অতিপ্রতিক্রিয়া (অ্যালার্জি)

অতিপ্রতিক্রিয়া বা ইংরেজি পরিভাষায় অ্যালার্জি (ইংরেজি: Allergy) বলতে পরিবেশে অবস্থিত কতগুলি বস্তুর উপস্থিতিতে কিছু কিছু ব্যক্তির দেহের প্রতিরক্ষাতন্ত্রের অতিসংবেদনশীলতার কারণে সৃষ্ট কতগুলি তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়াকে বুঝায়। এই বস্তুগুলি অধিকাংশ ব্যক্তির ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো সমস্যা তৈরি করে না। এই বিরূপ প্রতিক্রিয়াগুলিকে একত্রে "অতিপ্রতিক্রিয়াজনিত ব্যাধি" বলে।[12] অতিপ্রতিক্রিয়ার উদাহরণ হিসেবে হে জ্বর, খাদ্যে অতিপ্রতিক্রিয়া, অতিপ্রতিক্রিয়াজনিত ত্বকপ্রদাহ (এটপিক ডার্মাটাইটিস), অতিপ্রতিক্রিয়াজনিত হাঁপানি ও বিষম অতিপ্রতিক্রিয়া (অ্যানাফাইল্যাক্সিস) উল্লেখযোগ্য। [13] লক্ষণগুলো হলো চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানিযুক্ত ফুসকুড়ি, রাইনোরিয়া বা নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়া, শ্বাসকষ্ট অথবা ফুলে যাওয়া।[14] খাবার সহ্য না হওয়া ও খাদ্য বিষক্রিয়া দুটি আলাদা বিষয়।[4][15]

অতিপ্রতিক্রিয়া / অ্যালার্জি
রক্তস্ফোট, লাল ফুসকুঁড়ি বা ছুলি অতিপ্রতিক্রিয়ার একটি সাধারণ উপসর্গ
বিশেষায়িত ক্ষেত্রঅতিসংবেদনশীলতা এবং অনাক্রম্যবিজ্ঞান
উপসর্গলাল চোখ, চুলকানিসহ লাল ফুসকঁড়ি, নাক থেকে পানি পড়া, শ্বাসাল্পতা, ফুলে যাওয়া, হাঁচি[1]
প্রকারভেদহে জ্বর, খাদ্যে অতিপ্রতিক্রিয়া, অতিপ্রতিক্রিয়াজনিত ত্বকপ্রদাহ, অতিপ্রতিক্রিয়াজনিত হাঁপানি, বিষম অতিপ্রতিক্রিয়া[2]
কারণসমূহজিনগত এবং পরিবেশগত কারণ[3]
রোগনির্ণয়উপসর্গের উপর ভিত্তি করে, ত্বক-খোঁচানো পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা[4]
একই উপসর্গের ভিন্ন রোগখাদ্যে অসহিষ্ণুতা, খাদ্যে বিষক্রিয়া[5]
প্রতিরোধসম্ভাব্য অতিপ্রতিক্রিয়া-উৎপাদকদের সাথে ছোটবেলায় সংস্পর্শে আসা[6]
চিকিৎসাজ্ঞাত অতিপ্রতিক্রিয়া-উৎপাদকদের এড়িয়ে চলা, ঔষধ, অতিপ্রতিক্রিয়া-উৎপাদক অনাক্রম্য চিকিৎসা[7]
ঔষুধস্টেরয়েডসমূহ, অ্যান্টিহিস্টামিন, এপিনেফ্রিন, মাস্তুল কোষ স্থিতিকারক, অ্যান্টিলিউকোট্রিন[7][8][9][10]
ব্যাপকতার হারসাধারণ[11]

