জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া
জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া বাংলাদেশের একটি ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া | |
---|---|
![]() | |
অবস্থান | |
পশ্চিম ষোলশহর, চট্টগ্রাম![]() বাংলাদেশ | |
তথ্য | |
ধরন | কামিল মাদ্রাসা |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৯৫৪ |
প্রতিষ্ঠাতা | আল্লামা সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি |
চেয়ারম্যান | আলহাজ্ব দিদারুল ইসলাম |
অধ্যক্ষ | মাওলানা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান |
উপাধ্যক্ষ | মাওলানা লিয়াকত আলী |
শ্রেণী | ইবতেদায়ী প্রথম থেকে কামিল (মাস্টার্স) |
শিক্ষার্থী সংখ্যা | ৬,২৪১ জন |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট |
অবস্থান
জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া চট্টগ্রাম মহানগরীর ৭নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের নাজির পাড়ায় অবস্থিত।
ইতিহাস
১৯৫৪ সালে চট্টগ্রামের ষোলশহরে সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি (রহ.) মসলকে আলা হযরতের উপর ভিত্তি রেখে এ মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় ধরে এই দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেশে এবং দেশের বাইরে বিশেষভাবে পরিচিত। প্রতিষ্ঠাতার যোগ্য উত্তরসূরী সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহ.) এর দুই সুযোগ্য সন্তান সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মা.জি.আ.) এবং সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ (মা.জি.আ.) এর পৃষ্ঠপোষকতায় জামেয়ার খ্যাতি আজ দুনিয়াব্যাপী।[1]
ব্যবস্থাপনা
আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের আওতায় মাদ্রাসা গভর্নিং বডির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় এ মাদ্রাসা পরিচালিত হয়ে আসছে। এছাড়া আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রামের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়াসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় শতাধিক দ্বীনি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়।[1]
শিক্ষকবৃন্দ
বর্তমানে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া'র অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বরত আছেন মাওলানা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান।[1]
অবকাঠামো
১৯৫৪ সালে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া’র প্রতিষ্ঠাকালে সরকারি অনুদান ও বেসরকারি সাহায্য-সহযোগিতায় মাদ্রাসার পুরাতন একাডেমিক ভবনটি নির্মিত হয় ও শিক্ষাক্রম চালু হয়। পরবর্তীতে মরহুম মুহাম্মদ তালেব আলী সওদাগর ও মরহুম ওসমান আলী সওদাগরের যৌথ অর্থায়নে 'তৈয়্যবিয়া তালেবিয়া টেকনিক্যাল সেকশন'র জন্য পুরাতন ভবনের দক্ষিণাংশের ত্রিতল ভবনটি নির্মাণ করা হয়। ১৯৮৫ সালে মরহুম সালেহ আহমদ সওদাগরের অর্থায়নে পুরাতন ভবনের উত্তরাংশের ত্রিতল ভবনটি নির্মাণ করা হয় এবং তারই অর্থায়নে ২০০৩ সালে পুণরায় মাদ্রাসার ময়দানের দক্ষিণাংশের ছয়তলা বিশিষ্ট নতুন একাডেমিক ভবনটি নির্মাণ করা হয়। এছাড়া ২০১০ সালে শেখ আহমদ সওদাগর নতুন একাডেমিক ভবনের পশ্চিমাংশে ছয়তলা বিশিষ্ট হেফজখানা ভবন ও ২০১১ সালে এসইএসডিপি'র অধীনে মডেল মাদ্রাসার আওতায় মাদ্রাসার উত্তরদিকে পুরাতন ভবন সংলগ্ন পাঁচতলা বিশিষ্ট নতুন একাডেমিক অনার্স ভবনটি নির্মাণ করা হয়। সর্বশেষ ২০১৩ সালে পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান সুফী মুহাম্মদ মিজানুর রহমানের অর্থায়নে মাদ্রাসা ময়দানের উত্তরদিকে ৩৬ কক্ষ বিশিষ্ট আটতলার নতুন একাডেমিক ভবনটি নির্মিত হয়।[1]
শিক্ষা কার্যক্রম
মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জমিয়তুল মোদারেসিন এর দাবির প্রেক্ষিতে সরকার ফাজিল স্তরে অনার্স কোর্স চালুর অনুমোদন দেয়ার পর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া বরাবর মাদ্রাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ পাঁচটি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালুর আবেদন করেন। ২০১০ সালের ২০ মার্চ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মুহাম্মদ আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন এবং মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার শৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশ ও অধ্যক্ষের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের সন্তোষ প্রকাশ করে চট্টগ্রামে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়াকে দুইটি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালুর অনুমোদন দেন। মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, শিক্ষকমণ্ডলীর পাঠদান, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার গুণগতমান বৃদ্ধি এবং প্রশাসনিক শৃঙ্খলাসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়াকে 'মডেল মাদ্রাসা' হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। বর্তমানে