আসামি বানর

আসামি বানর[3] বা আসাম বানর (ইংরেজি: Assam macaque) (বৈজ্ঞানিক নাম:Macaca assamensis) হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার ম্যাকাকু গণের একটি বানর প্রজাতি। ভারতের আসাম রাজ্যে বেশি দেখা যায় বলে এদের নাম ‘আসামি’।[4] বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অণুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[3]

আসামি বানর
Assam macaque[1]

প্রায়-বিপদগ্রস্ত  (আইইউসিএন ৩.১)[2]
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: Mammalia
বর্গ: Primates
পরিবার: Cercopithecidae
গণ: Macaca
প্রজাতি: M. assamensis
দ্বিপদী নাম
Macaca assamensis
McClelland, 1840
Assam macaque range

আবাসস্থল

আসামি বানর পাতাঝরা বনঅর্ধ-চিরসবুজ বনে বাস করে।[5] বাংলাদেশের রেমা-কালেঙ্গা, সাতছড়ি, পাবলাখালীর বনে এখনো এদের দেখা পাওয়া যায়।[4]

দেহের বর্ণনা

আসামি বানর দেখতে অনেকটা রিসাস বানরের মতো, তবে আকারে বড়। দেহের মাপ ৬১ সেন্টিমিটার, লেজ ২৯ সেন্টিমিটার। মুখ বেশ বড়, লম্বাটে। মুখের পশমের রং বাদামি ছাই রঙের। পুরুষগুলোর গালে দাড়ির মতো বড় লোম গজায়। বুকের পশম সাদাটে, বাকি দেহের রং মরচে বাদামি অথবা হালকা বাদামি (উপপ্রজাতিভেদে)। রিসাস বানরের মতো এদের পশ্চাৎদেশে ও উরুতে লালচে কমলা রঙের পশম দেখা যায় না। ওজন ১২ কেজি।[4]

স্বভাব-প্রকৃতি ও খাদ্যাভ্যাস

আসামি বানর দেখতে অনেকটা রিসাস বানরের কাছাঁকাছি। এরা নিজেদের দলে বসবাস করে; তবে পুরোপুরি জংলি প্রাণী। রিসাস বানরের মতো শহর, গ্রাম পছন্দ করে না। গরমের সময় এরা পাহাড়ের ওপরে উঠে যায়, শীতে সমতলে নেমে আসে। নিরুপদ্রব জঙ্গলে ১০ থেকে ১০০টি বানর কাছাঁকাছি দল বেঁধে চলে। হিমালয়ান আসামি বানর আকারে বড়। এদের লেজও অপেক্ষাকৃত লম্বা। আসাম, বাংলাদেশ, মিয়ানমারে পাওয়া আসামি বানরের লেজ ছোট। সুন্দরবনে আসামি বানর দেখা যায় - কথাটি অনেকেই বলে থাকেন। আসলে সুন্দরবনে রিসাস বানর ছাড়া আর কোনো ধরনের বানর নেই। আসামি বানর দেখতে রিসাস বানরের মতো হওয়ায় এমন বিভ্রান্তি।
দলেবলে চলার সময় এরা গলাখাকারির শব্দের মতো শব্দ করে পরস্পরের অবস্থান বুঝে নেয়, বিপদ জানায়। এরা পোকামাকড়, ফল, পাকুড়, তরিতরকারি খায়। কখনো খেতে হামলা চালায়। বনের পাশের গৃহস্থবাড়িতে ঢুকে পড়ে। এরা লাজুক ও তটস্থ। হুলো বানর লেজ উঁচিয়ে চলে।[4]

প্রজনন

এদের মিলনঋতু, গর্ভধারণ, শিশু পরিচর্যা নিয়ে এখনও তেমন গবেষণা হয়নি।[4]

বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশে জঙ্গল সাফ হওয়ার মধ্য দিয়ে আসামি বানর নিশ্চিহ্ন হচ্ছে। তবে আসাম, নেপাল, মিয়ানমারে কিছু কিছু নৃগোষ্ঠী আসামি বানর মেরে খেয়ে নেয়। এসব নৃগোষ্ঠীর বিশ্বাস আসামি বানরের দেহে ঔষধি গুণ আছে।[4] বর্তমানে আসামি বানর আইইউসিএন লাল তালিকায় প্রায়-বিপদগ্রস্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে।[2]

তথ্যসূত্র

  1. Groves, C. (২০০৫)। Wilson, D. E., & Reeder, D. M., সম্পাদক। Mammal Species of the World (3rd সংস্করণ)। Johns Hopkins University Press। পৃষ্ঠা 161। আইএসবিএন ০-৮০১-৮৮২২১-৪।
  2. Boonratana, R., Chalise, M., Das, J., Htun, S. and Timmins, R. J. (২০০৮)। "Macaca assamensis"বিপদগ্রস্ত প্রজাতির আইইউসিএন লাল তালিকা। সংস্করণ 2012.2প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন
  3. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৯০
  4. ‘আসামি’ বানর - দৈনিক প্রথম আলো (১৮ জানুয়ারি, ২০১১)
  5. জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.), বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: স্তন্যপায়ী, খণ্ড: ২৭ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ১৭-১৮।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.