নবাব আবদুল লতীফ
আবদুল লতিফ (জন্ম: ১৮২৮ - মৃত্যু: ১০ জুলাই, ১৮৯৩) বিশেষ অবদানের জন্য খান বাহাদুর ও নওয়াব উপাধি পেয়েছেন।
নওয়াব আবদুল লতিফ | |
---|---|
জন্ম | ১৮২৮ |
মৃত্যু | ১০ জুলাই, ১৮৯৩ |
নাগরিকত্ব | ![]() |
যেখানের শিক্ষার্থী | কলকাতা মাদ্রাসা |
পেশা | সরকারি কর্মকর্তা |
পুরস্কার | নওয়াব, খান বাহাদুর, সি.আই.ই., নওয়াব বাহাদুর, অর্ডার অব দি মাজেদি |
জন্ম
নওয়াব আবদুল লতিফ ১৮২৮ সালে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার চতুল ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা ফকির মাহমুদ একজন আইনজীবী ছিলেন।
শিক্ষাজীবন
পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অণুধাবন করে তার পিতা তাকে আরবির সাথে ইংরেজি ভাষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে কলকাতা মাদ্রাসায় ভর্তি করান। সেখানেই তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ইংরেজি, আরবি, ফার্সি ও উর্দু ভাষায় পান্ডিত্য অর্জন করেন।
কর্মজীবন ও লেখালেখি
আবদুল লতিফের কর্মজীবন শুরু হয় ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষকতা দিয়ে। পরবর্তীতে তিনি ইংরেজি ও আরবির অধ্যাপক হিসেবে কলকাতা মাদ্রাসায় যোগদান করেন। ১৮৪৯ সালে তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৮৭৭ সালে তিনি প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেট পদে উন্নীত হন।
নওয়াব আব্দুল লতিফ আত্মজীবনী লিখেছেন। ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রামের মেহরাব পাবলিকেশন আত্মজীবনীটি প্রকাশ করে। আত্মজীবনীটির সম্পাদনা করেন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. মোহাম্মদ মোহর আলী। তবে উপরি পাওনা হল, আত্মজীবনীর পাশাপাশি তার অন্য কিছু লেখাও বইটিতে সংযোজিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, তিনি মধুসূদন দত্ত ও ভূদেব মুখোপাধ্যায় এর সহপাঠী ছিলেন। ১৮৮০ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে নবাব আরো পরে নবাব বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করেন।
অবদান
ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে সাতক্ষীরায় থাকাকালীন সময়ে তিনি সেখানকার দরিদ্র নীল চাষীদের অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশা দূরীকরণে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেন। ১৮৬০ সালে নীল কমিশন গঠনেও তার অবদান ছিল। ১৮৬২ সালে বঙ্গীয় আইন পরিষদের প্রথম মুসলিম সদস্য হিসেবে তিনি মনোনীত হন। ১৮৬৩ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো মনোনীত হন। শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রেও তার অবদান ছিল অনস্বীকার্য। মুসলমানদের মধ্যে তিনিই প্রথম উপলব্ধি করেন যে, বাংলার মুসলিম যুবক শ্রেণীর আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া উচিত। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, আধুনিক শিক্ষা সম্পর্কে মুসলমানদের অনীহার দরুন তারা জীবনের সর্বক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে আছে। মুসলমানদের এই আত্মঘাতী কুসংস্কার দূর করার জন্য তিনি সারাজীবন নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন।
মুসলমানদের আধুনিক শিক্ষাগ্রহণের জন্য তিনি দুই ধরনের নীতি গ্রহণ করেছিলেন। প্রথমত ব্রিটিশের নতুন শাসন পদ্ধতির সুফল ভোগ করার জন্য মুসলমানদের প্রস্তুত করার এবং দ্বিতীয়ত, ঔপনিবেশিক সরকারের প্রতি তাদের আনুগত্যের ভাব সৃষ্টি করা এবং এভাবে মুসলমানদের প্রতি ইংরেজদের সন্দেহ ও অনীহা দূর করা। তিনি শাসক শ্রেণীর সঙ্গে যে কোনো ধরনের সংঘর্ষ পরিহারের জন্য মুসলমানদের আহ্বান জানান। তিনি জৌনপুরের মাওলানা কেরামত আলীর মাধ্যমে ঘোষণা করেন যে, ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারত বর্ষ ‘দারুণ হারব’ নয় বরং ‘দারুল ইসলাম। এভাবে উনিশ শতকে মুসলমানদের প্রধান রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন।
বাংলার মুসলমানদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য তিনি ১৮৬৩ সালে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এই সালে তিনি কলকাতায় মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। এ সোসাইটির লক্ষ্য ছিল আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের স্বপক্ষে জনমত গড়ে তোলা এবং শিক্ষিত মুসলমান হিন্দু ও ইংরেজদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে পারস্পরিক কল্যাণ নিশ্চিত কথা। তাঁর প্রচেষ্ঠায় কলকাতা মাদ্রাসায় ইস্ট-ফার্সি বিভাগ খোলা হয় এবং সেখানে উর্দু ও বাংলা ভাষা শিক্ষাদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তাঁরই চেষ্টার ফলে মহসীন ফান্ডের টাকা মুসলমানদের শিক্ষার কাজে সংরক্ষিত করা হয়। রাজশাহী সরকারী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল।
সম্মাননা
তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ১৮৭৭ সালে তাকে ‘খান বাহাদুর’ ও ১৮৮০ সালে ‘নওয়াব’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৮৮৩ সালে তিনি 'সি.আই.' এবং ১৮৮৭ সালে উচ্চতর সম্মানের প্রতীক ‘নওয়াব বাহাদুর’ খেতাবে ভূষিত হন।
তথ্যসূত্র
- "নওয়াব আবদুল লতিফ - bdbiography.com"। bdbiography.com। ৫ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৬।