচয়িতাতোজাম্মেল হক বকুল
শ্রেষ্ঠাংশেইলিয়াস কাঞ্চন
অঞ্জু ঘোষ
মিঠুন
ফারজানা ববি
সাইফুদ্দিন
নাসির খান
শওকত আকবর
প্রবীর মিত্র
রওশন জামিল
দিলদার
সুরকারআবু তাহের
চিত্রগ্রাহকজাকির হোসেন
সম্পাদকফজলে হক
পরিবেশকআনন্দমেলা চলচ্চিত্র
মুক্তি
  •  জুন ১৯৮৯ (1989-06-09)[1]
দেশবাংলাদেশ
ভাষাবাংলা
নির্মাণব্যয়৳২০ লাখ[1]
আয়৳১০.৯০-১০.৯৫ কোটি[1][2]

কাহিনী সংক্ষেপ

বঙ্গরাজের এক পরগনার কাজী সাহেবের (প্রবীর মিত্র) একমাত্র দশ বছরের মেয়ে জোসনাকে সাপে কাটে। তাকে বাঁচানোর সকল চেষ্টা ব্যর্থ হলে কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেয়া হয় নদীতে। ভাসতে ভাসতে সেই ভেলা নদীর তীরের একটি বেদে বহরের কাছে এসে থামে। বেদে বহরের নিঃসন্তান বেদে সর্দার (সাইফুদ্দিন) তাকে ভালো করে তোলে এবং জোসনা নামেই নিজের নাতনির মতো একজন পেশাদার বেদেনি হিসেবে গড়ে তোলে। জোসনা (অঞ্জু ঘোষ) একদিন রাজবাড়ি থেকে সাপখেলা দেখিয়ে ফেরার পথে বঙ্গরাজের উজিরপুত্র “মোবারক” (নাসির খান) জোসনার সম্মানহানি করতে চায়, আর এমন সময় রাজকুমার “আনোয়ার” (ইলিয়াস কাঞ্চন) এসে তাকে উদ্ধার করে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্য গভীর প্রেম হয়ে যায়। বঙ্গরাজ- তার পুত্র যুবরাজ আনোয়ার সকল বিষয়ে এখন পারদর্শী তাই তিনি ঠিক করে উজিরকন্যা “তারা বানু”কে (ফারজানা ববি) পুত্রবধু করে আনোয়ারের উপর রাজ্যের সমস্ত দায়িত্ব অর্পন করবেন। ঠিক এমন সময় আনোয়ারকে একটি সাপে কাটে, আর তাকে এমন সাপেই কেটেছে যার বিষ নামাতে কোন ওঝাই রাজি হলো না, যখন প্রায় সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ তখনই সেনাপতি পুত্র “রাজ্জাক” (মিঠুন) জোসনাকে সাথে নিয়ে আসে। জোসনা তার নিজের জীবন বাজি রেখে আনোয়ারকে সুস্থ করে তোলে, এর আগে বঙ্গরাজ প্রতিশ্রুতি দেয়- জোসনা আনোয়ারকে সুস্থ করতে পারলে সে যা চাইবে, রাজা রাজসভায় সবার সামনে খুশি হয়ে তাকে তাই দিবেন।

