কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি
কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি (স্পেনীয় ভাষা : Partido Comunista de Cuba, PCC) হল কিউবার বর্তমান শাসক রাজনৈতিক দল। এটি একটি মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী সংগঠন। কিউবার অধুনা সংবিধানে পার্টির ভূমিকা আলোচিত হয়েছে এইভাবে যে, "পার্টি সমাজ এবং রাষ্ট্রের নেতৃত্বদানকারী চালিকাশক্তি"। পার্টির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হলেন রাউল কাস্ত্রো, উপ-সাধারণ সম্পাদক হলেন José Ramón Machado।
কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি | |
---|---|
![]() | |
সাধারণ সম্পাদক | রাউল কাস্ত্রো |
উপ-সাধারণ সম্পাদক | José Ramón Machado |
প্রতিষ্ঠাতা | ফিদেল কাস্ত্রো |
প্রতিষ্ঠা | জুলাই ১৯৬৫ |
সদর দপ্তর | হাভানা, কিউবা |
সংবাদপত্র | গ্রানমা |
যুব শাখা | যুব কমিউনিস্ট লিগ |
সদস্যপদ (১৯৯৭) | ৭৮০,০০০ |
মতাদর্শ | কমিউনিজম, মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ, কাস্ত্রোবাদ |
আন্তর্জাতিক অধিভুক্তি | International Meeting of Communist and Workers' Parties, International Communist Seminar |
আঞ্চলিক অধিভুক্ততা | সাও পাওলো ফোরাম, COPPPAL |
ওয়েবসাইট | |
http://www.pcc.cu/ | |
See Politics of Cuba for more information. |
ইতিহাস
কিউবার প্রজাতন্ত্রের সূচনালগ্ন থেকেই কিউবায় বহু কমিউনিস্ট এবং নৈরাজ্যবাদী সংগঠনের অস্তিত্ব ছিল। আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২০-র দশকে। পরবর্তীকালে নির্বাচনী প্রয়োজনে দলটির নাম পরিবর্তিত করে রাখা হয় পপ্যুলার সোশ্যালিস্ট পার্টি। ১৯৫৯ সালের বিপ্লবের দু'বছর পর ১৯৬১ সালের জুলাই মাসে ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বাধীন "২৬ জুলাই আন্দোলন", ব্লাস রোকার নেতৃত্বাধীন "পপ্যুলার সোশ্যালিস্ট পার্টি", এবং "রেভলিউশনারি ডিরেক্টরি মার্চ ১৩" মিলিত হয়ে গঠন করে "সম্মিলিত বিপ্লবী সংগঠনসমূহ"। ১৯৬১ সালের ২৬ মার্চ এই সম্মিলিত সংগঠনটির নামকরণ হয় "সংযুক্ত কিউবার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি"। ১৯৬৫ সালের ৩ অক্টোবর এই সংগঠনটি পুনরায় নাম পরিবর্তিত করে হয় "কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি"। বর্তমানে কিউবায় কমিউনিস্ট পার্টিই হল একমাত্র স্বীকৃত রাজনৈতিক দল। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি অবৈধ ঘোষিত না হলেও তাদের এই দ্বীপরাষ্ট্রে এমন কোন প্রচার চালানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ যা প্রতিবিপ্লবের সূচনা করতে পারে।
আনুষ্ঠানিক ভাবে গঠিত হওয়ার প্রথম পনেরো বছর পর্যন্ত পলিটব্যুরোর বাইরে কমিউনিস্ট পার্টি ছিল সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়। ১০০ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক খুব কমই অনুষ্ঠিত হত এবং প্রতিষ্ঠার প্রায় দশ বছর পরে দলের প্রথম নিয়মিত পার্টি কংগ্রেস আয়োজিত হয়। ১৯৬৯ সালে দলটির সদস্যসংখ্যা ছিল মাত্র ৫৫০০০, অর্থাৎ কিউবার মোট জনসংখ্যার ০.৭%। এর ফলে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি ছিল বিশ্বের ক্ষুদ্রতম শাসক রাজনৈতিক দল। ১৯৭০-এর দশকে পার্টির সংগঠন বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ১৯৭৫ সালে আয়োজিত প্রথম পার্টি কংগ্রেসের সময় পার্টির সদস্যসংখ্যা ছিল দুই লক্ষেরও অধিক। এই সময় কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক নিয়মিত অনুষ্ঠিত হতে থাকে এবং সমাজে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বদানকারী ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ১৯৮০ সালে পার্টির সদস্যসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩০০০০ এবং ১৯৮৫ সালে তা আরও বর্ধিত হয়ে হয় ৫২০০০০। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে প্রবল সঙ্কট দেখা দেওয়ায় দলের চতুর্থ পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে বিতর্ক এবং আলোচনার পথ প্রশস্ত রাখা হয় যাতে সেই বিশেষ সময়ে জনমত গঠন করা যায়। প্রায় তিন লক্ষ মানুষ রাজনৈতিক কাঠামো এবং অর্থনৈতিক নীতি সংক্রান্ত সেই প্রাক্-কংগ্রেস বিতর্ক এবং আলোচনায় অংশ নেন। ১৯৯১ সালের পার্টি কংগ্রেসে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টিকে কেবলমাত্র "শ্রমিকশ্রেণির পার্টি" হিসেবে উল্লেখ না করে "কিউবান জাতির পার্টি" হিসেবে অভিহিত করা হয়।
