চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল এন্ড কলেজ

চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল বাংলাদেশের একটি সরকারি বিদ্যালয়। এটি ১৮৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্কুলটি দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর চট্টগ্রাম এর আইস ফ্যাক্টরী রোডে অবস্থিত। এটি সদরঘাট থানার অন্তর্গত।

চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল এন্ড কলেজ
অবস্থান
আইস ফ্যাক্টরী রোড,সদরঘাট, চট্টগ্রাম
বাংলাদেশ
স্থানাঙ্ক২২.৩৩৩০১৭° উত্তর ৯১.৮২৪৯৬৯° পূর্ব / 22.333017; 91.824969
তথ্য
ধরনসরকারী
প্রতিষ্ঠাকাল১৮৩৬
প্রধান শিক্ষকমোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী
শ্রেণীশ্রেণী ৫-১২
শিক্ষার্থী সংখ্যাপ্রায় ২৩২০
ক্যাম্পাসের আকার১০.৮৮ একর

ইতিহাস

বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ১৮৩৬ সালে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় এটির কার্যক্রম পরিচালিত হত বর্তমান চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে। সময়ের সাথে সাথে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ায় ১৮৬৯ সালে এখানে কলেজ শাখা খোলা হয়। তখন এ দু'টি শাখার নাম একত্রে রাখা হয় চট্টগ্রাম স্কুল এন্ড কলেজ। ক্রমান্বয়ে কলেজ শাখার ছাত্র বৃদ্ধির ফলে জায়গা সংকুলানের জন্য ১৯২৫ সালে স্কুল শাখাটিকে "চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল" নামকরণ করে একতলা লাল বিল্ডিং তৈরি করে বর্তমান জায়গায় স্থানান্তর করা হয়। কলেজ শাখাটি "চট্টগ্রাম কলেজ" নামধারণ করে ঐ জায়গায় থেকে যায়।তবে ১৯২৫ সালের পূর্বে কিছু কাল স্কুলটির নাম ছিল চট্টগ্রাম জিলা স্কুল[1]

একাডেমিক কার্যক্রম

প্রতিষ্ঠান এর কার্যক্রম তিনটি শাখায় বিভক্ত। প্রাতঃ শাখা, দিবা শাখা ও উচ্চ মাধ্যমিক শাখা। স্কুলের একজন প্রধান শিক্ষক, তিনজন সহকারী প্রধান শিক্ষক ও অতিরিক্ত তিনজন প্রেষণে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া দুই জন উচ্চমান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, দুই জন অফিস সহকারী ও ১০ জন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর পদ রয়েছে। প্রাতঃ এবং দিবা শাখার জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা সহকারী প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক/শিক্ষিকা। প্রাতঃকালীন শাখার কার্যক্রম চলে সকাল ৭ টা ১৫ মিনিট থেকে ১১ টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত। দিবা শাখার কার্যক্রম চলে ১২ টা থেকে ৪ টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত। স্কুলে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মোট ৩৪ টি শাখা রয়েছে। এদের ১৪ টি প্রাতঃ শাখার এবং ১৪ টি দিবা শাখার। প্রতি বিভাগে ৫ম শ্রেণীতে ২ টি, ষষ্ঠ শ্রেণীতে ২ টি, ৭ম শ্রেণীতে ৩ টি, ৮ম শ্রেণীতে ৩ টি, ৯ম ও ১০ম শ্রেণীতে ৩ টি করে শাখা রয়েছে। এছাড়াও ২০০৮ সালে অত্র স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক শাখা খোলা হয়েছে। এতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে ৩২০ জন ছাত্র রয়েছে। যার মাঝে বিজ্ঞান শাখায় সিট ৮০ টি। সব মিলিয়ে স্কুলের মোট ছাত্র সংখ্যা ২৩২০ জন। [2]

সহশিক্ষা কার্যক্রম

এছাড়া খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়ে থাকে যা বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা পরিচালনা করে থাকে।

[2]

খেলাধুলা

২০০৫ সালে নতুন ভাবে সংস্কার করে গড়ে তোলা হয়েছে স্কুলের বিশাল ২ টি খেলার মাঠ। এতে ফুটবল, ক্রিকেট ও অন্যান্য খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। স্কুলের নিয়মিত ফুটবল দল ও ক্রিকেট দল রয়েছে। এসব দল বিভিন্ন আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে থাকে এবং প্রায়ই বিজয়ী হয়ে স্কুলের জন্য সুনাম বয়ে আনে। প্রতি বছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। [2]