এবার চাওয়ার পালা- পূর্ণ রাজসভায় সবার সামনে জোসনা গানের সুরে কী ধন আমি চাইবো রাজা গো... ও রাজ চাই যে রাজকুমারকে কিন্তু রাজার মতে জোসনার চাওয়ার পরিমাণ এতই বেশি যে তাকে পুরস্কারতো দূরের কথা শেষ পর্যন্ত তিরস্কার করে কপালে রক্ত ঝরিয়ে রাজসভা থেকে বের করে দেয়। এবং বেদে বহরের সব ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে তাড়িয়ে দেয় রাজ্য থেকে, এদিকে আনোয়ার এই ঘটনা মায়ের কাছে জানতে পেরে জোসনাকে খুঁজতে বেরিয়ে যায়। খুঁজে পেয়ে জোসনাকে বিয়ে করে নিয়ে আসে প্রাসাদে, পিতা বঙ্গরাজের কথা অমান্য করে জোসনাকে বিয়ে করার অপরাধে বঙ্গরাজ- পুত্র আনোয়ারের মৃত্যুদণ্ড দেন ও পুত্রবধু জোসনাকে পাঠান বনবাসে। রানীমা নিজ কৌশলে জল্লাদের হাত থেকে পুত্র আনোয়ার ও পুত্রবধু জোসনাকে বাঁচিয়ে দুজনকে একসাথে বনবাসে পাঠিয়ে দেন। শুরু হয় তাদের বনবাস জীবন। জোসনার চেয়ে খাবার খেতে চায় না আনোয়ার, সে চায় নিজে কোনো কাজ করবে এবং রাজপুত্র হয়ে গেল কাঠুরিয়া।

দুজনের দিন ভালই যাচ্ছিলো, হঠাৎ একদিন নরসুন্দরের বেশে আগমন ঘটলো উজিরপুত্র মোবারকের। সে ঐ এলাকার জমিদার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে, মোবারক- আনোয়ার ও জোসনাকে চিনতে পেরে মনে মনে ফন্দি আঁটতে থাকে এবং জমিদার বাড়িতে গিয়ে রাতের আঁধারে কিছু অর্থ ও অলংকার চুরি করে জমিদারের একজন প্রহরীকে হত্যা করে। এবং আনোয়ার ও জোসনার ঘরের পাশে কাঠের স্তুপের মধ্য রেখে আসে। জমিদারের প্রহরী খুন হওয়ায় জোর তালাশ- কে হত্যা করলো তার প্রহরীকে খুঁজতে পাঠালো সব লোক, মোবারক সরাসরি তাদের জানায় এই জঙ্গলে এক তাগড়া জোয়ান স্ত্রী সহ বসবাস করে। জোসনা গেছে ধর্মপিতার (কাজী সাহেবের) কাছে আর এমন সময় জমিদারের প্রহরীরা আনোয়ারকে ধরে নিয়ে যায়, যখন সে জমিদারের প্রশ্নের মুখে তখনই মোবারক রক্ত মাখা খঞ্জর আর চুরি যাওয়া জিনিস পত্র নিয়ে আসে। ফলে বন্দি হয় আনোয়ার, আর জোসনা আনোয়ারকে খুঁজে হয়রান এমনসময় মোবারক তার লালসার শিকার বানাতে চায় তাকে, জোসনা মোবারকের মুখে জ্বলন্ত আগুনের ফুলকি চেপে ধরে পালিয়ে যায়।

এদিকে বঙ্গরাজ যখন পুত্র শোকে কাতর তখন সেনাপতিপুত্র রাজ্জাকের অক্লান্ত পরিশ্রম আর নিষ্ঠা রাজার মন জয় করলে, রাজা তার রাজ্যের সমস্ত দায়িত্ব তুলে দেন রাজ্জাকের হাতে। রানীমা গোপনে রাজ্জাককে জানায় রাজকুমার আনোয়ার এখনো বেঁচে আছে, খুশি হয় রাজ্জাক। এদিকে রাজ্জাকের হাতে রাজ্যের দায়িত্ব তুলে দেয়ায় লোভী উজির তার কন্যা তারা বানুকে রাজ্জাকের সাথে বন্ধুত্ব করতে বলে। কিন্তু তারা ক্ষোভে দুঃখে আত্মহত্যা করতে গেলে রাজ্জাক তাকে বাঁচায় এবং জানায় রাজকুমার আনোয়ার এখনো বেঁচে আছে। ঘটনাচক্রে প্রেম হয়ে যায় ওদের, রাজ্জাক তারা বানুকে ছেলে সাজিয়ে তারকা নাম দিয়ে রাজকুমারের খোঁজে তার মামা জমিদারের কাছে পাঠায়। জমিদার সাহেব তারাকে ছেলে হিসেবে পেয়ে খুশি হয়, জমিদারের কারাগারে বন্দি থাকা আনোয়ার একবুক কষ্ট নিয়ে গেয়ে উঠে- মা... আমি বন্দি কারাগারে আছিগো মা বিপদে বাইরের আলো চোখে পড়ে না। গান শুনে তারা বেরিয়ে কারাগারের কাছে এসে রাজকুমারকে বন্দি থাকতে দেখে কষ্টে বুক ভেঙে যায় তার। সে মহারাজ জানাতে চাইলে আনোয়ার বাধা দিয়ে বলে আগে আমার জোসনাকে খুঁজে বের করো।

