কম্পিউটিং হার্ডওয়্যারের ইতিহাস

কম্পিউটারকে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। কম্পিউটার হার্ডওয়্যার বলতে সেই ভৌত যন্ত্রকে বোঝায়, যা কোন প্রোগ্রামের নিয়ন্ত্রণে উপাত্ত সংরক্ষণ ও তাতে পরিবর্তন সাধন করতে পারে। সৃষ্টির শুরু থেকেই কম্পিউটার হার্ডওয়্যার আরও দ্রুত, সস্তা ও বেশি তথ্য ধারণক্ষমতাবিশিষ্ট করার অনবরত চেষ্টা চলছে।

কম্পিউটারের উদ্ভাবনের আগে বেশির ভাগ গণনার কাজ মানুষ নিজেই সম্পাদন করত। গণনার কাজে সুবিধার জন্য মানুষ যে সব যন্ত্র উদ্ভাবন করেছে, তাদেরকে সাধারনভাবে ক্যালকুলেটর বলা হয়। যদিও ক্যালকুলেটর এখনও তৈরি করা হয়, বর্তমানে কম্পিউটার তাদেরকে ছাড়িয়ে গেছে এবং প্রায় সর্বত্রই এখন গণনার কাজে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। ১৯৪০-এর দশকের পর প্রতি দশকেই কম্পিউটার প্রযুক্তি বিশাল সব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে।

আদি ক্যালকুলেটরসমূহ

হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ গণনার কাজে সহায়তার জন্য যন্ত্রের ব্যবহার করে আসছে। একেবারে শুরুর দিকের গণনা যন্ত্র ছিল সম্ভবত টালী দন্ড। এরপর ফিনিসীয়রা কাদামাটি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন আকৃতির বস্তু দিয়ে সংখ্যা নির্দেশ করে সেগুলি পাত্রে রেখে হিসাব রাখত। ব্যাবিলনীয়রা ও মিশরীয়রা অ্যাবাকাসের মাধ্যমে হিসাব করত।

জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক হিসাব করার জন্য প্রাচীন ও মধ্যযুগে বেশ কিছু অ্যানালগ কম্পিউটার বা গণনাযন্ত্র নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রাচীন গ্রিসে নির্মিত হয়েছিল আন্তিকাইথেরা যন্ত্র এবং আস্ত্রোলাব (আনু. ১৫০-১০০ খ্রিপূ)। এই যন্ত্রগুলিকে সাধারণত প্রথম অ্যানালগ কম্পিউটার হিসেবে গণ্য করা হয়। প্লানিস্ফিয়ার, আবু রাইহান আল-বিরুনির কিছু উদ্ভাবন (১০ম শতকে), আবু ইসহাক ইব্রাহিম আল-জার্কালির ইকুয়েটোরিয়াম, অন্যান্য মুসলিম জ্যোতির্বিদদের তৈরি বিভিন্ন জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক অ্যানালগ কম্পিউটার-ও উল্লেখযোগ্য।

জন নেপিয়ার উল্লেখ করেন যে সংখ্যাসমূহের লগারিদমের যোগ ও বিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেগুলির গুণ ও ভাগ সম্পাদন করা যায়। নেপিয়ার যখন তাঁর প্রথম লগারিদম সারণি প্রস্তুত করছিলেন, তখন তাঁকে অনেক বড় বড় গুণ ও ভাগ করতে হয়েছিল, এবং সেই কাজে সুবিধার জন্য তিনি নেপিয়ারের হাড় নামের অ্যাবাকাস জাতীয় একটি যন্ত্র তৈরি করেন।

জেনারেশনসমূহ

আবিষ্কারের পর থেকে কম্পিউটার বিভিন্ন সময়ে পরিবর্ধন, পরিমর্জন করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এই সকল পরিবর্ধন, পরিমর্জনকে জেনারেশনের মাধ্যমে ভাগ করা হয়ে থাকে। কম্পিউটারের জেনারেশনকে ৫টি ভাগে ভাগ করা যায়।

  • প্রথম জেনারেশন (১৯৪০-১৯৫৬) -ভ্যাকুয়াম টিউব
  • দ্বিতীয় জেনারেশন (১৯৫৭-১৯৬৩) -ট্রানজিস্টর
  • তৃতীয় জেনারেশন (১৯৬৪-১৯৭৫) -ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট
  • চতুর্থ জেনারেশন (১৯৭৬-১৯৮৯) -মাইক্রোপ্রসেসর
  • পঞ্চম জেনারেশন (১৯৯০-ভবিষ্যৎ) -কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা


