আবা খালেদ রশীদ উদ্দিন

আবা খালেদ রশীদ উদ্দিন আহমদ, পীর বাদশা মিয়া (১৮৮৪ - ১৯৫৯) ছিলেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, রাজনীতিবিদ ও সমাজ সংস্কারক; আধ্যাতিক সাধকও বটে। তিনি হাজী শরিয়তুল্লাহ এর চতুর্থতম বংশধর। তিনি পীর বাদশা মিয়া নামে অধিক পরিচিত। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে তার পিতার ইন্তেকালের পর বাহাদুরপুর আস্তানা ও ফরায়েজী আন্দোলনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।[1]

আবা খালেদ রশীদ উদ্দিন আহমদ
১৮৮৪ - ১০ ডিসেম্বর, ১৯৫৯
ডাক নাম: পীর বাদশা মিয়া
জন্ম তারিখ: ১৮৮৪
জন্মস্থান: বাহাদুরপুর, শিবচর, মাদারিপুর, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু তারিখ: ১৩ ডিসেম্বর ১৯৫৯(1959-12-13) (বয়স ৭৪–৭৫)
মৃত্যুস্থান: বাহাদুরপুর, শিবচর, মাদারিপুর, পুর্ব পাকিস্তান
জীবনকাল: ১৮৮৪ - ১০ ডিসেম্বর, ১৯৫৯
আন্দোলন: ফরায়েজি আন্দোলন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন

জন্ম

বাদশা মিয়া ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে অধুনা বাংলাদেশের মাদারিপুর মহাকুমার শিবচর থানাধীন বাহাদুরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সাঈদ উদ্দিন আহমদ।[2]

শিক্ষা জীবন

১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে বাদশা মিয়া পিতার নিকট আরবী বর্ণমালা শিখতে শুরু করেন। নিজ বাড়িতেই প্রসিদ্ধ ক্বারী সৈয়দ আহমাদের কাছে কায়দা বাগদাদী পড়েন। তার পিতার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় বিখ্যাত ক্বারী মোহাম্মদ সাহেবের নিকট বিশুদ্ধ কুরআন তেলাওয়াত শিক্ষা করেন। এর পর নিজ বাড়িতে শ্রীযুক্ত বাবু গুরুদেব পোদ্দারের নিকট জুনিয়ার ক্লাস পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকার প্রসিদ্ধ মোহসেনীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং সেখান থেকে জামায়াতে ফাজিল পাস করেন। আরবী, উর্দু, ফারসী ও ইংরেজি ভাষায় তার যথেষ্ট দক্ষতা ছিল।[1]

সামাজিক আন্দলন

শিক্ষা বঞ্চিত মুসলিম সমাজে আধুনিক শিক্ষা প্রসারের লক্ষে নবাব স্যার থাজা সলিমুল্লাহ ও বগুড়ার নবাব আলী বাহাদুরের নেতৃত্বে ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকার শাহবাগ বাগান বাড়িতে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া মোহামেডান এডুকেশনাল কনফারেন্সে বাদশা মিয়া যোগদান করেন। ইসলামী জাতীয়তাবাদকে সক্রিয় করার জন্য নবাব স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম লীগ গঠন করার প্রস্তাব করলে তিনি প্রস্তাবটিকে সমর্থন করেন এবং ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর নবাবের শাহবাগস্থ পারিবারিক বাগানবাড়িতে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ গঠনের অধিবেশনে তিনি যোগ দেন। ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলার রেকাবী বাজারে মুসলিম লীগকে জোরদার করার লক্ষে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে নবাব সলিমুল্লাহ সভাপতি এবং ফরায়েজী আন্দোলনের নেতা পীর বাদশা মিয়া প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য প্রদান করেন। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ সেপ্টেম্বর বরিশাল জনসভায় ব্রিটিশ বিরোধী বক্তব্য দেওয়ায় রাজদ্রোহীতার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে মাদারিপুর থানায় নেয়া হলে পুলিশ ও জেলখানা কর্তৃপক্ষ ফরায়েজী নেতাকে মাদারিপুরে রাখা নিরাপদ মনে না করলে পরে তাকে ফরিদপুর জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তার সাথে মাওলানা আকরাম খাঁ, মাওলানা আবুল বারাকাত আব্দুর রউফ দানাপুরী, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, ব্যারিস্টার জে.এম. সেন চৌধুরী, আব্দুর রশীন খান, মৌঃ শামসুদ্দিন আহমদ, মাওলানা খলিলুর রহমান প্রমুখ ভারত বিখ্যাত নেতা একই জেলখানায় বন্দী ছিলেন। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট তিনি আলিপুর কারাগার হতে মুক্তি লাভ করেন।[1]

হজ্বব্রত পালন করতে জেদ্দায় উপস্থিতহলে সৌদি আরবের তৎকালীন সুলতান তাকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা প্রদান করেন। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তিনি সবিশেষ অবদান রাখেন। এক সময়ে তিনি পাকিস্তান নেজামে ইসলাম পর্টিতে যোগদান করেন এবং ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের সাধারন নির্বাচনে আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন।[2]

শিক্ষা বিস্তার

১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে আবা খালেদ রশীদ উদ্দিন শিবচরে "বাহাদুরপুর শরিয়াতীয়া আলিয়া মাদ্রাসা" প্রতিষ্ঠা করেন। তৎকালীন নবগঠিত পূর্ব পাকিস্তানের ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো জ্বালানোর জন্য প্রতি গ্রামে কমপক্ষে একটি মসজিদ ভিত্তিক কোরআনী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা, কয়েকটি গ্রামকে গুচ্ছ করে নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি ফরায়েজীদের নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি "খুৎবায়ে ছাদারত" নামে একখানা গ্রন্থ রচনা করেন।[2]

পারিবারিক জীবন

১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট আবা খালেদ রশীদ উদ্দিন ঢাকার আহসান মঞ্জিলের নবাব খাজা রাছুল বখশের কন্যা ছালেহা বেগমকে বিয়ে করেন। বিবাহিত জীবনে তিনি দুই পুত্র ও চার কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন।[1]

মৃত্যু

১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ ডিসেম্বর রোবিবার দুপুর ১ টায় ৭৫ বছর বয়সে বাহাদুরপুরে নিজ বাসভবনে আবা খালেদ রশীদ উদ্দিন আহমদ ওরফে পীর বাদশা মিয়া বার্ধক্যজনিত কারনে মৃত্যুবরন করেন।[1]

স্মৃতি

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পীর বাদশা মিয়া নামে অসংখ্য মাদ্রাসা, স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার নামে রয়েছে কোড়ালিয়া পীর বাদশা মিয়া সড়ক, পীর বাদশা মিয়া জামে মসজিদ, পীর বাদশা মিয়া খানকা (আস্তানা)।[1]

তথ্যসূত্র

  1. "সত্য ও ন্যায়ের সাথে কাজের মিল রেখে করেছেন বাদশাহী | | :: চাঁদপুর কন্ঠ ::"www.chandpur-kantho.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৪
  2. মিয়া, আবদুল জাব্বার (১৯৯৪)। মাদারীপুর জেলা পরিচিতি। মাদারীপুর: মিসেস লীনা জাব্বার। পৃষ্ঠা ১৬৪।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.