খাজা হাসান আসকারি

নবাব খাজা হাসান আসকারি (২১ আগস্ট ১৯২১- ৯ আগস্ট ১৯৮৪) ঢাকার শেষ নবাব ছিলেন।[1][2] তিনি ঢাকার আহসান মঞ্জিলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নবাব খাজা হাবিবুল্লাহ ও শাহরিয়ার বেগমের বড় সন্তান। ১৯৫৮ সালে বাবার মৃত্যুর পর তিনি নবাব হন।

নবাব খাজা হাসান আসকারি
ঢাকার নবাব
রাজত্বকাল১৯৫৮-১৯৮৪
জন্ম১৯২০
জন্মস্থানআহসান মঞ্জিল, ঢাকা
মৃত্যু১৯৮৪
মৃত্যুস্থানকরাচি, সিন্ধু, পাকিস্তান
সমাধিস্থলসামরিক কবস্থান করাচি
পূর্বসূরিনবাব খাজা হাবিবুল্লাহ
উত্তরসূরিপদ বিলুপ্ত
রাজবংশঢাকা নবাব পরিবার
পিতানবাব খাজা হাবিবুল্লাহ
মাতাশাহরিয়ার বানু

প্রাথমিক জীবন

নবাব হাসান আসকারি ২১ আগস্ট ১৯২১ সালে জন্মগ্রহণ করেন।[3] তিনি মক্তব থেকে তার প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। তারপর তিনি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তার মা মাত্র ১০ বছর বয়সে মারা যায়। তিনি ১৯৪০ আলিগড় স্কুল ও কলেজ থেকে বি.এ. পাস করেন। তিনি সেখানে একটি ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি সেই সময় কায়েদ-ই-আজম পুরষ্কার লাভ করেন। তিনি আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪২ সালে স্নাতক করেন এবং ১৯৪৪ সালে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মিতে কমিশনড অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্মায় জাপান আর্মির সাথে একটি যুদ্ধে আহত হয়ে চাকরি ছেড়ে দেন। দেশবিভাগের পরে ১৯৪৮ সালে তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৪৮ সালে তিনি সুরাটের নবাব হাফিজুদ্দিন খানের কন্যা বিলকিস শেহজাদীকে বিয়ে করেন। দম্পতির এক ছেলে ও চার কন্যা আছে।

তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অংশ ছিলেন। ১৯৪৯ সালে তাকে নৌশেরা আর্মড কর্পসে স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯৫০ সালে তার চাচা খাজা নাজিমুদ্দিন পাকিস্তানের গভর্নর থাকাকালীন তাকে তার দেহরক্ষীর দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৫১ সালে তাকে পূর্ব পাকিস্তানে পাঠানো হয়। তবে ১৯৫৪ সালে আবার রাওয়ালপিন্ডিতে স্থানান্তর করা হয়।

শেষ নবাব

তার বাবা নবাব খাজা হাবিবুল্লাহ ২১ নভেম্বর ১৯৫৮ সালে মৃত্যুবরণ করলে তিনি নবাব হন। তিনি পূর্ব পাকিস্তানে এসে রিক্রুটিং অফিসার পদে নিযুক্ত হন। হৃৎরোগ থাকায় ১৯৬১ সালে তিনি সামরিক বাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৬২ সালে নির্বাচন করেন এবং জয় লাভ করেন। তিনি প্রাদেশিক মন্ত্রীসভায় সড়ক যোগাযোগ,রেল ও নোমন্ত্রী হন।

১৯৬৫ যুদ্ধে তিনি ঢাকার চীফ ওয়ার্ডেন নিযুক্ত হন। দেশের সেবার জন্য তাকে হিলাল-ই-খিদমত পুরষ্কার দেওয়া হয়। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের আগ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সভাপতি, পাকিস্তান ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের নির্বাহি কমিটির সদস্য, পূর্ব পাকিস্তান স্পোর্টস ফেডারেশনের সদস্য, স্যার সলিমুল্লাহ এতিমখানা পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং ধানমন্ডি স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

শেষ জীবন

স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ নেয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ১৯৭৫ সালে পর্যন্ত তিনি বাংলাদশেই ছিলেন। ১৯৭৪ সালের শেষদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টু বাংলাদেশ ভ্রমণে আসেন। তিনি তাকে পাকিস্তানে যেতে অনুরোধ করেন। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার নবাবকে নিজের দেশে নিজের মানুষের কাছে থাকতে বলেন। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি পাকিস্তান চলে যান।

১৯৮৪ সালে তিনি মারা যান। তাকে করাচি সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার স্ত্রী ১৯৯৫ সালে মারা গেলে তাকেও সেখানে কবর দেওয়া হয়।

তথ্যসূত্র

  1. "The Detective"। ১১ অক্টোবর ১৯৬৭ Google Books-এর মাধ্যমে।
  2. Rahman, Syedur (২৭ এপ্রিল ২০১০)। "Historical Dictionary of Bangladesh"। Scarecrow Press Google Books-এর মাধ্যমে।
  3. "Askari, Nawab Khwaja Hasan - Banglapedia"en.banglapedia.org
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.