পেপ গার্দিওলা
ইয়োসেপ ‘‘পেপ’’ গার্দিওলা ই সালা (জন্ম ১৮ জানুয়ারি ১৯৭১) একজন স্পেনীয় ফুটবল ম্যানেজার এবং প্রাক্তন খেলোয়াড়। বর্তমানে তিনি ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটির ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। খেলোয়াড় হিসেবে গার্দিওলা একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ছিলেন এবং ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময় তিনি বার্সেলোনায় কাটিয়েছেন। তিনি ইয়োহান ক্রুয়েফের ‘‘ড্রিম টিমেরও’’ অংশ ছিলেন যা বার্সেলোনার হয়ে প্রথম ইউরোপিয়ান কাপ জেতে। তিনি ইতালির ক্লাব ব্রেস্কিয়া ও রোমা, কাতারের ক্লাব আল-আহলি এবং মেক্সিকোর ক্লাব দোরাদোসেও খেলেছেন। ইতালিতে খেলার সময় ড্রাগ টেস্টে পজিটিভ হওয়ার কারনে তাকে চার মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তিনি স্পেন জাতীয় দলে খেলছিলেন এবং কাতালুনিয়া জাতীয় দলের হয়ে কিছু প্রীতি খেলায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।
![]() বায়ার্ন মিউনিখের সাথে গার্দিওলা | |||
ব্যক্তিগত তথ্য | |||
---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | জোসেপ গার্দিওলা সালা[1] | ||
জন্ম | ১৮ জানুয়ারি ১৯৭১ | ||
জন্ম স্থান | স্ন্যাতপেদর, স্পেন | ||
উচ্চতা | ১.৮০ মিটার (৫ ফুট ১১ ইঞ্চি)[2] | ||
মাঠে অবস্থান | ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার | ||
ক্লাবের তথ্য | |||
বর্তমান ক্লাব | ম্যানচেস্টার সিটি (ম্যানেজার) | ||
যুব পর্যায়ের খেলোয়াড়ী জীবন | |||
১৯৮৪–১৯৯০ | বার্সেলোনা | ||
জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের খেলোয়াড়ী জীবন* | |||
বছর | দল | উপস্থিতি† | (গোল)† |
১৯৯০–১৯৯২ | বার্সেলোনা বি | ৫৯ | (৫) |
১৯৯০–২০০১ | বার্সেলোনা | ২৬৩ | (৬) |
২০০১–২০০২ | ব্রেস্কিয়া | ১১ | (২) |
২০০২–২০০৩ | রোমা | ৪ | (০) |
২০০৩ | ব্রেস্কিয়া | ১৩ | (১) |
২০০৩–২০০৫ | আল-আহলি | ১৮ | (২) |
২০০৫–২০০৬ | দোরাদোস | ১০ | (১) |
মোট | ৩৭৮ | (১৭) | |
জাতীয় দল | |||
১৯৯১ | স্পেন অনূর্ধ্ব-২১ | ২ | (০) |
১৯৯১–১৯৯২ | স্পেন অনূর্ধ্ব-২৩ | ১২ | (২) |
১৯৯২–২০০১ | স্পেন | ৪৭ | (৫) |
১৯৯৫–২০০৫ | কাতালুনিয়া | ৭ | (০) |
দলসমূহ পরিচালিত | |||
২০০৭–২০০৮ | বার্সেলোনা বি | ||
২০০৮–২০১২ | বার্সেলোনা | ||
২০১৩–২০১৬ | বায়ার্ন মিউনিখ | ||
২০১৬– | ম্যানচেস্টার সিটি | ||
|
খেলোয়াড় হিসেবে অবসর গ্রহণের পর তিনি বার্সেলোনা বি দলের কোচের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০৮ সালের ৮ মে, বার্সেলোনা প্রেসিডেন্ট জোয়ান লাপোর্তা ফ্রাংক রাইকার্ডের উত্তরসূরি হিসেবে গার্দিওলার নাম ঘোষণা করেন।[3] এতে করে, তিনি বার্সেলোনার মূল দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পেয়ে যান। ২০০৮ সালের ৫ জুন, তিনি চুক্তি সাক্ষর করেন। ম্যানেজার হিসেবে তার প্রথম মৌসুমে (২০০৮–০৯) বার্সা ট্রেবল জয় করে। তারা কোপা দেল রে, লা লিগা এবং চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা জেতে। এতে করে, চ্যম্পিয়ন্স লীগ ইতিহাসে কনিষ্ঠতম ম্যানেজার হিসেবে এই শিরোপা জেতার কৃতিত্ব গড়েন গার্দিওলা। পরের মৌসুমে গার্দিওলা এবং বার্সেলোনা স্পেনীয় সুপার কোপা, ইউরোপীয়ান সুপার কাপ এবং ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জেতে। এতে করে, এক পঞ্জিকাবর্ষে সাম্ভব্য ছয়টি শিরোপার সবগুলোই জেতে বার্সা ও গার্দিওলা।