প্রথম জেনারেশন: কম্পিউটারের প্রথম জেনারেশনের কার্যকাল ১৯৪০ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত। এ সময়ে হিসাবের জন্য ভ্যাকুয়াম টিউব টেকনোলজি ব্যবহার করা হতো। এই কম্পিউটারসমূহ ছিল তৎকালীন সময়ের দ্রুততম। কম্পিউটারে মেশিন ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করা হতো এবং উক্ত কম্পিউটারসমূহ প্রচুর তাপ উৎপাদন করতো। উদাহরণ: ENIVAC, UNIVAC, EDSAC ইত্যাদি।


দ্বিতীয় জেনারেশন: কম্পিউটারের দ্বিতীয় জেনারেশনের কার্যকাল ছিল আনুামানিক ১৯৫৭ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত। প্রথম জেনারেশনের ভ্যাকুয়াম টিউবের বদলে ট্র্যানজিস্টর ব্যবহার করা শুরু হয় এবং মেশিন ল্যাংগুয়েজের বদলে অ্যাসেম্বলি ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করা হতো। কম্পিউটারগুলো ছিলো আকারে তুলনামূলক ছোট ও ওজনে কম। এই সব কম্পিউটার পরিচালনা করতে তুলনামূলক কম পাওয়ার লাগতো। তবে রক্ষণাবেক্ষনের জন্য এসি প্রয়োজন হতো এবং সার্বিকভাবে রক্ষণাবেক্ষন খরচ বেশি।


তৃতীয় জেনারেশন: তৃতীয় জেনারেশনের কার্যকাল ১৯৬৪-১৯৭৫ সাল। এই সময়ে প্রথম ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) এর ব্যবহার শুরু করা হয়। এই কম্পিউটারগুলো আগের সকল জেনারেশনের কম্পিউটারের তুলনায় আকারে ছোট এবং এতে হাই লেভেল ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করা যেত। তবে

স্টোরেজ ক্ষমতা ছিল ছোট, দাম অনেক বেশি এবং রক্ষণাবেক্ষনের জন্য এসি প্রয়োজন হতো।


চতুর্থ জেনারেশন: চতুর্থ জেনারেশনের কার্যকাল ১৯৭৫-১৯৮৯ সাল। শুরু করা হয় LSI (Large scale integration) এবং VLSI (very large scale integration) এর ব্যবহার। তবে এই সকল কম্পিউটারের নতুন অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার শুরু করা হয় যাতে থাকে GUI (graphical user interface)। এছাড়াও সহায়ক মেমরি (secondary memory) ও LAN (Local Area Network) ব্যবহার শুরু হয়। এর স্টোরেজ বৃহত এবং কাজের সময় দ্রুততর। এই কম্পিউটার ব্যবহারে কম পাওয়ার ও কম রক্ষণাবেক্ষন প্রয়োজন।


পঞ্চম জেনারেশন: কার্যকাল বর্তমান-ভবিষ্যৎ। ULSI (ultra large scale integration) এর ব্যবহার শুরু যাতে করে ১টি চিপে ১০ মিলিয়ন কম্পোনেন্ট ব্যবহার সম্ভব। এছাড়াও এই জেনারেশনের উদ্ভাবন হলো প্যারালাল প্রোসেসিং, সার্ভার ইত্যাদি। অন্য সকল জেনারেশনের থেকে এই জেনারেশনের কম্পিউটার সবচেয়ে দ্রুত গতিসম্পন্ন এবং কম্ফোর্টেবল।

গ্রন্থপঞ্জি

  • Gottfried Leibniz, Explication de l'Arithmétique Binaire (1703)
  • A Spanish implementation of Napier's bones (1617), is documented in Hispano-American Encyclopedic Dictionary, Montaner i Simon (1887)
  • Herman Hollerith, In connection with the electric tabulation system which has been adopted by U.S. government for the work of the census bureau. Ph.D. dissertation, Columbia University School of Mines (1890)
  • W.J. Eckert, Punched Card Methods in Scientific Computation (1940) Columbia University. 136 pp. Index.
  • Stanislaw Ulam, "John von Neumann, 1903–1957," Bulletin of the American Mathematical Society, vol. 64, (1958)
  • Arthur W. Burks, Herman H. Goldstine, and John von Neumann, "Preliminary discussion of the Logical Design of an Electronic Computing Instrument," Datamation, September-October 1962.
  • Gordon Bell and Allen Newell, Computer Structures: Readings and Examples (1971). আইএসবিএন ০-০৭-০০৪৩৫৭-৪
  • Raul Rojas and Ulf Hashagen, (eds.) The First Computers: History and Architectures, MIT Press, Cambridge (2000). আইএসবিএন ০-২৬২-৬৮১৩৭-৪

বহিঃসংযোগ

ব্রিটিশ ইতিহাস

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.