কারণ ও রোগনির্ণয়

পরাগ বা পুষ্পরেণু ও কিছু খাবার খুব সাধারণ কিছু অতিপ্রতিক্রিয়া-উৎপাদক (Allergen অ্যালার্জেন)। ধাতবসহ অন্যান্য বস্তুও সমস্যা তৈরি করতে পারে।[12] খাবার, কীটপতঙ্গের হুল ও ঔষধ তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির জন্য দায়ী। বংশগত ও পরিবেশগত কারণে এ সকল বিক্রিয়া হয়ে থাকে।[3] শরীরের অনাক্রম্যতন্ত্রের এক ধরনের প্রতিরক্ষিকা (অ্যান্টিবডি) ইমিউনোগ্লোবিউলিন-ই (IgE) এক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে। এর এক অংশ অতিপ্রতিক্রিয়া-উৎপাদক বস্তুর সাথে এবং অপর অংশ মাস্ট কোষ বা ক্ষারাকর্ষী শ্বেতকণিকার (বেসোফিল) গ্রাহকের (রিসেপ্টর) সাথে বন্ধন তৈরি করে, যার ফলে উক্ত কোষসমূহ থেকে প্রদাহ সৃষ্টিকারী কতকগুলো রাসায়নিক পদার্থ (যেমন হিস্টামিন) বের হয়।[16] রোগনির্ণয় মূলত রোগের ইতিহাসের উপর নির্ভরশীল। মাঝে মাঝে চর্ম ও রক্তের কিছু পরীক্ষাও করা হয়।[4] কোনো ব্যক্তির কোনো নির্দিষ্ট বস্তুর প্রতি সংবেদনশীলতার পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক হলেও ঐ ব্যক্তির যে উক্ত বস্তুর প্রতি তাৎপর্যপূর্ণ অতিপ্রতিক্রিয়া রয়েছে তা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায় না।[17]

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

অল্পবয়স থেকেই সম্ভাব্য অতিপ্রতিক্রিয়া-উৎপাদক বস্তুর (অ্যালার্জেন) সংস্পর্শে থাকাকে উপকারী মনে করা হয়।[6] অতিপ্রতিক্রিয়া বা অ্যালার্জি চিকিৎসার মূল দিক হলো যে বস্তুটি অতিপ্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী তা থেকে দূরে থাকা। কর্টিকোস্টেরয়েড ও অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধসমূহ অতিপ্রতিক্রিয়া থেকে আরোগ্য লাভের জন্য ব্যবহার করা হয়।[7] খুব তীব্র প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে অ্যাড্রেনালিন সূচিপ্রয়োগ করা হয়।[8] এছাড়া কোনও কোনও ক্ষেত্রে অতিপ্রতিক্রিয়ার চিকিৎসায় অতিপ্রতিক্রিয়া-উৎপাদক অনাক্রম্য চিকিৎসা (Allergen immunotherapy অ্যালার্জেন ইমিউনোথেরাপি) ব্যবহার করা হয়।খাদ্যে অতিপ্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে অনাক্রম্য চিকিৎসার (ইমিউনোথেরাপি) কার্যকারিতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।[7]

অনেক ব্যক্তিই অ্যালার্জি বা অতিপ্রতিক্রিয়া সমস্যায় ভুগে থাকেন।[18] উন্নত বিশ্বে প্রায় ২০% ব্যক্তি অতিপ্রতিক্রিয়াজনিত নাসিকাপ্রদাহ (রাইনাইটিস) বা সর্দিতে ভুগছেন। [19] প্রায় ৬% ব্যক্তির অন্তত একটি খাদ্যে অতিপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।[4] ২০% ক্ষেত্রে অ্যাটপিক ডার্মাটাইটিস হয়।[6][20] দেশভেদে প্রায় ১-১৮% ব্যক্তি অ্যাজমা বা হাঁপানিতে আক্রান্ত। [21][22] ০.০৫-২% ক্ষেত্রে বিষম অতিপ্রতিক্রিয়া (অ্যানাফিল্যাক্সিস) হয়।[23] অতিপ্রতিক্রিয়ায় ভুক্তভোগী রোগীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে।[8][24] ১৯০৬ সালে "allergy" শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন Clemens von Pirquet। [3]

