তরাইনের যুদ্ধ

তরাইনের যুদ্ধ ১১৯১ ও ১১৯২ সালে বর্তমান হরিয়ানার থানেশ্বরের নিকটে তরাইন নামক শহরের নিকটে সংঘটিত হয়। এই স্থান দিল্লি থেকে ১৫০ কিলোমিটার (৯৩ মা) উত্তরে অবস্থিত। মুহাম্মদ ঘুরির নেতৃত্বাধীন ঘুরি বাহিনী ও পৃথ্বীরাজ চৌহানের নেতৃত্বে চৌহান রাজপুত বাহিনীর মধ্যে এই যুদ্ধগুলো সংঘটিত হয়।[1]

তরাইনের যুদ্ধ
অবস্থানহরিয়ানা

প্রথম যুদ্ধ

তরাইনের প্রথম যুদ্ধ
তারিখ১১৯১
অবস্থানথানেশ্বরের নিকটে
ফলাফল চৌহান রাজপুতদের বিজয়
অধিকৃত
এলাকার
পরিবর্তন
পৃথ্বীরাজ ভাটিন্ডার দুর্গ পুনরায় অধিকার করেন
যুধ্যমান পক্ষ
ঘুরি সাম্রাজ্য চৌহান রাজপুত
সেনাধিপতি
মুহাম্মদ ঘুরি পৃথ্বীরাজ চৌহান
শক্তি
অজ্ঞাত[2] অজ্ঞাত, তবে মুহাম্মদ ঘুরির চেয়ে বহুগুণে বেশি ছিল বলে জানা যায়[2]

মুহাম্মদ ঘুরি ১১৯১ সালে পাঞ্জাবের ভাটিন্ডা দুর্গ জয় করেন। এই স্থান ছিল পৃথ্বীরাজ চৌহানের সীমান্ত এলাকা।[1] পৃথ্বীরাজ ভাটিন্ডার দিকে অগ্রসর হয়ে তরাইন নামক স্থানে থানেশ্বরের নিকটে প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হন। ঘুরি বাহিনীর অশ্বারোহীদের প্রতিপক্ষের মধ্যভাগের দিকে তীর নিক্ষেপের মাধ্যমে লড়াই শুরু হয়। পৃথ্বীরাজের বাহিনী তিন দিক থেকে পাল্টা আক্রমণ করে এবং যুদ্ধে আধিপত্য স্থাপন করে। ফলে ঘুরিরা পিছিয়ে যায়। পৃথ্বীরাজের ভাই গোবিন্দ তাইয়ের সাথে ব্যক্তিগত লড়াইয়ে মুহাম্মদ ঘুরি আহত হয়েছিলেন।[1] এই যুদ্ধে পৃথ্বীরাজ ঘুরিদের প্রতিরোধ করতে সক্ষম হন।

দ্বিতীয় যুদ্ধ

তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ
তারিখ১১৯২
অবস্থানথানেশ্বরের নিকটে
ফলাফল ঘুরিদের বিজয়
অধিকৃত
এলাকার
পরিবর্তন
মুহাম্মদ ঘুরি বিহার প্রদেশ জয় করেন
যুধ্যমান পক্ষ
ঘুরি সাম্রাজ্য চৌহান রাজপুত
সেনাধিপতি
মুহাম্মদ ঘুরি পৃথ্বীরাজ চৌহান
শক্তি
১,২০,০০০[3] ৩,০০,০০০[3]
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
পৃথ্বীরাজ চৌহান(মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত)

গজনি ফিরে আসার পর মুহাম্মদ ঘুরি পাল্টা আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। লাহোর পৌছার পর তিনি পৃথ্বীরাজের কাছে আনুগত্য প্রকাশের আহ্বান জানিয়ে দূত পাঠান। পৃথ্বীরাজ এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন। পৃথ্বীরাজ এরপর অন্যান্য রাজপুত নেতাদেরকে তার পাশে দাড়নোর আহ্বান জানান।

