অ্যানিমে

অ্যানিমী (জাপানি: アニメ অ্যানিমী, ইংরেজি: Anime অ্যানিমী। অ্যানিমেশন চিত্রকেই অ্যানিমে বলা হয়। জাপানের বাইরে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে অ্যানিমে বলতে জাপানে নির্মিত অ্যানিমেশনকেই বোঝায়। তবে পাশ্চাত্য দৃষ্টিভঙ্গিতে সব জাপানি অ্যানিমেশনই অ্যানিমে হিসেবে আখ্যায়িত হতে পারে না। এক কথায় অ্যানিমীকে অ্যানিমেশনের একটি উপসেট ধরে নেয়া যেতে পারে।

প্রথাগতভাবে অ্যানিমীগুলো হাতে নির্মিত হয়, তথাপি বর্তমানে অন্যান্য অ্যানিমেশন চিত্রের মতো অ্যানিমী নির্মাণেও কম্পিউটার সফ্‌টওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে। অ্যানিমীর কাহিনী যেকোনও ধরনের সাহিত্য বা মিডিয়ার মত হতে পারে। চলচ্চিত্র, নাটক বা কল্পকাহিনীর যেকোনটি নিয়েই অ্যানিমে নির্মাণ করা যেতে পারে। অন্যান্য মিডিয়ার মতোই ডিভিডি, টেলিভিশন সম্প্রচার, ভিডিও গেম্‌স, বিজ্ঞাপন, ভিএইচএস বা ভিসিডির মাধ্যমে অ্যানিমী প্রচারিত এবং বণ্টিত হয়ে থাকে।

অ্যানিমী বা মাঙ্গা জাপানে খুবই জনপ্রিয় এবং তা বিশ্বব্যপী স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। অ্যানিমী জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, এবং ইন্দোনেশিয়া এসকল এশীয় দেশগুলোতে অত্যধিক জনপ্রিয়। অধিকন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, নরওয়ে, রাশিয়া, সুইডেন সহ এসকল পাশ্চাত্য দেশগুলোতে অধিক প্রসারিত হয়েছে।

ইতিহাস

মোমোটারো'স ডিভাইন সি ওয়ারিয়র্‌স এ্যানিমে স্ক্রিনশট। এটি প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্য এ্যানিমে চলচ্চিত্র।

বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই অ্যানিমে নির্মাণের ইতিহাস শুরু হয়েছে। ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়াতে অ্যানিমেশন চিত্র নির্মাণ শুরু হওয়ার পর জাপানি চলচ্চিত্র নির্মাতারা তাদের সংস্কৃতিতে এই পদ্ধতিটি প্রয়োগের চেষ্টা করে এবং তখন থেকেই অ্যানিমে যাত্রা শুরু হয়।[1] জানা মতে সবচেয়ে প্রাচীন অ্যানিমে নির্মিত হয়েছিল ১৯০৭ সালে। এক বালক নাবিককে নিয়ে সেটি নির্মিত হয়েছিল।[2]

১৯৩০-এর দশকে জাপানের তুলনামূলকভাবে অণুন্নত লাইভ-অ্যাকশন চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে সাধারণ চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিবর্তে এ্যানিমে মাধ্যমে চলচ্চিত্র প্রকাশের বিষয়টি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কম খরচে যেকোনও ধরনের কাহিনী চিত্রায়িত করার এ ভিন্ন কোনও উপায় ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের মতো জাপানের লাইভ-অ্যাকশন ইন্ডাস্ট্রি অর্থানুকূল্য পায় নি। সেখানে অর্থাভাব, বাজেট সমস্যা, স্থান সংকট এবং চরিত্র নির্মাণে সমস্যা ছিল। তাই এই বাজারটিও ছিল বেশ ছোট আকারের। জাপানে পশ্চিমা গড়নের কোনও মানুষ না থাকায় জাপান থেকে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র বা জাপানবিহীন কাল্পনিক বিশ্বের রূপায়ণ এক প্রকার অসম্ভব ছিল। তাই অ্যানিমেশন চিত্র শিল্পীদেরকে যেকোনও ধরনের চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করেছিল।[3]