স্কুলের নতুন ভবন

স্কুলের মূল ভবনটি ইংরেজি '"E"' আকৃতির দ্বিতল দালান। এছাড়া আরও ৫ টি একাডেমিক ভবন ও ১ টি উচ্চ মাধ্যমিক ভবন রয়েছে। মূল ভবনে রয়েছে প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষ, শিক্ষক মিলনায়তন, শিক্ষিকা মিলনায়তন, অফিস কক্ষ, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের কক্ষ, শ্রেণীকক্ষ ও সম্মেলন কক্ষ। গ্রন্থাগার, গবেষণাগার, ক্রীড়া কক্ষ, স্কাউট ড্রেন ইত্যাদি মূল ভবনের চতুর্দিকে অবস্থিত। এছাড়াও রয়েছে বিশাল কারিগরি ওয়ার্কশপ, ছাত্রাবাস, সুরম্য মসজিদ, প্রধান শিক্ষকের বাসভবন। তাছাড়াও ২০০৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ভবন নামে পরিচিত ৫ তলা ভবন তৈরি হয়। এতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রদের শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

[3]

স্কুলের মাঠ

ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার জন্য রয়েছে আলাদা মাঠ। এছাড়াও স্কুলের ভিতরে বাহিরে মোট ৭ টি ছোট বড় মাঠ রয়েছে। যেখানে ছাত্ররা অবসর সময়ে নানারকম খেলাধুলা করে থাকে। [3]

গবেষণাগার

পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, কম্পিউটার, কৃষি ইত্যাদি গবেষণাগার রয়েছে। এসব গবেষণাগারে বহু মূল্যবান যন্ত্রপাতি রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক বিষয়ে জ্ঞান লাভের জন্য এসব উপকরন ব্যবহারিত হয়।

[3]

গ্রন্থাগার

স্কুলে রয়েছে বিশাল একটি লাইব্রেরী। এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের নামী দামী কয়েক হাজার বই। শিক্ষার্থীরা এখানে সাচ্ছন্দে বসে পড়তে পারে এবং তাদের পছন্দের বই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাড়ি নিয়ে যেতে পারে। সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে লাইব্রেরীটি পরিচালিত হচ্ছে।

[3]

মসজিদ

স্কুলের ছাত্রাবাসের সাথে রয়েছে একটি মসজিদ। এখানে একজন ইমাম, একজন মুয়াজ্জিন ও একজন সহকারী মুয়াজ্জিন নিয়মিতভাবে কর্মরত আছেন। ছাত্র-শিক্ষকরা এখানে একসাথে নামায আদায় করে থাকেন। এছাড়া পার্শ্ববর্তী এলাকার মুসল্লীরাদের জন্যেও এই মসজিদ উন্মুক্ত থাকে।

ছাত্রাবাস

স্কুলের ছাত্রাবাসটি ১৯২৫ সালে স্কুলবিল্ডিং প্রতিষ্ঠাকালে তৈরি করা হয়। ইহা ইংরেজি "U" আকৃতির এবং তিন অংশে বিভক্ত। এর পূর্বাংশ মুসলিম ছাত্রদের জন্য এবং পশ্চিমাংশ হিন্দু ছাত্রদের জন্য। উত্তরাংশ বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ছাত্রদের জন্য। ছাত্রাবাসে ১২০ জন বসবাসের ব্যবস্থা আছে। তিন অংশে তিন ছাত্রাবাস প্রধানের জন্য তিনটি অফিস কক্ষ রয়েছে।১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ছাত্রাবাসে একজন বাবুর্চি, একজন মেট, একজন দিবাকালীন প্রহরী ও একজন নৈশকালীন প্রহরী নিযুক্ত ছিল। ১৯৮৫ সালে এমএল কমিটি উক্ত পদ ৪ টি বাতিল করে দেয়।

[3]


বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড

বছরের বার মাস স্কুলে নানা রকম সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পালন করা হয়। শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, জাতির জনকের জন্মদিন ও বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান যথাযথ মর্যাদার সাথে পালিত হয়। বর্ষবরণ, বাসন্তী উৎসব ইত্যাদি নানা রকম অনুষ্ঠান ছাত্র-শিক্ষক সম্মিলিতভাবে পালন করে। এছাড়াও প্রতি বছরই আয়োজিত হয় শিক্ষা সফর।[3]

