জে কে রাউলিং
জোয়ানে "জো" রাউলিং ওবিই (জন্ম: জুলাই ৩১ ১৯৬৫[1]) একজন সফলতম ইংরেজ কল্পকাহিনী লেখিকা যিনি জে. কে. রাউলিং ছদ্ম নামে লেখালেখি করেন।[2] রাউলিং জনপ্রিয় কল্পকাহিনী হ্যারি পটার সিরিজের রচয়িতা, যা তাকে বিশ্বজুড়ে সম্মান ও জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। এ সাহিত্য কর্মের জন্য তিনি একাধিক পুরস্কার জিতেছেন। সারা বিশ্বে হ্যারি পটার সিরিজের ৪০০ মিলিয়নেরও অধিক কপি বিক্রি হয়েছে।[3][4]
জে. কে. রাউলিং | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | জুলাই ৩১ ১৯৬৫ (৫৩ বছর) ইয়েট, ব্রিস্টল, ইংল্যান্ড |
পেশা | ঔপন্যাসিক |
ওয়েবসাইট | |
http://www.jkrowling.com |
২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফোর্বস পত্রিকা তার সম্পত্তির পরিমাণ £৫৭৬ মিলিয়ন (১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কিছু বেশি) বলে তথ্য প্রকাশ করেছে, যা তাকে বই-লিখে বড়লোক হওয়া প্রথম বিলিয়নিয়ার (আমেরিকান ডলারে) হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।[5] ২০০৬ সালে ফোর্বস পত্রিকা তাকে অপরাহ উইনফ্রের পর পৃথিবীর দ্বিতীয় সেরা মহিলা ধনী হিসেবে তথ্য প্রকাশ করেছে।[6]
জন্ম ও পরিবার
১৯৬৫ সালের ৩১ জুলাই ইংল্যান্ডের গ্লুসেস্টারশায়ারের ইয়েটে শহরে জন্মগ্রহণ করেন জে.কে. রাউলিং। তার বাবার নাম পিটার এবং মায়ের নাম অ্যানি। তার বাবা ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার এবং মা ছিলেন গবেষণাগারের টেকনিশিয়ান। রাউলিং এর পুরো নাম জোয়ান ক্যাথলিন রাউলিং। রাউলিং এর ছোট আরও এক বোন রয়েছে। ছোটবেলাটা কাটে গ্রাম্য পরিবেশে।
লেখালেখির হাতেখড়ি
রাউলিং এর বাবা-মা দুজনই ছিলেন পেশাজীবী। তাই রাউলিং ও তার বোনকে একাকীই সময় কাটাতো হতো। তাই তার বাবা-মা তাদের দুই বোনকে মজার মজার সব গল্পের বই কিনে দিতেন। এরপর সেই সময় থেকেই মজার মজার গল্প লিখতেন তিনি, আর সেই গল্পগুলো লেখা শুরু করেছিলেন তার বোনকে পড়ে শোনানোর জন্য। এভাবেই তার মনের মধ্যে বাসা বাঁধে নামকরা লেখিকা হওয়ার স্বপ্ন। তার স্বপ্ন ছিল – তার লেখা বই দোকানে আসা মাত্র পাঠকরা লুফে নিবে। এক সময় তার সেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।
হ্যারি পটার সিরিজ
১৯৯০ সালে জে.কে. রাউলিং এর মাথায় আসে ‘হ্যারি পটার’ গল্পের ধারণা। একদিন তিনি ম্যানচেষ্টার থেকে লন্ডনে যাচ্ছিলেন পাতাল ট্রেনে চড়ে। ট্রেনটিতে যাত্রীদের প্রচন্ড ভিড় ছিল। সব মিলিয়ে অস্বস্তিকর এক অবস্থা বিরাজ করছে পুরো ট্রেনজুড়ে। এই ট্রেনেই দীর্ঘ ৪ ঘন্টা অতিবাহিত করতে হয়েছে জে.কে. রাউলিংকে। এই অবস্থাতেই তিনি চিন্তা করছিলেন নতুন কোনো একটি লেখা নিয়ে। হঠাৎই তার স্বপ্নের মনের জানালায় কড়া নাড়ে এক এতিম ছেলে। যেই ছেলেটি পালিত হচ্ছে তার এক ফুফু ও ফুফার কাছে। যারা দুজনই খুব নিচুমনের অধিকারী। ছেলেটি শত অন্যায় অত্যাচার সহ্য করলেও সে জানে না যে, তার মধ্যে রয়েছে এক মায়াবী জাদুকরী ক্ষমতা। একই সাথে তিনি তার মনের ক্যানভাসে একে ফেলেন সেই এতিম ছেলেটির মুখাবয়ব। মোটা ফ্রেমের চশমা পরিচিত কালো চুলের হ্যারিকে নিয়ে ওই সময় থেকেই লেখা শুরু করেন জে.কে. রাউলিং। অবশেষে ১৯৯৫ সালে শেষ করেন হ্যারি পটার সিরিজের ১ম গল্পটি। ২০০৭ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সাতটি বইয়ের প্রথম ছয়টি বই সারা পৃথিবীতে ৩২৫ মিলিয়ন কপিরও বেশী বিক্রী হয়েছে এবং ৬৪টিরও অধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
প্রকাশকদের দ্বারে দ্বারে ঘোরা
