বিবির পুকুর
বিবির পুকুর বাংলাদেশের বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি শতবর্ষের পুরানো ও ঐতিহ্যবাহী কৃত্রিম জলাশয়। [1] ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম কেরির পালিত সন্তান জিন্নাত বিবির উদ্যোগে জনগণের জলকষ্ট নিরসনের জন্য নগরীর সদর রোডের পূর্ব পাশে ৪০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৮৫০ ফুট প্রস্থ একটি পুকুর খনন করা হয়। [2] পরবর্তীতে এটি তার নাম অনুসারে "বিবির পুকুর" নামে পরিচিতি লাভ করে। বাংলাদেশের অন্য কোন বিভাগীয় শহরের প্রাণকেন্দ্রে এরকম জলাশয় নেই [1] এবং এটি বরিশাল নগরীর অন্যতম সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য বলে বিবেচিত হয়। [1][3]
বিবির পুকুর | |
---|---|
অবস্থান | বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর রোড (সদর রোড), বরিশাল, বাংলাদেশ |
স্থানাঙ্ক | ২২.৭০৩১৫৭২° উত্তর ৯০.৩৬৯৫৮৪৬° পূর্ব |
ধরন | কৃত্রিম জলাশয় |
অববাহিকার দেশসমূহ | বাংলাদেশ |
সর্বাধিক দৈর্ঘ্য | ৪০০ ফুট |
সর্বাধিক প্রস্থ | ১৮৫০ ফুট |
জনবসতি | বরিশাল |
ইতিহাস
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকরা (মিশনারি) বরিশালে আসে। জানা যায়, উইলিয়াম কেরি পর্তুগিজ দস্যুদের কাছ থেকে জিন্নাত বিবি নামের এক মুসলিম মেয়েকে উদ্ধার করে তাকে লালন-পালন করেন। [4] পরবর্তীতে এক মুসলিম যুবকের কাছে জিন্নাত বিবিকে বিয়ে দেয়া হয়। উইলিয়াম কেরি জিন্নাত বিবিকে জেনেট বলে ডাকতেন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে জিন্নাত বিবি জনগণের জলকষ্ট নিরসনের জন্য জলাশয় খননের উদ্যোগ নেন ও এ অনুযায়ী নগরীর সদর রোডের পূর্ব পাশে ৪০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৮৫০ ফুট প্রস্থ একটি পুকুর খনন করা হয়। তখন থেকেই পুকুরটি বিবির পুকুর নামে পরিচিতি লাভ করে। [5]
একসময় কীর্তনখোলা নদীর সাথে এ পুকুরের দুটি সংযোগ ছিল এবং এতে নিয়মিত জোয়ার ভাটা হত। সংযোগ দুটির একটি বরিশাল সার্কিট হাউজ হয়ে মৃতপ্রায় ভাটার খালের মাধ্যমে কীর্তনখোলায় এবং অপরটি নগরীর গির্জা মহল্লার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিলুপ্ত খালের মাধ্যমে কীর্তনখোলা নদীর সাথে যুক্ত ছিল।
সংস্কার ও মানোন্নয়ন
বরিশাল পৌরসভা স্থাপনের পর থেকেই বিবির পুকুরটি বিভিন্নভাবে সংস্কার ও পুনর্খনন করা হয়। ৯০ এর দশকে পৌর চেয়ারম্যান আহসান হাবিব কামাল পুকুরটির ঐতিহ্য রক্ষায় বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও তা যথাযথ ভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। ২০০৮ সালে শওকত হোসেন হিরণ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের এর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বিবির পুকুরের ঐতিহ্য রক্ষা এবং সৌন্দর্য্য বর্ধনে নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেন। এর মধ্যে পুকুরের চারপাশে ঝুলন্ত পার্ক, বিশ্রাম নেয়ার জন্য বেঞ্চ, অত্যাধুনিক গ্রিল ও পুকুরটির শোভা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের লাইটিং স্থাপন উল্লেখযোগ্য। এর পাশাপাশি বিবির পুকুরের পাশেই উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র পাবলিক স্কয়ার (বর্তমানে হিরণ স্কয়ার নামে পরিচিত) এবং পুকুরের মধ্যে ফোয়ারা স্থাপন করেন।
বর্তমান অবস্থা
বিবির পুকুর বর্তমানে একটি নাগরিক বিনোদনের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিকেলে ও সন্ধ্যায় জনগণ আড্ডা ও অবসর সময় কাটানোর জন্য পুকুর পাড়ে ও হিরণ স্কয়ারে জড়ো হয়। ২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর জনগণের জন্য পুকুরের চারপাশ ও হিরণ স্কয়ার এলাকায় ফ্রি ওয়াই-ফাই সুবিধা যুক্ত করা হয়। [6]
তথ্যসূত্র
- হীরা, খোকন আহম্মেদ (৯ এপ্রিল ২০১৩)। "শত বছরের ঐতিহ্য অনেক ইতিহাসের নীরব সাক্ষী - বরিশালের অনন্য সৌন্দর্যের 'বিবির পুকুর'"। দৈনিক জনকণ্ঠ। ২০১৬-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০১৫।
- "মেয়রের নানামুখী পরিকল্পনায় সাজবে বিবির পুকুর"। দৈনিক আজকের পরিবর্তন। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০১৫।
- "বরিশালের বিবির পুকুরপাড় পাখ-পাখালির অভয়ারণ্য"। দৈনিক সংবাদ। ২৪ মার্চ ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১৫।
- "দেশবীক্ষণ - বরিশাল শহরের প্রাণকেন্দ্রে শত বছরের অধিক সময়ের ঐতিহ্যবাহী বিবির পুকুরটি সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে"। দৈনিক যায়যায়দিন। ২৮ জুলাই ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০১৫।
- "ভ্রমণে বাংলার ভেনিস বরিশাল - বিবির পুকুর"। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১৫।
- "বরিশালের বিবির পুকুর এলাকায় ওয়াইফাই সুবিধা"। দৈনিক প্রথম আলো। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১৫।
আরও দেখুন
- দুর্গা সাগর