বাহাউদ্দিন ইবনে শাদ্দাদ

বাহাউদ্দিন ইউসুফ ইবনে রাফি ইবনে শাদ্দাদ (আরবি: بهاء الدين ابن شداد; সম্মানসূচক "বাহাউদ্দিন"" অর্থ "বিশ্বাসের দ্যুতি") (৭ মার্চ ১১৪৫ ৮ নভেম্বর ১২৩৪) ছিলেন ১২শ শতাব্দীর একজন কুর্দি বংশোদ্ভূত মুসলিম আইনবিদ, ইতিহাসবিদ ও পণ্ডিত।[1] সালাহউদ্দিনের জীবনী লেখার জন্য তিনি খ্যাত।[2]

জীবনী

ইবনে শাদ্দাদ ৫৩৯ হিজরির ১০ রমজান (৭ মার্চ ১১৪৫ খ্রিষ্টাব্দ) বর্তমান ইরাকের মসুলে জন্মগ্রহণ করেন। মসুলে তিনি কুরআন, হাদিস ও ইসলামি আইনের উপর শিক্ষা অর্জন করেছেন। এরপর তিনি বাগদাদের নিজামিয়া মাদ্রাসায় গমন করে। শীঘ্রই এখানে তিনি মুইদ ("সহকারী অধ্যাপক") হন।[2] ১১৭৩ সালের দিকে তিনি মুদাররিস ("অধ্যাপক") হিসেবে মসুল ফিরে আসেন।[2] ১১৮৮ সালে হজ্জ থেকে ফিরে আসার পর সুলতান সালাহউদ্দিন তাকে তলব করেন। সালাহউদ্দিন ইতঃপূর্বে ইবনে শাদ্দাদের লেখা পড়েছিলেন এবং তার গুণের কদর করতেন।[2] এরপর ইবনে শাদ্দাদ স্থায়ীভাবে সালাহউদ্দিনের অধীনে কাজে যোগ দেন। সালাহউদ্দিন তাকে কাজি আল-আসকার ("সেনাবাহিনীর বিচারক") হিসেবে নিয়োগ দেন।[2] এর ফলে ইবনে শাদ্দাদ এক্রের অবরোধআরসুফের যুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ার সুযোগ পান[3][4] এবং তৃতীয় ক্রুসেডের একটি প্রাঞ্জল বিবরণ লিখে যেতে সক্ষম হন।[5]

সুলতান সালাহউদ্দিন ও ইবনে শাদ্দাহ ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন। সালাহউদ্দিন তাকে বেশ কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনিক ও বিচারিক দপ্তরে নিয়োগ দেন।[2] সুলতান সালাহউদ্দিনের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ইবনে শাদ্দাদ তার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও অন্যতম প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।[2]

সালাহউদ্দিনের মৃত্যুর পর ইবনে শাদ্দাদ আলেপ্পোর কাজি হিসেবে নিয়োগ পান।[5] ৬৩২ হিজরির ১৪ সফর (৮ নভেম্বর ১২৩৪ খ্রিষ্টাব্দ) ৮৯ বছর বয়সে তিনি আলেপ্পোয় ইন্তেকাল করেন।[2]

রচনাকর্ম‌

ইবনে শাদ্দাদ তার রচিত সালাহউদ্দিনের জীবনীর জন্য সুপরিচিত। এই গ্রন্থ তিনি ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে লিখেছেন এবং মুসলিমরা কিভাবে সালাহউদ্দিনকে দেখত তা এতে ফুটে উঠেছে।[5] বইয়ের আরবি শিরোনাম আল-নাওয়াদির আল-সুলতানিয়া ওয়াল-মাহাসিন আল-ইউসুফিয়া। এর অর্থ ইংরেজিতে দ্য রেয়ার এন্ড এক্সিলেন্ট হিস্ট্রি অব সালাদিন নামে বইটি প্রকাশিত হয়েছে।[5]

ইবনে শাদ্দাদ ইসলামি আইনের প্রয়োগের উপর লেখালেখি করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি বইয়ের ইংরেজি শিরোনাম হল, দ্য রিফুউজ অব জাজেস ফ্রম দ্য এম্বিগুইটি অব জাজমেন্ট, দ্য প্রুফ অব জাজমেন্টস, দ্য এপিটম, দ্য ভারচুস অব দ্য জিহাদ[2] ইবনে খালিকানের লেখা সমসাময়িক চরিতাভিধান ওয়াফায়াত আল-আয়ান থেকে ইবনে শাদ্দাদ সম্পর্কে অধিকাংশ তথ্য জানা যায়।[2]

ইবনে শাদ্দাদ তার লেখা ঘটনাবলীর সমসাময়িক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। এর ফলে তার লিখিত ইতিহাস খুবই মূল্যবান।

তথ্যসূত্র

  1. R. Izady, Mehrdad (১৯৯১)। The Kurds: a concise handbook
  2. ibn Shaddād 2002, পৃ. 2–4
  3. Lyons ও Jackson 1982, পৃ. 305, 337
  4. Thatcher 1911
  5. Gabrieli 1984, পৃ. xxix
  • Behâ ed-Dîn (১৮৯৭)। C. R. Conder, সম্পাদক। The Life of Saladin। London: Committee of the Palestine Exploration Fund।
  • ibn Shaddād, Bahā' ad-Dīn (২০০২) [1228]। The Rare and Excellent History of Saladin। Richards, D.S. (trans.)। Ashgate Publishingআইএসবিএন 978-0-7546-3381-5।
  • Gabrieli, Francesco (১৯৮৪)। Arab Historians of the Crusades। Costello, E.J. (trans.)। Routledge & Kegan Paul। আইএসবিএন 978-0-7102-0235-2।
  • Lyons, M.C.; Jackson, D.E.P. (১৯৮২)। Saladin: The Politics of the Holy War। Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-0-521-31739-9।
  • Thatcher, Griffithes Wheeler (১৯১১)। "Behā ud-Dīn"। চিসাম, হিউ। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ3 (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস।[[বিষয়শ্রেণী:উইকিসংকলনের তথ্যসূত্রসহ ১৯১১ সালের এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা থেকে উইকিপিডিয়া নিবন্ধসমূহে একটি উদ্ধৃতি একত্রিত করা হয়েছে]]

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.