স্নো হোয়াইট নির্মাণের মাধ্যমে ওয়াল্ট ডিজনি অ্যানিমেশন চিত্রের মাধ্যমে যেকোনও ধরনের মিডিয়া নির্মাণকে জনপ্রিয় করে তোলেন। ডিজনির জনপ্রিয়তা ও সফলতা দেখে জাপানের অ্যানিমেশন শিল্পীরা উৎসাহিত হন।[4] ওসামু তেজুকা ডিজনির অনেকগুলো অ্যানিমেশন কাহিনী জাপানি প্রেক্ষাপটে রূপায়িত করে সেখানে খরচের পরিমাণ বেশ কমিয়ে এনেছিলেন। অবশ্য তাকে অনেকটা অদক্ষ শিল্পী ও কুশলী নিয়ে প্রতি সপ্তাহে আনিমের একটি করে পর্ব নির্মাণ করতে হত। সে সময় বেশ কয়েকজন অ্যানিমেশন শিল্পী ডিজনি বা তেজুকা ধরনের প্রচীন পদ্ধতি থেকে খানিকটা সরে গিয়ে নতুনত্ব আনেন এবং এভাবে নির্মাণ খরচ সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসেন।

১৯৭০-এর দশকে জাপানে মাঙ্গা শিল্প ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ইংরেজি কমিক বইয়েরই জাপানি নাম মাঙ্গা। এই মাঙ্গাগুলোর কাহিনী নিয়েই তখন আনিমে নির্মিত হতে থাকে। বিশেষত ওআমু তেজুকার মাঙ্গাগুলো চিত্রায়িত হয়েছিল। তেজুকাকে জাপানের অন্যতম কিংবদন্তি হিসেবে মেনে নেয়া হয় এবং তাকে বলা হয় "মাঙ্গার প্রভু"।[5] তেজুকাসহ অন্যান্যদের চেষ্টায় আনিমের মধ্যে বৈশিষ্ট্যময়তা এবং সঠিক চরিত্রের পরিস্ফুটন সম্ভব হয়ে ওঠে। এ সময় জায়ান্ট রোবট ধরনের আনিমে এই শিল্পে বিপ্লব আনে। তেজুকা এই ধরনের আনিমে নির্মাণ করেন যার মধ্যে রয়েছে গো নাগাই এবং অন্যান্য। জাপানের বাইরে জায়ান্ট রোবট ধরনটি মেকা নামে পরিচিত। সেই দশকের শেষ দিকে ইওশিয়ুকি তোমিনো এই ধরনটিকে সফলতার পর্যায়ে নিয়ে যান। ৮০'র দশকে গুনডাম এবং মাকরসের মতো রোবট আনিমে সিরিজগুলো চিরায়ত শিল্পের মর্যাদা পেয়েছে। জাপান এবং বহির্বিশ্বে এখনও রোবট ধরনটি সবচেয়ে কঠিন। ১৯৮০'র দশকে আনিমে জাপানের মূলধারার শিল্পে স্থান করে নেয় এবং তখন থেকেই এর নির্মাণ শিল্পে প্রভূত সফলতা আসে। উল্লেখ্য আনিমের আগেই মাঙ্গা জাপানের মূলধারায় স্থান করে নিয়েছিল। বিশ্ববাজারে ৯০ এবং ২০০০'র দশকে আনিমের গ্রহণযোগ্যতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

কার্য বিভক্তিকরণ

জাপানি অ্যানিমেশনসমূহের শ্রেণীবিভাগ

[6] জাপানি আনিমের ধরনের মধ্যে রয়েছে-

  • অ্যাকশন (Action)
  • অভিযান (Adventure)
  • হাস্যকর(Comedy)
  • গাড়ি (Cars)
  • স্মৃতিভ্রংশ (Dementia)
  • দৈত্য (Demons)
  • নাটকীয় (Drama)
  • এচ্চি (Ecchi)
  • কল্পনা (Fantasy)
  • খেলা (Game)
  • হারেম (Harem)
  • হেন্তাই (Hentai)
  • ঐতিহাসিক (Historical)
  • ভয়ানক(Horror)
  • শিশুদের(Kids)
  • যাদু (Magic)
  • যাদু মেয়ে (Magical Girls)
  • মার্শাল আর্ট (Martial Arts)
  • মেকা(Mecha)
  • মিলিটারি(Military)
  • সঙ্গীত (Music)
  • রহস্যময় (Mystery)
  • কৌতুক (Parody)
  • পুলিশ (Police)
  • মনোবিদ্যা (Psychological)
  • ভালবাসা (Romance)
  • সামুরাই (Samurai)
  • যুবকদের জন্য (Seinen)
  • মেয়েদের জন্য (Shoujo)
  • ছেলেদের জন্য (Shounen)
  • সাধারণ জীবনী (Slice of Life)
  • স্কুল (School)
  • কল্পবিজ্ঞান (Sci-Fi)
  • মহাকাশ (Space)
  • খেলাধূলা(Sports)
  • সুপার পাওয়ার (Super Power)
  • অতিপ্রাকৃত (Supernatural)
  • ভ্যাম্পায়ার (Vampire)
  • ইয়াওই (Yaoi)
  • ইয়ুরি (Yuri)