তথ্যসূত্র

  1. Kay AB (২০০০)। "Overview of 'allergy and allergic diseases: with a view to the future'"। Br. Med. Bull.56 (4): 843–64। doi:10.1258/0007142001903481। PMID 11359624
  2. National Institute of Allergy and Infectious Diseases (জুলাই ২০১২)। "Food Allergy An Overview" (pdf)
  3. Sicherer, SH.; Sampson, HA. (ফেব্রু ২০১৪)। "Food allergy: Epidemiology, pathogenesis, diagnosis, and treatment"। J Allergy Clin Immunol133 (2): 291–307; quiz 308। doi:10.1016/j.jaci.2013.11.020। PMID 24388012
  4. "Allergen Immunotherapy"। এপ্রিল ২২, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০১৫
  5. Simons FE (অক্টোবর ২০০৯)। "Anaphylaxis: Recent advances in assessment and treatment" (PDF)The Journal of Allergy and Clinical Immunology124 (4): 625–36; quiz 637–8। doi:10.1016/j.jaci.2009.08.025। PMID 19815109
  6. Finn, DF; Walsh, JJ (সেপ্টেম্বর ২০১৩)। "Twenty-first century mast cell stabilizers."। British Journal of Pharmacology170 (1): 23–37। doi:10.1111/bph.12138। PMID 23441583
  7. May, JR; Dolen, WK (ডিসেম্বর ২০১৭)। "Management of Allergic Rhinitis: A Review for the Community Pharmacist."। Clinical therapeutics39 (12): 2410–2419। doi:10.1016/j.clinthera.2017.10.006। PMID 29079387
  8. McConnell, Thomas H. (২০০৭)। The Nature of Disease: Pathology for the Health Professions। Baltimore, Mar.: Lippincott Williams & Wilkins। পৃষ্ঠা 159। আইএসবিএন 978-0-7817-5317-3।
  9. "Types of Allergic Diseases"NIAID। মে ২৯, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১৫
  10. "Environmental Allergies: Symptoms"NIAID। এপ্রিল ২২, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১৫
  11. Bahna SL (ডিসে ২০০২)। "Cow's milk allergy versus cow milk intolerance"। Annals of Allergy, Asthma & Immunology89 (6 Suppl 1): 56–60। doi:10.1016/S1081-1206(10)62124-2। PMID 12487206
  12. "How Does an Allergic Response Work?"NIAID। এপ্রিল ২১, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৫
  13. Cox L, Williams B, Sicherer S, Oppenheimer J, Sher L, Hamilton R, Golden D (ডিসেম্বর ২০০৮)। "Pearls and pitfalls of allergy diagnostic testing: report from the American College of Allergy, Asthma and Immunology/American Academy of Allergy, Asthma and Immunology Specific IgE Test Task Force"। Annals of Allergy, Asthma & Immunology101 (6): 580–92। doi:10.1016/S1081-1206(10)60220-7। PMID 19119701
  14. "Allergic Diseases"NIAID। মে ২১, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৫
  15. Wheatley, LM; Togias, A (২৯ জানুয়ারি ২০১৫)। "Clinical practice. Allergic rhinitis"। The New England Journal of Medicine372 (5): 456–63। doi:10.1056/NEJMcp1412282। PMID 25629743
  16. Thomsen, SF (২০১৪)। "Atopic dermatitis: natural history, diagnosis, and treatment"। ISRN allergy: 354250। doi:10.1155/2014/354250। PMID 25006501
  17. "Global Strategy for Asthma Management and Prevention: Updated 2015" (PDF)। Global Initiative for Asthma। ২০১৫। পৃষ্ঠা 2। Archived from the original on ১৭ অক্টোবর ২০১৫।
  18. "Global Strategy for Asthma Management and Prevention" (PDF)। Global Initiative for Asthma। ২০১১। পৃষ্ঠা 2–5। জুলাই ২০১৬ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা।
  19. Leslie C. Grammer (২০১২)। Patterson's Allergic Diseases (7 সংস্করণ)। আইএসবিএন 978-1-4511-4863-3।
  20. Anandan C, Nurmatov U, van Schayck OC, Sheikh A (ফেব্রুয়ারি ২০১০)। "Is the prevalence of asthma declining? Systematic review of epidemiological studies"। Allergy65 (2): 152–67। doi:10.1111/j.1398-9995.2009.02244.x। PMID 19912154

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:Allergic conditions টেমপ্লেট:Consequences of external causes টেমপ্লেট:Hypersensitivity and autoimmune diseases

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.