শুরু হয় আনোয়ারের অপরাধের বিচারকার্য বিচারক কাজী সাহেব আনোয়ারকে হত্যার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করলে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে আসে তার ধর্মমেয়ে (জোসনা) অনুনয় বিনয় করে স্বামীকে ছেড়ে দিতে। কাজী সাহেব জোসনাকে বলেন, মা এটা বিচারালয় আর বিচারালয়ের বিচারকার্য কোনো আবেগের কথা গ্রহণযোগ্য না। তারা একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে রাজকুমার সম্বোধন করলে কাজী সাহেব জানতে চায় কে রাজকুমার, আনোয়ার; বঙ্গরাজের পুত্র শুনে বিশ্বাস করেন না তিনি। এদিকে তারার পাঠানো বার্তায় রাজ্জাকের মাধ্যমে বঙ্গরাজ তার পুত্র আনোয়ার বেঁচে আছে এবং তারই রাজ্যের অধীনে একটি পরগনার জমিদারের কারাগারে হত্যার দায়ে বন্দি জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে রওনা দেন সেখানকার উদ্দেশ্যে। সেখানে পৌঁছেই পুত্রকে বিচারালয়ে দেখে বুকে জড়িয়ে নেন তিনি, এবং শ্যালক কাজী সাহেবকে নির্দেশ দেন রাজকুমারকে মুক্তি দেওয়ার জন্য। কিন্তু রাজকুমার যে নির্দোষ প্রামাণ না করতে পারলে এটাই তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়, এমন সময় রাজ্জাক উজিরপুত্র মোবারককে ধরে নিয়ে আসে এবং সে সব দোষ স্বীকার করে।

বিচারালয়ে হাজীর জোসনার দাদা-দাদী, জোসনা কাজী সাহেবকে বাবা বলেডাকলে তার পালনকারী দাদা-দাদী বলে; বাবা এলো কোথা থেকে আমরা তো তোকে সাপে কাটা অবস্থায় নদীতে একটি কলার ভেলায় ভাসানো পেয়েছিলাম। শুনে চমকে উঠে কাজী সাহেব জানতে চায় তখনকার কোনোচিহ্ন আছে কি না, ওনারা একটা চিঠি বের করে দেন তার হাতে।

---আর এতেই বেজে ওঠে রাজ্যময় মহামিলনের বাঁশি।

শ্রেষ্ঠাংশে

  • ইলিয়াস কাঞ্চন - আনোয়ার
  • অঞ্জু ঘোষ - জোসনা
  • মিঠুন - রাজ্জাক
  • ফারজানা ববি - তারা
  • সাইফুদ্দিন - বেদে সরদার
  • নাসির খান - মোবারক
  • শওকত আকবর - বঙ্গরাজ
  • প্রবীর মিত্র - কাজী সাহেব (বিচারক)
  • রওশন জামিল - জোসনার দাদী
  • দিলদার - মনি
  • আব্বাস - জমিদার
  • সুষমা -
  • মায়া চৌধুরী -
  • মঞ্জুর রাহী -
  • নাদের -
  • গোলাম শরিফ খান -
  • ফজল রহমান -