২০১১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর, গার্দিওলাকে কাতালান আইনসভার সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বর্ণপদক পুরস্কার দেওয়া হয়।[4] ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি, গার্দিওলাকে ২০১১ ফিফা বর্ষসেরা কোচের পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রতিযোগীতায় তিনি ৪২% ভোট পান। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ অ্যালেক্স ফার্গুসন পান ১৬% এবং রিয়াল মাদ্রিদের কোচ জোসে মরিনহো পান ১২% ভোট। ২০১২ সালের ৩০ জুন, গার্দিওলাবার্সেলোনার কোচের পদ থেকে অব্যাহতি নেন। তিনি চার বছর বার্সেলোনায় কাটিয়ে দলকে ১৪টি শিরোপা উপহার দেন।[5] ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি, বায়ার্ন মিউনিখ কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে যে ২০১৩–১৪ মৌসুমে গার্দিওলা ক্লাবের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
ক্লাব ক্যারিয়ার
বার্সেলোনা
গার্দিওলা জন্মগ্রহণ করেন বার্সেলোনার স্ন্যাতপেদরে। ১৩ বছর বয়সে তিনি বার্সেলোনার যুব প্রকল্প লা মাসিয়াহ-তে যোগদান করেন এবং সেখানে ছয় বছর কাটান। ১৯৯০ সালে কাদিজের বিপক্ষে তার অভিষেক হয়।
১৯৯১–৯২ মৌসুমে মাত্র ২০ বছর বয়সে গার্দিওলা দলের নিয়মিত খেলোয়াড়ে পরিনত হন। এতে করে তিনি ইয়োহান ক্রুইফের ড্রিম টিমের অংশ হয়ে পড়েন। ঐ মৌসুমে বার্সেলোনা লা লিগা এবং ইউরোপীয়ান কাপ জেতে। ইতালির প্রভাবশালী ম্যাগাজিন গুয়েরিন স্পোর্তিভো ২১ বছরের কম বয়সী হিসেবে গার্দিওলাকে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর খেলোয়াড় হিসেবে বিবৃত করে। ক্রুইফের ড্রিম টিম ১৯৯২–৯৩ এবং ১৯৯৩–৯৪ মৌসুমেও লা লিগা শিরোপা জেতে। রোমারিওর সাথে চুক্তি করে বার্সেলোনা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে পৌছায়। কিন্তু ফ্যাবিও ক্যাপেলোর মিলানের কাছে ৪–০ ব্যবধানে হেরে বার্সেলোনার শিরোপা হাতছাড়া হয়। লা লিগায় ১৯৯৪–৯৫ মৌসুমে চতুর্থ এবং ১৯৯৫–৯৬ মৌসুমে তৃতীয় হলে ইয়োহান ক্রুইফ বার্সেলোনা ছেড়ে দেন।
১৯৯৬–৯৭ মৌসুমে বার্সেলোনার কোচের দায়িত্ব নেন ববি রবসন। ঐ মৌসুমে বার্সেলোনা কোপা দেল রে, স্প্যানীশ সুপার কোপা এবং কাপ উইনার্স কাপ জেতে। [[১৯৯৭–৯৮ মৌসুমে গার্দিওলার জন্য রোমা এবং প্রামার দুইটি অফার বাতিল করে দেয় বার্সেলোনা। গার্দিওলা কাতালান ক্লাবটির সাথে ২০০১ সাল পর্যন্ত নতুন করে চুক্তিবদ্ধ হন। ইনজুরির কারনে ১৯৯৭–৯৮ মৌসুমের অধিকাংশ সময়ই গার্দিওলাকে মাঠের বাহিরে থাকতে হয়। মৌসুমে বার্সেলোনার কোচ ছিলেন লুইস ফন গাল এবং ঐ মৌসুমে বার্সেলোনা লা লিগা ও কোপা দেল রে শিরোপা জেতে। পরের মৌসুমে ইনজুরি সারিয়ে তিনি আবারও মাঠে ফেরেন। মৌসুমে রিভালদো এবং লুইস ভিগোর অবদানে বার্সেলোনা লা লিগা শিরোপা জেতে। ১৯৯৮ সালের ৮ জুন, গার্দিওলার পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়, ফলে ১৯৯৮ ফিফা বিশ্বকাপে তার অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। গোড়ালির ইনজুরির কারনে ২০০০–০১ মৌসুমে আবারও গার্দিওলার অস্ত্রোপচার করা হয়, ফলে মৌসুমের শেষ তিন মাস তাকে মাঠের বাহিরে কাটাতে হয়। ঐ মৌসুমে বার্সেলোনার সবকয়টি শিরোপাই হাতছাড়া হয়ে যায়। লা লিগায় তারা চতুর্থ হলেও চ্যাম্পিয়ন্স লীগের বাছাইপর্ব টপকাতে সমর্থ হয়।
২০০১ সালের ১১ এপ্রিল, বার্সেলোনা দলপতি তার দল ছাড়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। তিনি বিবৃত করেন যে এটি একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। ২০০১ সালের ২৪ জুন, সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে বার্সেলোনার হয়ে গার্দিওলা তার শেষ খেলায় মাঠে নামেন।[6] বার্সেলোনার মূল দলের হয়ে ১২ মৌসুমে গার্দিওলা ৪৭৯টি খেলায় মাঠে নেমেছেন এবং ১৬টি শিরোপা জিতেছেন। সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে খেলার পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘এটি ছিল একটি দীর্ঘ যাত্রা। আমি খুশি, গর্বিত, মানুষ আমার সাথে যেরূপ আচরন করেছে এবং আমি অনেক বন্ধু বানিয়েছি। আমি আর বেশি কিছু চাইতে পারি না। আমি অনেক বছর সেরাদের মধ্যে কাটিয়েছি। আমি ইতিহাস গড়তে আসিনি কিন্তু নিজের ইতিহাস গড়তে এসেছি।’’ বার্সেলোনার বর্তমান মাঝমাঠের খেলোয়াড়দের কেউ কেউ তাকে নিজেদের আদর্শ বলে দাবী করেন। এর মধ্যে জাভি হার্নান্দেজ, সেস্ ফ্যাব্রিগাস এবং আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা উল্লেখযোগ্য।[7]
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার
তথ্যসূত্র
- "Pep Guardiola"। fcbayern.de। ১৭ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৪।
- "Rijkaard until 30 June; Guardiola to take over"। FC Barcelona। ৮ মে ২০০৮। ২৫ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০১৩।
- "Un emocionat Pep Guardiola rep la Medalla d'Honor del Parlament" (Catalan ভাষায়)। TV3। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০১৩।
- "Pep Guardiola quits Barcelona Tito Vilanova to take over"। Dailymail (UK)। ২৭ এপ্রিল ২০১২।
- PDFlink must be run with an argument PDF
- "Fabregas: I am like Xavi and Guardiola is my hero"। Sport.co.uk। ১৫ এপ্রিল ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০১৩।
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে ইয়োসেপ গার্দিওলা সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
- BDFutbol খেলোয়াড় প্রোফাইল
- BDFutbol কোচ প্রোফাইল
- জাতীয় দলের তথ্য
- এফসি বার্সেলোনা প্রোফাইল
- Transfermarkt প্রোফাইল