বরিশাল গানস

বরিশাল গানস বা গানস অব বরিশাল বলতে ঊনবিংশ শতাব্দীতে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের বরিশাল এলাকায় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ঘটা বিকট কিছু শব্দকে বোঝায়।[1] এ ধরনের অব্যাখ্যেয় শব্দগুলোকে একত্রে বলা হয় মিস্টপুফার্স। বরিশালের মত ভারতের গঙ্গা নদীর তীর, যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, স্কটল্যান্ড, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, জাপান, ফিলিপাইন, অস্ট্রেলিয়া[2], উত্তর সাগরসহ আরও কিছু এলাকায় এ ধরনের শব্দ শোনা গেছে।[3][4]

১৮৭০-এর দিকে প্রথম বারের মত বরিশাল গানসের কথা নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা যায়। তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকেই এটি শোনা যেত বলে নথিপত্রগুলোতে উল্লেখ করা হয়। ১৮৮৬ সালে কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির হিসাব অনুযায়ী খুলনা, বরিশাল, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, হরিশপুর প্রভৃতি স্থানে বরিশাল গানস শোনা গেছে।[4] টি. ডি. লাতুশ ১৮৯০ সালের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, বরিশাল গানস কেবল গাঙ্গেয় বদ্বীপ নয়, ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপেও শোনা গেছে।[1] যে সব বিকট শব্দ শোনা যেত তার সাথে ঢেউয়ের শব্দের চেয়ে কামানের গোলা দাগার শব্দের সাথে বেশি মিল ছিল। কখনও কখনও একটা শব্দ শোনা যেত, আবার কখনও দুই বা তিনটি শব্দ একসাথে শোনা যেত। দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল থেকে শব্দগুলো বেশি শোনা যেত। অক্টোবর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শব্দগুলো শোনা যেত বেশি। প্রথম দিকে ব্রিটিশদের ধারণা ছিল শব্দগুলো জলদস্যুদের কামান দাগার আওয়াজ, কিন্তু বহু খোঁজাখুঁজি করেও কোন জলদস্যু জাহাজ বা ঘাঁটির খোঁজ পাওয়া যায় নি।[3]

কবি সুফিয়া কামাল তার আত্ন জীবনীতে লিখেছেন, তার শৈশবে এধরনের রহস্যময় বিস্ফোরনের আওয়াজের কথা তিনি মুরুব্বীদের কাছে শূনেছেন। তার কথায়, ১৯৫০ এর পরে উনি কখনো এই শব্দ আর কেউ শুনেছে তা শোনেননি।

বরিশাল গানস প্রকৃতপক্ষে কিভাবে উদ্ভূত হয় সে সম্পর্কে বেশ কয়েকটি প্রকল্প অনুমান করা হয়েছে, তবে এদের কোনটিই প্রমাণিত হয় নি। ভূমিকম্প, বজ্রপাত, মোহনায় ঢেউয়ের ধাক্কা প্রভৃতির সাথে এর তুলনা করা হয়েছে।[3]

যুক্তরাষ্ট্রে একটি ব্যান্ড দলের নামকরণ করা হয়েছে গানস অফ বরিশাল

তথ্যসূত্র

  1. T.D. LaTouche, "On the Sounds Known as Barisal Guns", Report (1890-8) of the annual meeting By British Association for the Advancement of Science , Issue 60, pp. 800.
  2. "Barisal Guns: Manifestations at Gnowan- gerup."। The West Australian। Monday 14 July 1924। পৃষ্ঠা 8। সংগ্রহের তারিখ October 29, 2012 এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  3. "The Guns of Barisal and Anomalous Sound Propagation"J. B. Calvert। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ২৯, ২০১২
  4. "Barisal Guns"। Global Security.org। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ২৯, ২০১২
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.