ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার বিজ্ঞান
ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার বিজ্ঞান স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের একটি বিশেষ শাখা যা মূলত রসায়নশাস্ত্রের সাথে জীববিজ্ঞানের একটি যোগসূত্র হিসাবে কাজ করে। মূলত ঔষধের প্রস্তুতি এবং ঔষধের নিরাপদ ও সঠিক ব্যবহার, বিতরণ ও পরিবেশন, ইত্যাদি এর আলোচ্য বিষয়।[1] আধুনিক যুগে ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদ ঔষধ প্রস্তুতকরণ ও সংরক্ষণ, ঔষধ সম্পর্কে সঠিক তথ্য বিতরণ, এর সঠিক ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, সঠিক নিদানিক প্রয়োগ, ইত্যাদি বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার বিজ্ঞানের ইংরেজি পরিভাষা "ফার্মেসি"; শব্দটি এসেছে প্রাচীন গ্রিক শব্দ “Pharmakon” থেকে যার একাধিক আভিধানিক অর্থের একটি হল "ঔষধ"। ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদদেরকে ইংরেজি পরিভাষাতে "ফার্মাসিস্ট" বলে।
ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার বিজ্ঞানের তিনটি প্রধান মৌলিক বিভাগ আছে। এগুলি হল ঔষধনির্মাণ বিজ্ঞান (Pharmaceutics), ঔষধবিজ্ঞান (Pharmacology) এবং নিদানতাত্ত্বিক গবেষণা (Clinical research)।
ঔষধনির্মাণ বিজ্ঞান বিভাগে বিশুদ্ধ ঔষধীয় কাঁচামাল বা উপাদান থেকে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ নির্মাণ প্রক্রিয়া নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়। এর মধ্যে থাকে কার্যকরী ঔষধি যৌগের সাথে ব্যবহার করা অতিরিক্ত যৌগসমূহের ব্যবহার (Excipients), প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির বিবরণ (Tooling), প্রস্তুতপ্রণালী (Formulation and Preparation), মোড়কজাতকরণ (Packaging) ও তার উপকরণ, ইত্যাদি। একক মাত্রার ঔষধ নকশাকরণ (Dosage Form Design) ঔষধনির্মাণ বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। এই উপবিভাগে ঔষধের কণা ও তার বৈশিষ্ট্য প্রাধান্য পায়; সাথে থাকে পূর্বপ্রস্তুতি (Preformulation)। পূর্বপ্রস্তুতি বলতে বোঝায় ঔষধের প্রস্তুতির পূর্বে করণীয় বিষয়সমুহ, যেমন- ট্যাবলেট তৈরির ক্ষেত্রে প্রয়োজন তার ত্বরান্বিত স্থায়িত্ব পরীক্ষা (Accelerated Stability Testing)।
ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার বিজ্ঞানের প্রধান কিছু শাখা হল:
- ভৌত ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার বিজ্ঞান (Physical Pharmacy)
- ভেষজ ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার বিজ্ঞান ও ভেষজ রসায়ন (Pharmacognosy)
- জৈব ও অজৈব রসায়ন (Organic & Inorganic Chemistry)
- ঔষধনির্মাণ প্রযুক্তি (Pharmaceutical Technology)
- নিউক্লীয় ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার বিজ্ঞান
- হাসপাতাল ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার বিজ্ঞান
- সম্প্রদায়ভিত্তিক ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার বিজ্ঞান
- পশু ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার বিজ্ঞান
- ঔষধ নকশাকরণ (Drug Design)
- ঔষধ বাজারজাতকরণ ও বিক্রয় (Pharmaceutical Marketing & Sales)
বাংলাদেশে ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার বিজ্ঞান
ডাক্তারি ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ঔষধ বিক্রয় সীমিত করার জন্য বর্তমানে জোর প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যেকোনো ঔষধালয় থেকে যে কোন সাধারণ নাগরিক ব্যাকটেরিয়া নিরোধক বা অ্যান্টিবায়োটিকের মত ঔষধ বিনা ব্যবস্থাপত্রেই নিয়ে আসতে পারেন। ঔষধ লেখার দায়িত্ব একজন ডাক্তারের হলেও সঠিকভাবে সেই ঔষধ প্রদান করার জন্য একজন ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদকে পদায়ন করার কথা। শুধুমাত্র গুটিকয়েক জায়গা ছাড়া এই ধারাটি অনুসরণ দেখতে পাওয়া যায় না। একারণে বাংলাদেশে ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারবিদদের মূল্যায়ন সঠিকভাবে হচ্ছে কি না, সেই বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকেই যায়। যার ফলশ্রুতিতে এখন "ফার্মেসি" বলতে অনেকে ঔষধালয়কেই বুঝে থাকেন।
ইদানিং বাংলাদেশে ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষা প্রসারলাভ করছে। এর কারণ বাংলাদেশের ঔষধনির্মাণ শিল্পের উন্নতি। দেশের অনেক সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বা ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার বিজ্ঞান বিভাগ রয়েছে। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত ৪ বছর মেয়াদী বি. ফার্ম (অনার্স) ডিগ্রিকে (সম্মানসহ ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহার বিজ্ঞানে স্নাতক সনদ) ৫ বছর মেয়াদী পেশাগত সনদ Pharm. D-এ রূপান্তরিত করা হয়েছে। তবে কর্মক্ষেত্রে চাহিদার তুলনায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি বলা চলে।
তথ্যসূত্র
- Colin Blakemore; Sheila Jennett (২০০১), The Oxford Companion to the Body, Oxford University Press