সেনা সংখ্যা

ইতিহাসবিদ ফিরিশতার মতে রাজপুত বাহিনীতে ৩,০০০ হাতি, ৩,০০,০০০ অশ্বারোহী ও পদাতিক সৈনিক ছিল। তবে এই সংখ্যা সঠিক সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি মনে করা হয়।[3] মিনহাজ-ই-সিরাজ লিখেছেন যে মুহাম্মদ ঘুরির বাহিনীতে ১,২০,০০০ সশস্ত্র সৈনিক ছিল।[3]

যুদ্ধ

মিত্ররা এসে উপস্থিত না হওয়ায় পৃথ্বীরাজ আরো কিছু সময় আশা করছিলেন। এই সংবাদ পাওয়ার পর মুহাম্মদ ঘুরি সন্ধি প্রস্তাব দিয়ে পৃথ্বিরাজকে চিঠি পাঠান। ভোর শুরু হওয়ার পূর্বে ঘুরি বাহিনী রাজপুতদের উপর আক্রমণ শুরু করে। মুহাম্মদ ঘুরি তার বাহিনীকে পাঁচটি ইউনিটে বিভক্ত করেন। চারটি ইউনিট রাজপুত বাহিনীর পার্শ্বভাগ ও পশ্চাতভাগ আক্রমণ করে।[1] তার পার্শ্বভাগের আক্রমণগুলো ব্যর্থ হয় তবে লড়াই চলতে থাকে।[1] রাজপুতদের সারি ভেঙে ফেলার জন্য মুহাম্মদ ঘুরি তার পঞ্চম ইউনিটকে পালানোর ভান করার আদেশ দেন।[1] রাজপুতরা পিছু হটা ইউনিটকে আক্রমণ করে। এর ফলে পৃথ্বীরাজের বাহিনীর স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়ে যায়।[1] এসময় পার্শ্বভাগের আক্রমণের পাশাপাশি ঘুরিদের ১২,০০০ অশ্বারোহী আক্রমণ শুরু করে। এর ফলে রাজপুতরা পরাজিত হয়। পৃথ্বীরাজকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।[1]

পরবর্তী অবস্থা

মুহাম্মদ ঘুরির এই বিজয় ফলাফল নির্ধা‌রণী ছিল। ১১৯৩ সালে তিনি বিহার প্রদেশ জয় করে নেন।[1] ১২০২ সালে তার বাহিনী বাংলা জয় করে ভারত বিজয় সম্পন্ন করে[1]

আরও দেখুন

  • তৃতীয় পৃথ্বীরাজ
  • রাজস্থানের ঐতিহাসিক যুদ্ধসমূহ

তথ্যসূত্র

  1. A Global Chronology of Conflict: From the Ancient World to the Modern Middle East (ইংরেজি ভাষায়), Vol. I, ed. Spencer C. Tucker, (ABC-CLIO, 2010), ২৬৩।
  2. Paul K. Davis, 100 Decisive Battles: From Ancient Times to the Present (ইংরেজি ভাষায়), (অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৯৯), ১৩৩।
  3. Satish Chandra, Medieval India: From Sultanat to the Mughals (1206-1526) (ইংরেজি ভাষায়), (হর-আনন্দ পাবলিকেশন্স, ২০০৬), ২৫।

গ্রন্থপঞ্জি

  • Satish Chandra, Medieval India: From Sultanat to the Mughals (1206-1526) (ইংরেজি ভাষায়), হর-আনন্দ পাবলিকেশন্স, ২০০৬।
  • Paul K. Davis, 100 Decisive Battles: From Ancient Times to the Present (ইংরেজি ভাষায়), অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৯৯।
  • A Global Chronology of Conflict: From the Ancient World to the Modern Middle East (ইংরেজি ভাষায়), Vol. I, ed. Spencer C. Tucker, ABC-CLIO, 2010.
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.