এ মাদ্রাসায় ইবতেদায়ী প্রথম শ্রেণী থেকে ফাজিল সম্মানসহ কামিল কোর্সে বিপুল শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। পাশাপাশি হিফজ বিভাগ চালু রয়েছে। এছাড়া বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এ যুগে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মডেল মাদ্রাসা হিসেবে ২০১৪ সাল থেকে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ায় দাখিল পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগ চালু করা হয়েছে। সেই সাথে এটি মডেল মাদ্রাসার আওতাধীন হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক শাখা উন্নয়ন প্রকল্পে ২০টি কম্পিউটার প্রদান করে। পরে চট্টগ্রামের খান জাহান আলী কম্পিউটার্স লিমিটেড এর সহযোগিতায় মাদ্রাসার আইসিটি সেন্টার আরো সমৃদ্ধ হয়। আনজুমান ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছায় ও অধ্যক্ষের প্রচেষ্টায় মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ষষ্ঠ তলায় রয়েছে বিশাল লাইব্রেরি। এতে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত গ্রন্থ, তাফসীর, ফিক্বহ ও ফতওয়ার দুর্লভ কিতাব, দুষ্প্রাপ্য রেফারেন্স বুক ও বিভিন্ন জার্নাল সংগৃহীত আছে।[1]
অর্জন
আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট পরিচালিত জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখায় ২০০১ সালে জাতীয় পর্যায়ে সরকারি শিক্ষা জরিপে 'শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান' এবং তৎকালীন অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ জালালুদ্দীন আল-ক্বাদেরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) 'শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ' ও মাওলানা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান 'শ্রেষ্ঠ শ্রেণী শিক্ষক' হিসেবে নির্বাচিত হন। সেই সাথে ২০০৪ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ জালালুদ্দীন আল-ক্বাদেরী 'শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ' ও মাওলানা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান 'শ্রেষ্ঠ শ্রেণী শিক্ষক' হিসেবে নির্বাচিত হয়ে সম্মাননা সনদ ও স্বর্ণপদক লাভ করেন। এর মাধ্যমে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া'র দেশ-বিদেশে গৌরব ও খ্যাতি বৃদ্ধি পায়।[1]
কৃতিত্ব ও ফলাফল
বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০১৭ সালের আলিম পরীক্ষায় জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসা ধারাবাহিকভাবে সাফল্য অর্জন করেছে। এ মাদ্রাসায় ৩৫৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬১ জন এ+, ২৫০ জন এ, ৩৯ জন এ-, ৬ জন বি এবং ২ জন সি গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। পাশের হার শতভাগ। আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় সুপরিচালিত এ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাছাইকৃত ৩০টি মডেল মাদ্রাসার মধ্যে প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসাবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি ও স্বর্ণ পদক প্রাপ্ত হয়েছে।[2] এছাড়া জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া থেকে ইবতেদায়ী, দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল শিক্ষার্থীরা বোর্ড পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণের জন্য সরকারি শিক্ষা বৃত্তিসহ বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষা-সংস্কৃতি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ট্রাস্ট কর্তৃক প্রতিযোগিতায় মেধা ও সাধারণ বৃত্তি লাভ করে আসছে।[1]
সনদ স্বীকৃতি এবং স্তর ভিত্তিক এমপিও ভুক্তির তারিখ
দাখিল, আলিম ও ফাযিল সনদের স্বীকৃতি পায় ১৯৬২ সালের ১ জুন এবং কামিল বা মাস্টার্স এর সনদ স্বীকৃতি পায় ১৯৭১ সালের ১ জুলাই।
দাখিল, আলিম, ফাযিল ও কামিল সব স্তরের এমপিও ভুক্ত হয় ১৯৮০ সালের ১ জানুয়ারি।
কৃতি শিক্ষার্থী
- অধ্যক্ষ আল্লামা জালাল উদ্দিন আল কাদেরী (রহঃ)
- আল্লামা এম. এ. মান্নান; চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট
- মাওলানা এম এ মতিন
- মাওলানা মুফতি অসিউর রাহমান আল-কাদেরী
- মাওলানা আবুল কাশেম মুহাম্মদ ফজলুল হক
আরো দেখুন
- কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলিয়া মাদ্রাসা
- তাহেরিয়া সাবেরিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা
- মাদ্রাসা-এ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাজিল
- মাদ্রাসা-এ-গাউসিয়া তাহেরিয়া সুন্নিয়া
- মাদ্রাসা-এ-তৈয়্যবিয়া অদুদিয়া সুন্নিয়া
- তৈয়্যবিয়া তাহেরিয়া সুলতান মোস্তফা কমপ্লেক্স দাখিল মাদ্রাসা
- মাদ্রাসা-এ-তৈয়্যবিয়া তাহেরিয়া সুন্নিয়া আলিম
তথ্যসূত্র
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৬ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৭।
- http://www.dainikazadi.org/details2.php?news_id=2663&table=july2017&date=2017-07-24&page_id=6&view=1&instant_status=%5B%5D