ইন-সিটু সংরক্ষণ

কনভেনসন অন বায়োলজিকাল ডাইভারসিটি (সিবিডি,২০০৫)এর ব্যাখ্যা অণুযায়ী, ইন-সিটু সংরক্ষণ বা স্বস্থানে সংরক্ষণ অর্থ হচ্ছে কোন প্রজাতির প্রাকৃতিক বসতির সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক পারিপার্শ্বিকতায় টিকে থাকার মত জনগোষ্ঠীর পুনরুদ্ধার ও রক্ষণ। এই পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক নিয়মে জীব প্রজাতি যেখানে জন্মে সেখানেই সংরক্ষণ করা হয়। যেমন- সুন্দরী গাছকে এবং রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার কে সুন্দরবন এ এরুপ বাস্তুতন্ত্রে সংরক্ষণ করা হল ইন-সিটু সংরক্ষণ। [1][2][3]

সুন্দরবনের সুন্দরী বৃক্ষ

বাস্তবায়নের ধাপ

জীব সম্প্রদায়ের উপর ফলিত বিজ্ঞান এর ভিত্তিতে গবেষণা করতে হয়। উদ্ভিদপ্রাণীর আন্তঃসম্পর্ক নির্ণয় করতে হয়। প্রজাতির ক্রমবৃদ্ধির ইতিহাস জানতে হয়। অতীবিপন্ন প্রজাতির সংবেদনশীল বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করতে হয়। আবহাওয়া পরিবর্তণে জীব সম্পদের উপর সম্ভাব্য প্রভাব নির্ণয় করতে হয়। আশেপাশের এলাকায় সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার প্রভাব নির্ণয় করতে হয়।[1]

সুবিধা

অনেক উদ্ভিদ তাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও অন্যান্য কারনে মাইকোরাইজাল ছত্রাকএর উপর নির্ভরশীল। ইন-সিটু সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ ও মাইকোরাইজাল ছত্রাক উভয়কেই সংরক্ষণ করা জায়। একটি প্রজাতির উপর একই এলাকায় অন্যান্য প্রজাতি নির্ভরশীল থাকতে পারে। ইন-সিটু সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় এই নির্ভরশীলতা রক্ষা পায়। যেসব দেশে সংকটাপন্ন প্রজাতির তালিকা প্রস্তুত হয়নি, অনেক প্রজাতি অনাবিষ্কৃত রয়েছে সেখানে এই পদ্ধতিতে প্রজাতি সংরক্ষণ করতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় প্রজাতির বিবর্তন এর প্রক্রিয়া সক্রিয় থাকে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।[4]

মাধ্যম

জাতীয় উদ্যান

প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র ও এর জীবসম্পদের রক্ষার জন্য এদের আবাস্থলের বিশাল আয়তন এলাকা সংরক্ষণ করা হলে ঐ এলাকাকে উদ্যান বলে। ১৮৭৪ সালে উত্তর আমেরিকার ইয়েলোস্টোন এ বিনোদনের ধারণা নিয়ে সর্ব প্রথম ইয়েলোস্টোন জাতীয় উদ্যান গঠিত হয়। ইটালির আব্রুজ্জে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষনের জন্য, ১৯৪৯ সালে যুক্তরাজ্যে প্রকৃতি সংরক্ষনের জন্য জাতীয় উদ্যান প্রতিষ্ঠিত হয়।

আর্জেন্টিনায় ন্যাশনাল পার্ক

[2]

অভয়ারণ্য

অক্টোবর মাসে জলমগ্ন রাতারগুল জলাবন

অভয়ারণ্য হলো এমন বনাঞ্চল, যেখানে বন্যপ্রাণীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় এবং তাদের প্রজনন ও আবাস নিরাপদ রাখতে শিকারিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।অভয়ারণ্য ঘোষণা করার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়:
সাধারণত বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ পরিবেশ, তাদের স্বাভাবিক কিংবা বর্ধিত প্রজনন পরিবেশ, বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক সংখ্যা এবং বৃক্ষরাজি কিংবা ঔষধি বৃক্ষরাজির নিরাপদ সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে সরকার কিংবা নির্বাহী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোনো এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বনাঞ্চলকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। ভারতে এই ঘোষণা রাজ্য সরকার করে থাকেন।[5]

অভয়ারণ্য ঘোষণা করার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়:
১. ঐ এলাকার বন্যপ্রাণী যেন ধ্বংস না হয়।
২. পশুপাখিদের শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমন কাজ থেকে যেন এই বনাঞ্চল মুক্ত থাকে। পাশাপাশি, বাইরে থেকে শিকারিরা যাতে এই নিরাপত্তা বলয়ে প্রবেশ না করতে পারে।[5]

মৎস্য অভয়াশ্রম

যেসব জলাশয় যেমন- নদী,খাল,বিলমাছ ধরা বা মারা এবং জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ তাকে মৎস্য অভয়াশ্রম বলে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অভয়াশ্রম এ চিতল,ফলি,কালিবাউস,পাবদা,গজার মাছের বংশবৃদ্ধি ঘটছে। মৎস্য অভয়াশ্রম বাইক্কা বিল এর মত অনেক মৎস্য অভয়াশ্রম এ পাখি ও দেখা যায়। বাইক্কা বিল এ ২০১১ সালে নতুন ৪টি পরিযায়ী পাখির দেখা মিলেছে। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের পাখি পর্যবেক্ষকদের মতে ওগুলেো হলো: ‘বড়ঠুঁটি নলফুটকি, ‘উদয়ী নলফুটকি’,’ বৈকাল ঝাড়ফুটকি’ ও ‘সাইক্সের ফুটকি’। [6]

ইকোপার্ক

বাংলাদেশে ইকোপার্ক বলতে এমন একটি সংরক্ষিত এলাকাকে বোঝায় যা উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রাকৃতিক আবাস্থল ও নয়নাভিরাম দৃশ্য সংবলিত এলাকা যেখানে পর্যটকদের চিত্তবিনোদনের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির উদ্দেশে গঠিত হয়।[4] যেমন- সীতাকুন্ড পাহাড়। এই পাহাড়ের পাদদেশে নির্মিত হয়েছে সীতাকুন্ড ইকো পার্ক ।[7]

তথ্যসূত্র

  1. জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র- গাযী আজমল, সফিউর রাহমান।
  2. জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র- হাফিযুর রহমান মণ্ডল, মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, এডলিন ডি ক্রুজ
  3. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২ জুন ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৪
  4. জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র- ড. মোহাম্মদ আবুল হাসান।
  5. শেখ রোকন (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ খ্রিস্টাব্দ)। "চিড়িয়াখানা গড়ার পিছনে স্বপ্ন থাকতে হয়"দৈনিক সমকাল। ঢাকা। ২৩ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল (php ওয়েবসাইট) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০১০ খ্রিস্টাব্দ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  6. "বাংলাদেশে আরও ৪টি নতুন পাখির সন্ধান"। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮
  7. [ http://www.banglapedia.org]
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.