কমলনগর হত্যাকাণ্ড

১৯৪৯ এর পরবর্তী সময়ে ত্রিপুরাতে বাঙালি তথা বাঙালি হিন্দুদের ওপর বিভিন্ন হামলার দায়ভার এ.টি.টি.এফ. নিয়ে এসেছে৷ ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে মে মাসে ৩০ জন বাঙালি হত্যার পেছনে রাষ্ট্রীয় ত্রিপুরা জনমুক্তি মোর্চা ও এ.টি.টি.এফ. এর নাম জড়িত৷

কমলপুর গ্রামটি পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার কল্যাণপুর থানার অধীনস্ত ও আগরতলা-খোয়াই সড়কের ওপর অবস্থিত৷[1] এটি জনবিরল ও আম-কাঁঠালগাছে পরিপূর্ণ গ্রাম, যেখানে মুলত হতদরিদ্র বাঙালি হিন্দু কৃষকদের বসবাস,[1] অধিকাংশ বাড়িই মাটির ও বিদ্যুৎ সংযোগ অপ্রতুল৷[2] গ্রামের বেশকিছু আবাসিক ২০০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নিরাপত্তারক্ষীর ভয়ে গ্রাম ছেড়ে কল্যাণপুর এলাকাতে বসতি গড়েছে৷

২০০৩ খ্রিস্টাব্দে প্রাক-স্বাধীনতা দিবস উৎযাপন কালে রাত ৯:৪৫ নাগাদ নিখিল ত্রিপুরা ব্যাঘ্র বাহিনী কমলনগর গ্রামে হামলা চালায়৷ হামলাকারীরা প্রথমে পুরো গ্রাম ঘিরে ফেলে ও ঘরে অগ্নিসংযোগ করে দেয়৷ ফলে বাসরতরা ঘর থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে ও তখনই বন্দুকবাজরা তাদের উদ্দেশ্য করে এলোপাথারি গুলি চালাতে থাকে৷ পরে তারা ঘর থেকে লুক্কাইতদের ও বের করে আনে৷

হামলাকারীরা সেখানে মোটামুটি আধঘন্টা যাবৎ অত্যাচার চালাতে থাকে৷[3] অপ্রকাশিত সূত্র থেকে জানা যায় পার্শ্ববর্তী ত্রিপুরী গ্রামগুলি থেকে বন্দুকবাজরা বিভিন্নভাবে সাহায্য পেতে থাকে৷[2] একই পরিবারের সাতজন সদস্য সহিত মোট চৌদ্দজনকে হত্যা করা হয় ও বহুলোক আহত হয়৷ পুলিশ সুপার টি.বি. রায় তৎক্ষণাৎ গ্রামে এসে উপস্থিত হন ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন৷

কমলনগর হত্যাকাণ্ড-এর খবর ছড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে কল্যাণপুর থানা সহ সমগ্র এলাকাতে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে৷ প্রায় ৩০০ নিঃস্ব বাঙালি হিন্দু পরিবার কমলপুর ও আশেপাশের নিজবাস ছেড়ে কমলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়৷ ত্রিপুরী উপজাতিভুক্ত সরকারী চাকুরীরত, ছাত্র, মহিলা ও চিকিৎসাধীন সকলেই আগামী সময়ে ধেয়ে আসা বিপত্তির কথা মাথায় রেখে ঐ অঞ্চল ছেড়ে পালিয়ে যায়৷ স্থানীয়রা রাস্তা অবরোধ করে ও স্থায়ী নিষ্পত্তি চেয়ে আন্দোলনে নামে৷ কমলনগরের পরিস্থিতি পর্যালোচনে যাওয়া পাঁচজন মন্ত্রীসদকে আটক করেন স্থানীয়রা৷[4]

পরের দিন, প্রত্যক্ষদর্শী একজন কল্যাণপুর থানাতে সমস্ত ঘটনা নথিভুক্ত করেন৷ ৫ই জানুয়ারী ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জিরানিয়া উপজেলার পুলিশ কর্মকর্তার হাতে এ.টি.টি.এফ. এর দুজন মাইকেল ও রয়্যাল দেববর্মা আত্মসমর্পণ করে৷[5] পুলিশ প্রশাসন ৩৮ জনের সাক্ষ্যদানের ভিত্তিতে তদন্তের মাধ্যমে চৌদ্দ জনের বিরূদ্ধে খোয়াই আদালতে চার্জশিট গঠন করেন৷ তদন্ত শেষে ধৃত ১৭ জনের মধ্যে কার্তিক দেববর্মা, ব্রজেন্দ্র দেববর্মা, অশোক দেববর্মা দোষী সাব্যস্ত হয় ও যাবজ্জীবন কারাদন্ড পায়, বাকী ১৪ জনকে প্রমাণের অভাবে খালাস করে দেওয়া হয়৷

• মান্দাই গণহত্যাকাণ্ড
• গোরেশ্বর গণহত্যাকাণ্ড
• খয়রাবাড়ি গণহত্যাকাণ্ড
• বাগবের গণহত্যা
• উত্তর কামরূপ গণহত্যাকাণ্ড
• হোজাই গণহত্যাকাণ্ড
• নিচলামারি গণহত্যাকাণ্ড
• তিনসুকিয়া গণহত্যা
• শিলাপাথর গণহত্যাকাণ্ড
• বোরোল্যান্ড গণহত্যাকাণ্ড ২০১৪
• কোকড়াঝাড় গণহত্যাকাণ্ড ২০১২
• নেলি হত্যাযজ্ঞ

1. Paul, Manas (২০০৯)। The Eyewitness: Tales from Tripura's Ethnic Conflict। New Delhi: Lancer Publishers। পৃষ্ঠা 6। আইএসবিএন 9781935501152। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০১৬।
2. Ray Chaudhuri, Amit (২৪ আগস্ট ২০০৩)। ""They asked no question. They simply killed""। assam.org। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০১৬।
3. "Kamalnagar massacre: Three awarded life term"। tripuravision.com। ২৩ এপ্রিল ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৬।
4. "5 ministers heckled at carnage site"। The Telegraph। ১৯ আগস্ট ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০১২।
5. "Incidents and Statements involving All Tripura Tiger Force: 1990-2012"। South Asia Terrorism Portal। Institute for Conflict Management। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০১৬।