ডিমেনশিয়া

ডিমেনশিয়া (ল্যাটিন শব্দ dementare, যার অর্থ পাগল করে দেয়া-হতে উদ্ভূত) বা স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তির বুদ্ধি, স্মৃতি ও ব্যক্তিত্ব লোপ পায় এবং রোগ ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে[1][2]। সাধারণত, প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা এ রোগে আক্রান্ত হয় এবং হঠাৎ করেই অনেক কিছুই মনে করতে পারেন না। ফলে তার আচরণে কিছুটা অস্বাভাবিকতা লক্ষিত হয়। মস্তিষ্কের কোষ সংখ্যা (নিউরন) বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্দিষ্ট হারে কমতে থাকে। বয়সের সঙ্গে শারীরিক রোগব্যাধি মস্তিষ্কের ক্ষতি করে যদি স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ভন্ডুল করে দেয়, একে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ডিমেনশিয়া বলে। ডিমেনশিয়ার সবচাইতে প্রচলিত রূপ হল আলঝেইমার রোগ (৭৫%)[2]

ডিমেনশিয়া
স্বাভাবিক মস্তিস্কের (বামে) সাথে আলঝেইমার আক্রান্ত মস্তিস্কের (ডানে) তুলনা
শ্রেণীবিভাগ এবং বহিঃস্থ সম্পদ
বিশিষ্টতামনোরোগবিদ্যা, স্নায়ুবিদ্যা[*]
আইসিডি-১০F০০-F০৭
আইসিডি-৯-সিএম২৯০-২৯৪
ডিজিসেসডিবি২৯২৮৩
মেডলাইনপ্লাস০০০৭৩৯
পেশেন্ট ইউকেডিমেনশিয়া
মেএসএইচD০০৩৭০৪ (ইংরেজি)

রোগের কারণ

বিভিন্ন রোগের কারনে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগ হতে পারে, যেমন, এইডস, দীর্ঘমেয়াদী ধূমপান ও মদ্যপান, আলঝেইমার, ভিটামিন বি'এর অভাব, কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়া, মস্তিষ্কের রোগ এবং অনৈতিক জীবনযাপন ইত্যাদি[3]

রোগের লক্ষণ

ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক বিস্তার খুবই ধীরে হয়, এমনকি মাস কিংবা বছর ধরেও হতে পারে। ভুলে যাওয়ার কারণে রোগী হতাশা, নিদ্রাহীনতা ও অন্যান্য সমস্যায় ভোগে এবং আস্তে আস্তে অন্যের ওপর নির্ভ্রশীল হয়ে পড়ে[3]

রোগের হার

মূলত প্রবীণ ব্যক্তিরাই এ রোগে ভোগেন। ৬০ বছরের কম রোগীদের হার ০.১ শতাংশ, ৬০-৬৪ বছর বয়সী রোগীদের মধ্যে এ রোগের হার ১ শতাংশ, ৬৫-৮৪ বছর বয়সী রোগীদের মধ্যে এ রোগের হার ৩ থেকে ১১ শতাংশ এবং ৮৫ বছরের বেশি বয়সী রোগীদের মধ্যে এ রোগের হার ২৫ থেকে ৪৭ শতাংশ[1]

রোগের চিকিৎসা

কিছু কিছু ওষুধ যেমন donepezil, nemantidine, এবং tacrine রোগীর চিন্তাশীলতা ও শনাক্তকরণ ক্ষমতা বাড়ায়। এসব ওষুধ ডিমেনশিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়[3]। ডিমেনশিয়া রোগটি জটিল হয়ে গেলে রোগীর সেরে ওঠার আর কোনো সম্ভাবনা থাকে না।

রোগীর যত্ন

ডিমেনশিয়া রোগটি শনাক্ত হওয়ার পরপরই চিকিৎসা সেবা শুরু করা দরকার। রোগীর প্রত্যহিক জীবনের মান বাড়ানো, তাকে যথাযথ সন্মান, সঙ্গ এবং সেবা দেয়া, রোগী ও তার স্বজনদের প্রাত্যহিক কর্মতালিকার সমন্বয়- রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি-পাওয়াকে কমায়[1]

ডিমেনশিয়ার সচেতনতা

রোগটি নিয়ে মুশকিল হলো, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ভুলে যাবেন—এমনটি ধরেই নেওয়া হয়। ফলে ডিমেনশিয়া রোগটি সম্পর্কে বেশির ভাগ মানুষ সচেতন থাকেন না। এখন এমন অনেক ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে, যেগুলো সেবন করলে ডিমেনশিয়া তীব্র হওয়া রোধ করা যায়। কিন্তু বেশির ভাগ রোগী আসেন একেবারে শেষ পর্যায়ে। বিভিন্ন রোগ থেকে ডিমেনশিয়ার উৎপত্তি। তাই ধূমপান থেকে বিরত থাকা ও সুস্থ জীবনযাপন করাটা জরুরি।

ডিমেনশিয়া সচেতনতা দিবস

২০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ডিমেনশিয়া সচেতনতা দিবস। ডিমেনশিয়া সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এ সচেতনতা দিবস আয়োজিত হয়।

তথ্যসূত্র

  1. Donald Venes. Taber's Cyclopedic Medical Dictionary. 21st Edition. F. A. Davis Company, 2009. pg 599-600
  2. Solomon, Andrew E. Budson, Paul R. (২০১১)। Memory loss : a practical guide for clinicians। [Edinburgh?]: Elsevier Saunders। আইএসবিএন 9781416035978।
  3. Donald Venes. Taber's Cyclopedic Medical Dictionary. 21st Edition. F. A. Davis Company, 2009. pg 599

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.