সংগীত

বেদের মেয়ে জোসনা সংগীত পরিচালনা করেন আবু তাহের। এই চলচ্চিত্রে এগারো গান রয়েছে। এই এগারো গানের মধ্যে দশটি গানের গীত রচনা করছেন ছবির পরিচালক তোজাম্মেল হক বকুল।[3] এই চলচ্চিত্রের গানের অডিও ক্যাসেট মুক্তির পর এক মাসের মধ্য এক লাখ কপি বিক্রি হয়েছিল।[4] ছবির বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে গানটি বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। এছাড়া হাসান মতিউর রহমানের লেখা, মুজিব পরদেশীর কন্ঠে গাওয়া 'আমি বন্দি কারাগারে' গানটি এখনো জনপ্রিয়।[5][6]

সাউন্ড ট্র্যাক

ট্র্যাকগানকণ্ঠশিল্পীগীতিকারনোট
মায়ায় গড়া এই সংসারে রথীন্দ্রনাথ রায় তোজাম্মেল হক বকুল
ও রানী সালাম বারেবার/পাহাড়িয়া সাপের খেলা সাবিনা ইয়াসমিন তোজাম্মেল হক বকুল
এসো এসো শাহাজাদা..গো রুনা লায়লাঅ্যান্ড্রু কিশোর তোজাম্মেল হক বকুল
বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে রুনা লায়লা ও অ্যান্ড্রু কিশোর তোজাম্মেল হক বকুল শিরোনাম গান
প্রেম যমুনা সাঁতার দিলাম..গো রুনা লায়লা তোজাম্মেল হক বকুল
কি ধন আমি চাইবো রাজা..গো রুনা লায়লা তোজাম্মেল হক বকুল
ও তুই ডাকলি যারে আপন করে রথীন্দ্রনাথ রায় তোজাম্মেল হক বকুল
মেরনা মেরনা জল্লাদ..গো রুনা লায়লা তোজাম্মেল হক বকুল
আমারো লাগিয়া..রে বন্ধু সাবিনা ইয়াসমিন ও অ্যান্ড্রু কিশোর তোজাম্মেল হক বকুল
১০ ওরে তারা তুই দিলি ধরা খুরশিদ আলম ও রুনা লায়লা তোজাম্মেল হক বকুল
১১ মা.. আমি বন্দি কারাগারে মুজিব পরদেশী হাসান মতিউর রহমান

পুনঃনির্মাণ

১৪ ফেব্রুয়ারি,২০১৯ তারিখে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বঙ্গ বিডি, চলচ্চিত্রটির পূনর্নির্মাণের জন্য আনন্দমেলা চলচ্চিত্রের কাছ থেকে স্বত্ব কিনে নেয়।[7][8][9]

তথ্যসূত্র

  1. "'বেদের মেয়ে জোসনা'র ৩০ বছর: একান্ত আলাপে ইলিয়াস কাঞ্চন"বাংলা ট্রিবিউন। ৯ জুন ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৪ আগস্ট ২০১৯
  2. "সিনেমার আয়-ব্যয় ও ফাঁকা বুলি"দৈনিক কালের কণ্ঠ। ৬ আগস্ট ২০১৫।
  3. "২৫ বছরে \\\বেদের মেয়ে জোসনা\\\"Bangladesh Pratidin। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৩
  4. "বেদের মেয়ে জোসনা | কালের কণ্ঠ"Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৩
  5. "'বেদের মেয়ে জোসনা'র রজতজয়ন্তী"banglanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৩
  6. "বাংলা গানের কারাগারনামা"NTV Online। ২০১৯-১০-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-১৫
  7. "আবারও 'বেদের মেয়ে জোসনা'"বাঙালীয়ানা। ২০১৯-০৩-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১৮
  8. "রিমেক হচ্ছে 'বেদের মেয়ে জোসনা'সহ ৫ সাড়া জাগানো ছবি"চ্যানেল আই অনলাইন (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৩-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১৮
  9. "BongoBD to remake five Dhallywood blockbusters"Dhaka Tribune। ২০১৯-০৩-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১৮

আরো দেখুন

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.