পাহাড়ি নীলকান্ত
পাহাড়ি নীলকান্ত (দ্বিপদ নাম:Eurystomus orientalis) কোরাসিডি পরিবারের অন্তর্গত ইউরিস্টোমাস গণের এক প্রজাতির বিরল পাখি। পাহাড়ি নীলকান্তের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ চওড়ামুখ যা ল্যাটিন Eury=চওড়া এবং গ্রীক stomus=মুখ থেকে এসেছে । এরা বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখি। গ্রীষ্মে প্রজননের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আসে । এদেরকে দেশের সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায় ।আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা আশংকাহীন বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে এরা Critically endangered বা মহাবিপন্ন বলে বিবেচিত। এই পাখিকে অস্ট্রেলিয়া থেকে জাপান পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যায়।
পাহাড়ি নীলকান্ত | |
---|---|
প্রাপ্তবয়স্ক পাখি | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | অ্যানিমালিয়া |
![]() | |
Distribution of the oriental dollarbird | |
প্রতিশব্দ | |
Coracias orientalis Linnaeus, 1766 |
বর্ণনা
পাহাড়ি নীলকান্ত লম্বায় ২৮ থেকে ৩০ সে মি হয়ে থাকে । পাখার দৈর্ঘ্য ১৭৮ থেকে ১৯৮ মি মি, ঠোঁট ২৭ থেকে ৩৫ মি মি, লেজ ৯০ থেকে ১০২ মি মি হয়ে থাকে । পুরুষ পাখিটির ওজন ১২০ গ্রাম এবং স্ত্রী পাখিটির ওজন ১৭২ গ্রাম হয়ে থাকে । এই প্রজাতির পাখিরা দেখতে গাঢ় বাদামী বর্ণের হয় । দেহের পিছনের অংশ এবং লেজ নীল সবুজ রঙের । এদের পেট এবং লেজের নিচের অংশ হালকা বর্ণের । গলা চকচকে উজ্জ্বল নীল । পাখা গাঢ় নীল রঙের । এদের ঠোঁট ছোট এবং চওড়াকৃতির হয় । ঠোঁট কমলা লাল রঙের সাথে কালো দাগ দেখতে পাওয়া যায় । পা লাল রঙের । স্ত্রী পাখি পুরুষ পাখির তুলনায় কিছুটা অনুজ্জ্বল । এছাড়া এদের মধ্যে আর কোন পার্থক্য নেই । অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে খুবই অনুজ্জ্বল । এদের গলায় নীল রঙ দেখতে পাওয়া যায় না । এদের ঠোঁট ও পা লাল বর্ণের হয় ।
বাসস্থান ও স্বভাব
পাহাড়ি নীলকান্ত দিবাচর প্রাণী । এরা দিনের বেলা শিকার করে এবং রাতে বিশ্রাম নেয় । এদেরকে দিনের বেলায় বনে বাদাড়ে ঘুরতে দেখা যায় । গ্রামীন অঞ্চলে এদের বেশি দেখা গেলেও শহর অঞ্চলে এদের তেমন একটা দেখা যায় না । সাধারনত এরা গাছের মগডালে বসে শিকারের জন্য অপেক্ষা করে । তারপর সুযোগমতো মাটিতে নেমে এসে পতঙ্গ শিকার করে আবার আকাশে ফিরে যায় । এরা এদের বেশির ভাগ সময়ই উড়তে ব্যয় করে ।
এরা পুরোপুরি পতঙ্গভূক প্রাণী । এরা এদের ধারালো নখ দিয়ে পোকামাকড় শিকার করে । এরা সাধারনত বড় বড় পোকা শিকার করে । এদের খাদ্য তালিকায় আছে পঙ্গপাল, ঘাস ফড়িং, মথ, ছোট টিকটিকি, উইপোকা, ঘুর্ঘুরে পোকা এবং বিভিন্ন প্রজাতির গুবরে পোকা ।
প্রজনন
এই প্রজাতির প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ এবং সেপ্টেম্বর মাস । এদের বাসা সাধারনত মাটি থেকে ১০-১৫ মি উঁচুতে হয়ে থাকে । এদেরকে কাঠঠোকরার পরিত্যক্ত বাসায় দেখতে পাওয়া যায় । এরা মৃত তাল গাছের চুড়ায় ও বাসা বানায়। প্রজনন মৌসুমে এই জোড়া পাখি আক্রমণাত্মক হয়ে থাকে। স্ত্রী পাখি ২ থেকে ৩টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো দেখতে চকচকে সাদা এবং গোলাকার । বাবা ও মা পাখি উভয় ডিমে তা দেয় । ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ১৮ থেকে ২৩ দিন সময় লাগে ।
তথ্যসূত্র
- BirdLife International (২০১৬)। "Eurystomus orientalis"। The IUCN Red List of Threatened Species। IUCN। 2016: e.T22682920A92968881। doi:10.2305/IUCN.UK.2016-3.RLTS.T22682920A92968881.en। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৮।