পোলিও

পোলিওমাইলিটিজ (/pliməltɪs/) এক ধরনের ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। সচরাচর এটি পোলিও নামেই সর্বাধিক পরিচিত। এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তি এ ধরনের ভাইরাসের মাধ্যমে আক্রান্ত হন।[1] এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সাময়িক কিংবা স্থায়ীভাবে শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হন ও তার অঙ্গ অবশ বা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। সাধারণতঃ এ সংক্রমণ শিশুসহ কিশোরদের মাঝে প্রবাহিত হয়ে থাকে। শতকরা ৯৫ ভাগেরও অধিক পোলিও আক্রান্ত রোগীর শরীরে কোন উল্লেখযোগ্য দৃশ্যমান উপসর্গ কিংবা স্বল্পমাত্রার উপসর্গ দেখা যায় না। কেবলমাত্র রক্তে প্রবাহিত হয়ে আক্রান্ত হবার মাত্র কয়েকদিন পূর্বে তা দৃশ্যমান হয়।[2] এ ভাইরাসটি মানবদেহের স্নায়ুতন্ত্রে প্রবেশ করে ও মাংসপেশীকে নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুকোষকে আক্রান্ত করে। এরফলে ব্যক্তির শরীর পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত স্থানটি সাধারণতঃ পায়ে হয়ে থাকে। এছাড়াও এর ধ্বংসাত্মক প্রবণতা মানুষের মস্তিষ্কে ঘটে যা জটিল থেকে জটিলতর হয়। কখনো কখনো এটি মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেহেতু পোলিংও শিশুদেরকেই অধিক আক্রান্ত করে, তাই এটি অপরিপক্ক পক্ষাঘাত নামে পরিচিত।

পোলিওমাইলিটিজ
পোলিও আক্রান্ত শিশু
শ্রেণীবিভাগ এবং বহিঃস্থ সম্পদ
বিশিষ্টতাসংক্রামক রোগ[*]
আইসিডি-১০A৮০, B৯১
আইসিডি-৯-সিএম০৪৫, ১৩৮
ডিজিসেসডিবি১০২০৯
মেডলাইনপ্লাস০০১৪০২
ইমেডিসিনped/1843 pmr/৬
মেএসএইচC02.182.600.700 (ইংরেজি)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩২তম রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট পোলিও আক্রান্ত ছিলেন বলে তার ডাক্তারগণ ধারণা করেছিলেন।

ইতিহাস

পোলিওমাইলিটিজ পারিভাষিক শব্দটি প্রাচীন গ্রিক poliós (πολιός), অর্থ "ধূসর", myelós (µυελός) “রজ্জু” থেকে উৎপত্তি হয়েছে।[3]

১৮৪০ সালে জার্মান অর্থোপেডিক সার্জন জ্যাকব হেইন সর্বপ্রথম পোলিওমাইলিটিজ আবিষ্কার করেন।[4] এর প্রধান উপাদান পোলিওভাইরাস জীবাণুর উপস্থিতি চিহ্নিত করেন কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার।[4] হাজার হাজার পূর্বে কয়েকটি নির্ধারিত এলাকায় পোলিও বিরাজমান ছিল যা প্রাচীন চিত্রকর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। ঊনবিংশ শতকের শেষার্ধ্বে ইউরোপ ও পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে পোলিও মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে।[5] বিংশ শতকে এসে এ রোগটিকে শিশুদের প্রধান ভয়ানক রোগের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯১০ সালের মধ্যে বিশ্বে নাটকীয়ভাবে পোলিও আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়তে থাকে ও মহামারী নিয়মিতভাবে সংঘটিত হতো। বিশেষ করে শহরে গ্রীষ্মকালে এ রোগ দেখা দিতো বেশী। এ রোগে হাজারো শিশু ও কিশোরদেরকে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হতো। ফলে পোলিও টিকা আবিষ্কারের দিকে সকলেই ঝুকতে থাকেন। ১৯৫০-এর দশকে পোলিও টিকা আবিষ্কার হলে আক্রান্তের সংখ্যা হাজারে একজন এসে দাঁড়ায়।[6]