শিক্ষক-অভিভাবকের মতবিনিময় সভা

বছরে তিন বার ছাত্রদের অগ্রগতি, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও নানাবিধ সমস্যা-সমাধান ইত্যাদি ব্যাপারে শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিক্ষক ও অভিভাবকেরা আলোচনা সাপেক্ষে বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। [3]

বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল

১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠার পর থেকে এসএসসি পরীক্ষায় ফলের বিচারে সেরা ১০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় সবসময়ই কলেজিয়েট স্কুল প্রথম স্থানে অবস্থান করেছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার বোর্ড সেরা হওয়ারও গৌরব অর্জন করেছে স্কুলটি। এছাড়া সারাদেশের সরকারি স্কুলের মধ্যে টানা কয়েকবার সেরা স্কুল হিসেবে ঘোষিত হয় [4]। ফলাফল বিবেচনায় এটি ২০০৫-২০১০ সাল পর্যন্ত টানা ৬ বার পুরো দেশে প্রথম স্থান, অর্জন করে। এছাড়াও ২০১৩ সালে এটি সারা দেশে দ্বিতীয় এবং চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করে। [5]

কৃতী শিক্ষার্থী

মুহাম্মদ ইউনুস,২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী

অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি এ স্কুলে পড়ালেখা করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন,

  • আতাউর রহমান
  • ডা. আফছারুল আমীন; প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী
  • আবদুল্লাহ আল মূতি শরফুদ্দীন; লেখক ও বিজ্ঞানী
  • আব্দুল্লাহ আল নোমান; বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী
  • আবুল হায়াত; নাট্যকার
  • আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী; সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী
  • আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী; চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক প্রেসিডেন্ট
  • আশীষ ভদ্র; জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক
  • ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু; সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী
  • কাজী আরিফ; আবৃত্তিকার, স্থপতি
  • ছৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভান্ডারী
  • জাকির হোসেন; পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর
  • জামাল উদ্দীন আহমেদ এফসিএ; সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী
  • ড. জামাল নজরুল ইসলাম; প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী
  • নবীন চন্দ্র সেন; কবি
  • নিয়াজ মোর্শেদ; আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ডমাস্টার
  • নুরাশ আজমাঈন চৌধুরী
  • ড. মনোয়ার হোসেন
  • ময়ূখ চৌধুরী; কবি
  • ড. মনোয়ার হোসেন
  • মাঈনুদ্দিন খান বাদল; সংসদ সদস্য
  • এমএ মালেক; দৈনিক আজাদী সম্পাদক
  • মিনহাজুল আবেদীন নান্নু; জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক
  • ড. মুস্তাফা নূরউল ইসলাম
  • ড. মুহাম্মদ ইউনুস; নোবেল বিজয়ী প্রফেসর
  • ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল; লেখক ও শিক্ষাবিদ
  • এম মোরশেদ খান; সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী
  • ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন(এম.পি);বর্তমান গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী। সাবেক বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী
  • জেএম সেনগুপ্ত; ভারত কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি
  • হোসেন জিল্লুর রহমান; তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও চিটাগাং রিসার্চ ইনশিয়েটিভের চেয়ারম্যান
  • হুমায়ূন আহমেদ; জনপ্রিয় লেখক ও সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতা

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  • অগ্রদূত ( চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল ম্যাগাজিন, প্রকাশকাল এপ্রিল ২০১১)
  • অগ্রদূত ( প্রকাশকাল অগাস্ট ২০০৬)
  • বার্ষিকী ( চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল ম্যাগাজিন, প্রকাশকাল ১৯৭২)

টীকা

  1. সাব লেঃ মোঃ হাফিজ উদ্দিন,অগ্রদূত, পৃষ্ঠা ৭১, ২০০৬।
  2. শুভ্রা দাস,অগ্রদূত, পৃষ্ঠা ৩৭ , ২০১১।
  3. শুভ্রা দাস,অগ্রদূত, পৃষ্ঠা ৩৮ , ২০১১।
  4. দৈনিক প্রথম আলো
  5. শুভ্রা দাস,অগ্রদূত, পৃষ্ঠা ৩৯ , ২০১১।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.