কুসুমকুমারী দাশ

কুসুমকুমারী দাশ একজন বাঙালি মহিলা কবি। তার রচিত "আদর্শ ছেলে", যার প্রথম চরণ "আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে", বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। কবির জ্যেষ্ঠ পুত্র জীবনানন্দ দাশ বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান এবং জনপ্রিয় কবি।

কুসুমকুমারী দাশ
কুসুমকুমারী দাশ
জন্ম১৮৭৫
মৃত্যু১৯৪৮
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারত
পেশাগৃহিনী
দাম্পত্য সঙ্গীসত্যানন্দ দাশ
সন্তানজীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪)
অশোকানন্দ দাশ
সুচরিতা দাশ (১৯১৫-১৯৮০)
পিতা-মাতাচন্দ্রনাথ দাশ এবং ধনমানী দাশ

জন্ম ও পরিবার

কবি কুসুমকুমারী দাশ বাখরগঞ্জ জেলার বরিশাল শহরে ২১ শে পৌষ ১২৮২ বঙ্গাব্দে এক বিদ্যানুরাগী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা চন্দ্রনাথ দাস এবং মাতা ধনমাণি। চন্দ্রনাথ ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করায় গ্রামবাসীদের বিরোধিতায় "গৈলা" গ্রামের পৈতৃক ভিটা ছেড়ে বরিশালে চলে আসেন।

শিক্ষাজীবন

কুসুমকুমারী একটি পারিবারিক পরিমণ্ডল পেয়েছিলেন। বরিশাল ব্রাহ্মসমাজ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মেয়েদের হাই স্কুলে তিনি ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন। এরপর বালিকাদের অভাবের জন্য স্কুলটি বন্ধ হয়ে গেলে কুসুমকুমারীকে তার বাবা কলকাতায়, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের গৃহে রেখে বেথুন স্কুলে ভর্তি করেন। একবছর পর ব্রাহ্মবালিকা বোর্ডিং-এ লাবণ্যপ্রভা বসুর তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা করেন।প্রবেশিকা শ্রেণীতে পড়ার সময়েই ১৮৯৪ সালে তার বিয়ে হয় বরিশালের ব্রজমোহন ইনস্টিটিউশন-এর প্রধান শিক্ষক সত্যানন্দ দাসের সঙ্গে। তারই অনুপ্রেরণায় কুসুমকুমারী সাহিত্য চর্চা চালিয়ে যান। বরিশালের ব্রাহ্মসমাজের সভা-উৎসব-অনুষ্ঠানে কুসুমকুমারী যোগদান করতেন। তিনি ১৩১৯ থেকে ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছরই, বরিশাল ছাত্র সংঘের সপ্তাহকালব্যাপী মাঘোত্সবের মহিলা দিবসের উপাসনায় আচার্যের কাজ করেছেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এমন একটি স্বাভাবিক মর্যাদার অধিকারিণী হয়েছিলেন যে, শুধু মহিলাদের উৎসবে নয়, ব্রাহ্মসমাজের সাধারণ সভাতেও তিনি আচার্যের কর্মভার কাজ করেছেন।[1] তিনি বরিশাল মহিলা সভার সম্পাদক ছিলেন (Barishal Women Society)।[1]

সাহিত্যকর্ম

ছোটবেলা থেকেই কবিতা ও প্রবন্ধ লিখতেন কুসুমকুমারী। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, শিশুদের জন্য যে চিত্রশোভিত বর্ণশিক্ষার বই লিখেছিলেন, তার প্রথম ভাগে কুসুমকুমারী রচিত যুক্তাক্ষরবিহীন ছোট ছোট পদ্যাংশ ছিল। তিনি সম্পাদক মনোমোহন চক্রবর্তীর অনুরোধে লিখেছেন "ব্রহ্মবাদী" পত্রিকায়। তার অল্প কিছু কবিতা প্রকাশিত হয়েছে "প্রবাসী" ও "মুকুল" পত্রিকায়।[2] তিনি নিয়মিত পত্রিকা রাখতেন। কিন্তু অধিকাংশই পাওয়া যায়নি কারণ হয় সেগুলো হয় হারিয়ে গেছে নতুবা তিনি সেগুলো নষ্ট করেছেন।[3] তার কবিতায় বার বার এসেছে ধর্ম, নীতিবোধ, দেশাত্মবোধ। কবিতা মুকুল (১৮৯৬) তার কাব্যগ্রন্থ। পৌরাণিক আখ্যায়িকা নামের একটি গদ্যগ্রন্থও তিনি রচনা করেন।[4]

সম্মাননা

"নারীত্বের আদর্শ" এক প্রবন্ধ প্রতিযোগীতায় কুসুমকুমারী স্বর্ণ পদকে ভূষিত হন।

মৃত্যু

১৩৫৫ সালে কলকাতার রাসবিহারী এভিনিউ এর বাড়িতে তার মৃত্যু হয়।

তথ্যসূত্র

  1. Guha, Vumendra (২০১২)। "Introduction"। Vumendra Guha। Kusumkumari Daser Dainandin Lipi (Daily Entries: The Diary) (Bengali ভাষায়) (1st সংস্করণ)। Dhaka: Abasar। পৃষ্ঠা 11। আইএসবিএন 978-984-8793-98-5।
  2. Syed, Abdul M. (১৯৯৮)। "Apendixes: Life"। Abdul M. Syed। Jibanananda Dases Prakashita-Oprakashita KabitaSamagra (A collection of Complete poems: Published and Unpublished by Jibanananda Das) (Bengali ভাষায়)। Dhaka: Abasar। পৃষ্ঠা 606।
  3. Guha, Vumendra (২০১২)। "Introduction"। Kusumkumari Daser Dainandin Lipi (Daily Entries: The Diary by K. Das) (Bengali ভাষায়) (1st সংস্করণ)। Dhaka: Abasar। পৃষ্ঠা 13। আইএসবিএন 978-984-8793-98-5।
  4. সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ১২৬, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৩৫৪-৬
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.