প্রতিষেধক

পোলিও টিকা খাওয়ানোর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী এ রোগকে নিয়ন্ত্রণ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। প্রধানতঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ কার্যক্রমের সাথে জড়িত।[7] সংস্থাটি টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করায় বিশ্বের প্রায় সকল দেশ থেকে পোলিও নির্মূল করতে সক্ষমতা দেখিয়েছে।[6][8] ১৯৮৮ সালে যেখানে বিশ্বব্যাপী প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ রোগী ছিল, সেখানে ২০০৭ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ১,৬৫২।[9][10][11] বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পাশাপাশি রোটারি ইন্টারন্যাশনাল, ইউনিসেফ টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করে বিশ্ব থেকে এ রোগ নির্মুলে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।[12][13][14] কিন্তু ২০১৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে সিরিয়ায় এ ধরনের রোগীর সন্ধান পাওয়ায় তাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে।[15]

তথ্যসূত্র

  1. Cohen JI (২০০৪)। "Chapter 175: Enteroviruses and Reoviruses"। Kasper DL, Braunwald E, Fauci AS, et al. (eds.)। Harrison's Principles of Internal Medicine (16th সংস্করণ)। McGraw-Hill Professional। পৃষ্ঠা 1144। আইএসবিএন 0071402357।
  2. Ryan KJ, Ray CG (eds.) (২০০৪)। "Enteroviruses"। Sherris Medical Microbiology (4th সংস্করণ)। McGraw Hill। পৃষ্ঠা 535–7। আইএসবিএন 0-8385-8529-9।
  3. Chamberlin SL, Narins B (eds.) (২০০৫)। The Gale Encyclopedia of Neurological Disorders। Detroit: Thomson Gale। পৃষ্ঠা 1859–70। আইএসবিএন 0-7876-9150-X।
  4. Paul JR (১৯৭১)। A History of Poliomyelitis। Yale studies in the history of science and medicine। New Haven, Conn: Yale University Press। পৃষ্ঠা 16–18। আইএসবিএন 0-300-01324-8।
  5. Trevelyan B, Smallman-Raynor M, Cliff A (২০০৫)। "The Spatial Dynamics of Poliomyelitis in the United States: From Epidemic Emergence to Vaccine-Induced Retreat, 1910–1971"Ann Assoc Am Geogr95 (2): 269–93। doi:10.1111/j.1467-8306.2005.00460.x। PMID 16741562পিএমসি 1473032
  6. Aylward R (২০০৬)। "Eradicating polio: today's challenges and tomorrow's legacy"। Ann Trop Med Parasitol100 (5–6): 401–13। doi:10.1179/136485906X97354। PMID 16899145
  7. Heymann D (২০০৬)। "Global polio eradication initiative"Bull. World Health Organ.84 (8): 595। PMID 16917643
  8. Schonberger L, Kaplan J, Kim-Farley R, Moore M, Eddins D, Hatch M (১৯৮৪)। "Control of paralytic poliomyelitis in the United States"। Rev. Infect. Dis.। 6 Suppl 2: S424–6। PMID 6740085
  9. Centers for Disease Control and Prevention (CDC) (২০০৬)। "Update on vaccine-derived polioviruses"MMWR Morb. Mortal. Wkly. Rep.55 (40): 1093–7। PMID 17035927 অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  10. Kew O, Sutter R, de Gourville E, Dowdle W, Pallansch M (২০০৫)। "Vaccine-derived polioviruses and the endgame strategy for global polio eradication"Annu Rev Microbiol59: 587–635। doi:10.1146/annurev.micro.58.030603.123625। PMID 16153180
  11. "Wild Poliovirus Weekly Update"। Global Polio Eradication Initiative। ২০০৮-১১-২৫। ২০০৮-০৬-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-২৯
  12. WHO | Global leaders support new six-year plan to deliver a polio-free world by 2018
  13. Heymann D (২০০৬)। "Global polio eradication initiative"Bull. World Health Organ.84 (8): 595। doi:10.2471/BLT.05.029512। PMID 16917643পিএমসি 2627439। ৩০ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
  14. McNeil, Donald (১ ফেব্রুয়ারি ২০১১)। "In Battle Against Polio, a Call for a Final Salvo"। New York Times। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০১১; excerpt, "... getting rid of the last 1 percent has been like trying to squeeze Jell-O to death. As the vaccination fist closes in one country, the virus bursts out in another .... The [eradication] effort has now cost $9 billion, and each year consumes another $1 billion."
  15. CNN Staff, 26 November 2013, More polio cases confirmed in Syria, WHO says Accessed 26 November 2013

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:CNS diseases of the nervous system

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.