কাঠামো
কিউবার কমিউনিস্ট পার্টর প্রথম পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৫ সালে এবং পরবর্তী কংগ্রেসগুলি অনুষ্ঠিত হয় যথাক্রমে ১৯৮০, ১৯৮৬, ১৯৯১, এবং ১৯৯৭ সালে। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে একটি ঘোষণা অনুসারে, ২০০৯-এ অনুষ্ঠেয় দলের ষষ্ঠ পার্টি কংগ্রেস অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে[1] পিছিয়ে দেওয়া হয়[2]।
১৯৯১ সাল পর্যন্ত দলের শীর্ষ অংশ ছিল পলিটব্যুরো এবং সচিবালয়। কিন্তু ১৯৯১ সাল থেকে এই দু'টি অংশকে একত্রিত করে ২০ সদস্যের অধিক সদস্য বিশিষ্ট একটি বর্ধিত পলিটব্যুরোয় রূপ দেওয়া হয়। কিন্তু ২০০২ সালে পুনরায় সচিবালয় গঠন করা হয়। এছাড়া দলের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি রয়েছে যার সদস্যবৃন্দ দু'টি পার্টি কংগ্রেসের ব্যবধানে মিলিত হন। দলের পঞ্চম পার্টি কংগ্রেসে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা ২২৫ থেকে কমিয়ে ১৫০ করে দেওয়া হয়।
১৯৯৭ সালে দলের পঞ্চম পার্টি কংগ্রেসের সময়ে দলের সদস্যসংখ্যা ছিল ৭৮০০০০ এর অধিক। কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির যুব কমিউনিস্ট লিগ নামে কটি যুব সংগঠনও রয়েছে যেটি সোভিয়েত কমসোমোলের আদলে গঠিত।
মতাদর্শ
কমিউনিস্ট পার্টিসমূহ |
---|
![]() |
আফ্রিকা ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() |
উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() |
এশিয়া ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ঐতিহাসিক দলসমূহ ![]() ![]() ![]() |
ইউরোপ ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() |
মধ্যপ্রাচ্য ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() ![]() |
সম্পর্কিত বিষয়সমূহ |
বিশ্বের অন্যান্য শাসক কমিউনিস্ট পার্টি যেমন, ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টি, চিনের কমিউনিস্ট পার্টি, লাও গণবিপ্লবী পার্টি, ইত্যাদির সাথে তুলনামূলক বিচারে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ অনুশীলনে তাদের কট্টরপন্থী অবস্থানে প্রবল ভাবে অনড় থেকেছে। কিউবার পার্টি এখনও প্রথাগত সমাজতান্ত্রিক ধারণার প্রতি গভীরভাবে দায়বদ্ধ থাকার পরিচয় দিয়ে চলেছে। অন্যান্য শাসক কমিউনিস্ট পার্টিসমূহের রীতি মেনে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি এখনও অর্থনৈতিক সংস্কারের পথে হাঁটেনি, যদিও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আর্থিক ভর্তুকির অভাবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা বাজার অর্থনীতিকে স্বাগত জানাতে বাধ্য হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনকে প্রত্যক্ষ সমর্থন করার ক্ষেত্রেও কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এক্ষেত্রে তাদের সর্বাধিক তাৎপর্যপূর্ণ আন্তর্জাতিক ভূমিকা ছিল অ্যাঙ্গোলায় কুইতো কুয়ানাভালের যুদ্ধে[3][4] । কিন্তু সোভিয়েত পতনের পর প্রবল অর্থনৈতিক ঘাটতি তাদের এই নীতি থেকে সরে আসতে বাধ্য করে। কিন্তু কমিউনিস্ট পার্ট এখনও বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলিতে চিকিৎসক, ইত্যাদি প্রেরণ করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে থাকে। অতি সম্প্রতি কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি ভেনেজুয়েলার উগো শাভেজের মত বিভিন্ন দেশের বামপন্থী নেতাদের সমর্থনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
পাদটীকা
- "Cuba suspends Communist party congress due to economic crisis | World news | guardian.co.uk"। Guardian। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০১-১৩।
- "Cuba postpones Communist Party Congress"। CNN.com। ২০০৯-০৭-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০১-১৩।
- Michael Evans। "Secret Cuban Documents on History of Africa Involvement"। Gwu.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০১-১৩।
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৬ জুন ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১০।