জাপানি অ্যানিমেশন স্টুডিওসমূহের তালিকা

অ্যা

  • আনিমে ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি ইনকর্পোরেটেড (Anime International Company Inc.- 株式会社アニメ・インターナショナルカンパニ)
  • আর্মস কর্পোরেশন (Arms Corporation- 有限会社アームス)
  • আর্টল্যান্ড ইনকর্পোরেটেড (Artland, Inc.- 株式会社アートランド)
  • আসাহি প্রডাকশন (Asahi Production- 旭プロダクション)
  • আযিয়া-দো অ্যানিমেশন ওয়ার্কস (ajia-do Animation Works- 株式会社亜細亜堂)
  • অ্যাসরিড (Asread- アスリード)
  • অ্যাকটাস ইনকর্পোরেটেড (Actas Inc.- 株式会社アクタス)

  • ইম্যাজিন (Imagin イマジン)

বিখ্যাত অ্যানিমেশনসমূহ

[7]

  • এটেক অন টাইট্যান (進撃の巨人)
  • ৯১ ডেজ (91 Days)
  • আনো হি মিতা হানা নো নামাএ ও বকুতাচি ওয়া মাদা শিরানাই (あのひみた花の名前を僕たちわまだしらない)
  • এনাদার
  • আও হারু রাইড (アオハライド)
  • বকু দাকে গা ইনাই মাচি 僕だけがいないまち
  • ড্রাগন বল জি (Dragon Ball Z)
  • ফুলমেটাল অ্যালকেমিস্ট (鋼の錬金術師)
  • নারুটো (Naruto)
  • ওয়ান পিস (One Piece)
  • কোড গিয়াস (コードギアス )
  • ডেথ নোট (Death Note)
  • রুরোনি কেনশিন (るろうに剣心 )
  • গিনতামা (銀魂)
  • সোর্ড আর্ট অনলাইন (ソードアート・オンライン)
  • টোকিও গূল (東京喰種 -トーキョーグール)
  • হান্টার × হান্টার (Hunter × Hunter)
  • স্টেইনস গেট(Steins;Gate)
  • ওয়ান পাঞ্চ ম্যান (One Punch Man)
  • ক্ল্যানাদ (Clannad)
  • এঞ্জেল বিটস্! (Angel Beats!)
  • সাইকো-পাস্‌ (Psycho-Pass)
  • ব্লিচ (Bleach)
  • ফেয়ারি-টেল (Fairy Tail)
  • ইনুইয়াশা (Inuyasha)
  • মাগি দ্যা ল্যাবিরিন্থ অব ম্যাজিক (Magi The Labyrinth of Magic)
  • কিল লা কিল (Kill la Kill)
  • গ্রেট টিচার ওনিজুকা (জি.টি.ও.) (Great Teacher Onizuka)
  • এপ্রিলে তোমার মিথ্যা (Your Lie in April)
  • সোল ইটার (Soul Eater)
  • হাইস্কুল অব দ্যা ডেড (Highschool of the Dead)
  • নরাগামি (Noragami)
  • আরেকটি (Another)
  • নো গেম নো লাইফ (No Game No Life)
  • ডেট এ লাইভ (Date A Live)
  • ফ্রুট বাস্কেট (Fruits Basket)
  • এইটা কি একটা যম্বি? (これはゾンビですか?)
  • স্পাইস এন্ড ওলফ (Spice & Wolf)
  • মাই ব্রাইড ইজ এ মার্মেড (My Bride Is a Mermaid)
  • কাইচো ওয়া ম্যড - সামা (会長はメイド様!)

সম্পর্কীয় সংস্কৃতি

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Schodt, Frederik L. (Reprint edition (August 18, 1997))। Manga! Manga!: The World of Japanese Comics। ToKyo, Japan: Kodansha International। আইএসবিএন ISBN 0-87011-752-1 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য) এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  2. "A Brief History of Anime"Allen Butler। ২০০৭-০৭-২৮। ২০০৮-০২-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-১৪
  3. "Do Manga Characters Look "White"?" অজানা প্যারামিটার |accessyear= উপেক্ষা করা হয়েছে (|access-date= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |accessmonthday= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  4. "A Brief History of Anime"Michael O'Connell, Otakon 1999 Program Book। ১৯৯৯। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৯-১১
  5. Ohara, Atsushi (May 11, 2006)। "5 missing manga pieces by Osamu Tezuka found in U.S." (English ভাষায়)। Asahi.com। ২০০৬-০৫-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2006-08-29 অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  6. https://myanimelist.net/info.php?go=genre
  7. http://myanimelist.net/­topanime.php?type=byp­opularity

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.