অ্যাডা লাভলেস

অগাস্টা অ্যাডা বা লাভলেসের কাউন্টেস (জন্ম: ডিসেম্বর ১০, ১৮১৫ - মৃত্যু: নভেম্বর ২৭, ১৮৫২) কে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ধারণার একজন প্রবর্তক মনে করা হয়। তিনি চার্লস ব্যাবেজের অ্যানালাইটিক এঞ্জিনের একটি বর্ণনা লেখেন।

অ্যাডা লাভলেস
জন্মঅগাস্টা অ্যাডা বেরন
(১৮১৫-১২-১০)১০ ডিসেম্বর ১৮১৫
লন্ডন, ইংল্যান্ড
মৃত্যু২৭ নভেম্বর ১৮৫২(1852-11-27) (বয়স ৩৬)
লন্ডন, ইংল্যান্ড
কর্মক্ষেত্রগণিত, কম্পিউটিং

পুরো নাম তার অ্যাডা অগাস্টা কিং, আর ডাকা হতো কাউন্টেস অফ লাভলেস বা শুধুই অ্যাডা লাভলেস নামে। তার জন্ম হয় লন্ডনের সম্ভ্রান্ত পরিবারে কবি লর্ড বায়রনের কন্যা এবং একমাত্র সন্তান হিসেবে। অ্যাডা মাত্র ৩৬ বছর বেঁচে ছিলেন। ১৮৫২ সালের ২৭ নভেম্বর তার মৃত্যু হয়, জরায়ুর ক্যান্সার এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে।

স্যার চার্লস উইলিয়াম ব্যাবেজ যখন তার ডিফারেন্স মেশিন বা এনালিটিক্যাল এঞ্জিন নামক কম্পিউটার আবিষ্কারের নেশায় মত্ত, তখন অ্যাডা তার গণিতবিষয়ক বিশ্লষণী ক্ষমতার দ্বারা বুঝতে পেরেছিলেন এই কম্পিউটারগুলোর নাম্বার ক্রাঞ্চিং এর অমিত সম্ভাবনা সম্পর্কে । সে চার্লস ব্যাবেজ তাই লিখে গেছেন তার Decline of Science in England এই বইয়ে। আর এমন একটা সময়ে এই অসামান্যা নারী চার্লস ব্যাবেজকে যেসব সম্ভাবনার কথা জানান তা তার কাজকে আরো বেগবান করেছিল। অ্যাডা অগাস্টা’কে এখন বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার ধরা হয়।

বায়রনের সৎ-বোন অগাস্টা লেই এর নামে মেয়ের নাম রাখা হয়, আর বায়রন তাকে অ্যাডা নাম দেন। মাত্র একমাস যখন অ্যাডা’র বয়স তখন থেকে তার মা অ্যানাবেলা তাকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান।

ছোট থেকেই অ্যাডা কিছুটা অসুস্থ্তায় ভূগছিলেন, প্রচণ্ড মাথাব্যথা হতো এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা হতো। ১৮২৪ সালে তার বাবা মারা যান, যদিও তিনি তার দায় বহন করতেন না। ১৮২৯ থেকে তিনি হাম এবং পক্ষাঘাতগ্রস্ততায় ভূগছিলেন। কিন্তু ক্র্যাচে ভর দিয়ে হলেও শিক্ষা চালিয়ে গিয়েছেন। ১৮৩২ এ যখন তার বয়স ১৭ তখন তার বিশেষ গাণিতিক প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। তার ছেলেবেলা থেকেই মা তাকে গণিতে দক্ষ করে তুলতে চাইতেন বাবার প্রভাব যাতে কোনোভাবেই মেয়ের মধ্যে প্রতিফলিত না হয় এই ভেবে। ১৮৪১ সালের অ্যাডা জানতেনই না লর্ড বায়রন তার বাবা। বাসায় গৃহশিক্ষকেরা বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দিতেন তাকে। গণিতজ্ঞ ও যুক্তিবিদ ডি-মরগ্যান তার শিক্ষক ছিলেন!। স্যার চার্লস ডিকেন্স, স্যার চার্লস হুইটস্টোন এবং বিজ্ঞানি মাইকেল ফ্যারাডে’র সাথেও তার জানাশোনা ছিল। ১৮৩৩ সালের ৫ জুন তার সাথে পরিচয় হলে তিনি বিশ্ববিখ্যাত স্যার চার্লস ব্যাবেজর এনালিটিক্যাল ইঞ্জিনকে কাজে লাগানোর জন্য'প্রোগ্রামিং'এর ধারনা দেন। ১৮৪২সালে ব্যাবেজ তুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ইঞ্জিন সম্পর্কে ধারণা দেন। অ্যাডা তাকে এ বিষয়ে সাহায্য ক।

চার্লস ব্যাবেজের সঙ্গে তার বেশ ঘনিষ্ঠ এবং রোম্যান্টিক সম্পর্কও গড়ে ওঠে। ব্যাবেজ অ্যাডার অসাধারণ ধীশক্তি, সাবলিল লেখনী এবং প্রতিভায় মুগ্ধ ছিলেন। ব্যাবেজ অ্যাডা সম্পর্কে নিজের লেখায় অ্যাডাকে অাখ্যা দিয়েছেন।

চার্লস ব্যাবেজ, যিনি তার সময়ের লোকদের কাছে অনেকটা পাগল হিসেবেই পরিচিত ছিলেন, তার নতুন ধ্যান ধারণাকে মাত্র গুটিকয়েক যে ক’জন বুঝতে পেরেছিলেন তন্মধ্যে অ্যাডা অগ্রগণ্য। যদিও ইতিহাসবেত্তাদের গলদঘর্ম হতে হয়, অ্যাডা কতোটা প্রভাব বিস্তার করেছিলেন ব্যাবেজের উদ্ভাবনী কাজে তা খুঁজে পেতে। কেননা, ব্যাবেজ কারো প্রতি কৃতজ্ঞতা সচেতনভাবে স্বীকার করেননি। লেডি অ্যানি ব্লান্ট ছিলেন, তার কন্যা যিনি মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণ করেন এবং সেখানে উন্নত প্রজাতির ঘোড়ার সংকর ঘটান। তাকে মর্যাদা দিতে আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রণিত প্রোগ্রামিং ভাষার নামও রাখা হয় অ্যাডা।

কনসিভিং অ্যাডা নামে তাকেঁ নিয়ে একটি চলচিত্র নির্মিত হয়েছে। মাইক্রোসফটের প্রোডাক্ট অথেনটিসিটি হলোগ্রামে তার ছবিও আছে।

কম্পিউটিং এবং প্রোগ্রামিং এ বিশেষ অবদানের কারণে ২৪ মার্চকে অ্যাডা লাভলেস দিবস হিসেবে বিশ্বব্যাপী উদযাপন করা হয়ে থাকে।

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.