হ্যারি পটার সিরিজের ১ম গল্পটি লেখা শেষ করার পর বইটি প্রকাশ করার জন্য প্রকাশকদের কাছে অনেক ঘুরতে হয়েছিল রাউলিংকে। প্রকাশকদের ধারণা ছিল বইটি তাদের ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন করবে। আটজন প্রকাশক ফিরিয়ে দেওয়ার পর ব্লুমসবারি নামের একটি প্রকাশনী ১৯৯৭ সালের ২৬ জুন হ্যারি পটার সিরিজের প্রথম বই 'হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফার্স স্টোন' প্রকাশ করে। এরপরের ইতিহাস সকলেরই জানা। একেবারে অচেনা-অজানা জে.কে. রাউলিং হয়ে যান বিশ্ববিখ্যাত। যে রাউলিংকে এর আগে তার পরিবার ও পরিচিত জনরা ছাড়া অন্য কেউ চিনতো না। বিশ্বব্যাপী হ্যারি পটার সিরিজের ৩৫ কোটি কপি বিক্রি হয়েছে। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো জে.কে. রাউলিং এর লেখা হ্যারি পটার সিরিজের বই কেনার জন্য প্রকাশিত হওয়ার আগের দিন রাত থেকে মানুষ বইয়ের দোকানের সামনে লাইন দিতো।
ছদ্মবেশী জে.কে. রাউলিং
হ্যারি পটার সিরিজের গল্প লেখার পর সারা বিশ্বজুড়েই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন রাউলিং। মাঝেমধ্যে ছদ্মনামেও লেখেন তিনি। ‘রবার্ট গালব্রেইথ’ ছদ্মনামে তিনি ‘কুকোস কলিং’ নামের একটি বই লেখেন ২০১৩ সালে। তার এই বইটি যখন প্রকাশিত হয় তখন খুব বেশি কপি বিক্রি হয় নি। কিছুদিনের মধ্যে প্রকাশ পেয়ে যায় যে, এই বইটি রাউলিং এর লেখা। ব্যাস রাতারাতি কয়েক শত থেকে ১.৫ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয় একই বই। বুঝতেই পারছেন জে.কে. রাউলিং মানেই বইয়ের ব্র্যান্ড।
পুরস্কার ও সম্মাননা
জে.কে. রাউলিং এবং হ্যারি পটার সিরিজ ফিলোসফার্স স্টোন প্রকাশের পর থেকে অনেক পুরষ্কার পেয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চারটি হুইটেকার প্লাটিনাম বুক এওয়ার্ডস (সবগুলো ২০০১ সালে), তিনটি নেসলে স্মার্টিস বুক প্রাইজ (১৯৯৭-১৯৯৯), দুটি স্কটিশ আর্টস কাউন্সিল বুক এওয়ার্ডস (১৯৯৯ ও ২০০১), উদ্বোধনী হুইটব্রেড বর্ষসেরা শিশুতোষ গ্রন্থ পুরষ্কার, (১৯৯৯), ডব্লিউ এইচ স্মিথ বর্ষসেরা বই (২০০৬)। ২০০০ সালে হ্যারি পটার এন্ড দ্য প্রজনার অব আজকাবান শ্রেষ্ঠ উপন্যাস বিভাগে হিউগো পুরষ্কারের জন্য মনীত হয় কিন্তু পায়নি। তবে ২০০১ সালে হ্যারি পটার এন্ড দ্য গবলেট অব ফায়ার বইটি উক্ত পুরষ্কার ছিনিয়ে নেয়। অন্যান্য সম্মাননার মধ্যে রয়েছে কার্নেগি মেডেলের জন্য ১৯৯৭ সালে মনোনয়ন, ১৯৯৮ সালে গার্ডিয়ান চিলড্রেন'স এওয়ার্ড পুরষ্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান, বিভিন্ন স্থানে স্মরনীয় বইয়ের তালিকায় স্থান, আমেরিকান লাইব্রেরী এসোসিয়েশন, নিউ ইয়র্ক টাইমস, শিকাগো পাবলিক লাইব্রেরী ও পাবলিশার্স উইকলি প্রভৃতিতে সম্পাদকের পছন্ধ এবং প্রস্তাবিত শ্রেষ্ঠ বই তালিকায় অবস্থান।
তথ্যসূত্র
- The Harry Potter Lexicon ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ তারিখে, The Muggle Encyclopedia ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ জুলাই ২০০৭ তারিখে - Y. Accessed 17 March 2006.
- The Harry Potter Lexicon ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ তারিখে, The Harry Potter books. Accessed 19 March 2006.
- "J. K. Rowling" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে. Accessed 23 March 2006.
- "Harry Potter - History of the Books • Hypable". Hypable.com. Retrieved 2014-02-26.
- Watson, Julie and Kellner, Tomas. "J.K. Rowling And The Billion-Dollar Empire". Forbes.com, 26 February 2004. Accessed 19 March 2006.
- OPRAH IS RICHEST FEMALE ENTERTAINER. Accessed 20 January 2007.
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিউক্তিতে নিচের বিষয় সম্পর্কে সংগৃহীত উক্তি আছে:: J. K. Rowling |
- English section of J.K. Rowling's official personal site
- English section of J.K. Rowling's official personal site (text-only version)
- J. K. Rowling on Harry Potter Wiki, an external wiki
- ইন্টারনেট স্পেকুলেটিভ ফিকশন ডাটাবেজে J. K. Rowling(ইংরেজি)
- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে J.K. Rowling (ইংরেজি)
- ইন্টারনেট বুক লিস্টে J.K. Rowling (ইংরেজি)