কোড়া

কোড়া (বৈজ্ঞানিক নাম: Gallicrex cinerea) Rallidae (রেলিডাই) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Gallicrex (গ্যালিক্রেক্স) গণের একমাত্র সদস্য। কোড়ার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ছাইরঙা মুরগিছানার মত দেখতে ঝিল্লি (ল্যাটিন: gallus = মুরগিছানা, crex = ঝিল্লি, cinereus = ছাইরঙা)। সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ৯৯ লাখ ৯০ হাজার বর্গ কিলোমিটার।[1]

কোড়া
পুরুষ কোড়া, গুরগাঁও, হরিয়ানা, ভারত

ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত  (আইইউসিএন ৩.১)
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: Gruiformes
পরিবার: Rallidae
গণ: Gallicrex
Blyth, 1852
প্রজাতি: G. cinerea
দ্বিপদী নাম
Gallicrex cinerea
(Gmelin, 1789)

দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা থেকে শুরু করে চীনের দক্ষিণাংশ, জাপান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া প্রমূখ দেশসমূহে কোড়া দেখা যায়। মূলতঃ মাংস ও ডিমের জন্য এটি শিকারে পরিণত হয়। বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা কমছে, তবে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে ‌এসে পৌঁছায়নি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[2]

কোড়া-ডাহুক গোষ্ঠীর অন্যতম সদস্য কোড়া পাখির প্রায় ১০-১২টি প্রজাতি বাংলাদেশের মোটামুটি সকল অঞ্চলেই পাওয়া যায়। কোড়া বর্ষাকালে বাংলাদেশের মাঠে-ঘাটে, বিশেষ করে ধান খেতের পানিতে প্রচুর দেখা যায়।[3] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

বিবরণ

বর্ষা-শরতই কোড়াদের বাসা বাঁধার মৌসুম, ডিম-ছানা তোলার মৌসুম। এ সময় আনন্দে ডাকে পুরুষ কোড়া। নিজের রাজত্বের ঘোষণা দিতেও ডাকে। ডাহুক ও পোষা পাতি ঘুঘু দিয়ে যেমন বুনো ডাহুক-ঘুঘু শিকার করা হতো এককালে, পোষা কোড়া দিয়েও তা-ই করা হতো। দৈহিক কাঠামো সমান্তরাল প্রকৃতির। ফলে, কোন কারণে বিপদ টের পেলে খুব দ্রুত নল-খাগড়া, ঝোপ-ঝাড়ের ভিতর দিয়ে পালিয়ে যায় ও আত্মরক্ষা করে।

অপ্রাপ্তবয়স্ক কোড়া, অন্ধ্রপ্রদেশ, ভারত

পুরুষ কোড়া লম্বায় ৪৩ সেন্টিমিটার (১৭ ইঞ্চি)। ওজন গড়পড়তা ৪৭৬-৬৫০ গ্রাম (১.০৫-১.৪ পাউন্ড) হয়।[4] পক্ষান্তরে স্ত্রীজাতীয় কোড়া পুরুষের তুলনায় দৈর্ঘ্য এবং ওজনে কম হয়। এটি দৈর্ঘ্যে ৩৬ সেন্টিমিটার (১৪ ইঞ্চি) হয়ে থাকে এবং ওজন গড়পড়তা ২৯৮-৪৩৪ গ্রাম (১০.৫-১৫.৩ আউন্স) হয়।[4] এদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে লম্বা পা ও খাটো আকৃতির লেজ। কোড়ার মূল খাদ্য বিভিন্ন বীজ, পোকা-পতঙ্গ, কচি ঘাসের ডগা, ছোট মাছ ইত্যাদি।

স্বভাব

কোড়া কিছুটা লাজুক প্রকৃতির ও আড়ালে-আবডালে থাকতে ভালবাসে। কিন্তু তাদেরকে কখনো কখনো উন্মুক্ত অঞ্চলে দেখা যায়। ডাকপ্রিয় পাখি হিসেবে এদের পরিচিতি রয়েছে। বিশেষ করে উষা ও গোধূলীলগ্নে এরা খাবারের সন্ধানে ডেকে চলে। পুরুষ কোড়ার ডাক চালাচালি—সেটা প্রতিপক্ষকে হুঁশিয়ার করে দেয়ার জন্য। পোষা কোড়াদের সামনে আয়না ধরলে প্রতিপক্ষ ভেবে দারুণভাবে খেপে যেতে পারে। এদের ছোট বাচ্চারাও দেখতে খুব সুন্দর। দুটো বুনো পুরুষ কোড়ার লড়াইও দারুণ উপভোগ্য দৃশ্য। লড়াইরত দুটি পাখিকেই ধরে ফেলা সম্ভব।

প্রজনন

প্রজনন মৌসুমে বাদামি রঙের পুরুষ পাখিটির রং হয়ে যায় চমত্কার কালো, কপালে মুকুটের মতো থাকে আলতা রঙের বর্ম, পা থাকে লালচে-ধূসর, ঠোঁট টকটকে হলুদ। এ সময় এরা দাপটের সঙ্গে হাঁটে—দাপটের সঙ্গে ডাকে। হয়ে পড়ে দারুণ লড়াকু। দেখতেও এ সময় মনে হয় কালো রঙের একটি পোষা মোরগ। ধানগাছ বা ঘাস দিয়ে ধানখেত বা বিল-হাওরের ঘাসবনে বেশ বড়সড় বাসা করে। ছয় থেকে আটটি ডিম পাড়ে। ফোটে ১৬ দিনে।

গ্যালারী চিত্র

তথ্যসূত্র

  1. Gallicrex cinerea, BirdLife International এ কোড়া বিষয়ক পাতা।
  2. Gallicrex cinerea, The IUCN Red List of Threatened Species এ কোড়া বিষয়ক পাতা।
  3. উচ্চ মাধ্যমিক প্রাণিবিজ্ঞান, মোঃ আবদুল মমিন মিঞা ও মাহমুদ জাহাঙ্গীর হাসান, আইডিয়েল লাইব্রেরী, ঢাকা, ১০ম সংস্করণ, ১৯৯২, পৃষ্ঠা-৬১৮
  4. CRC Handbook of Avian Body Masses by John B. Dunning Jr. (Editor). CRC Press (1992), আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮৪৯৩-৪২৫৮-৫.
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.