মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (অধুনা বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন) একজন সদস্য ছিলেন এবং সংগঠনটির এস.এম. হল শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সময়ে তিনি সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলেন।[2]

১৯৮৬ সালে পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে মির্জা ফখরুল তার শিক্ষকতা পেশা থেকে অব্যাহতি নেন এবং সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৮৮ সালের ঠাকুরগাঁও পৌরসভার নির্বাচনে অংশ নিয়ে পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জেনারেল এরশাদের সামরিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যখন দেশব্যাপী আন্দোলন চলছে, তখন মির্জা ফখরুল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-তে যোগদান করেন। ১৯৯২ সালে মির্জা ফখরুল ঠাকুরগাঁও বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন।[2] একইসাথে জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের সহ-সভাপতির দয়িত্ব পালন করেন।[2]

মির্জা ফখরুল ১৯৯১ সালে পঞ্চম ও ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচন করে যথাক্রমে ৩৬,৪০৬ ও ৫৮,৩৬৯ ভোট পান এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থী খাদেমুল ইসলামের কাছে পরাজিত হন।[3]

২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেনের সাথে প্রতিযোগীতা করে ১,৩৪,৯১০ পেয়ে জয়লাভ করেন ও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[3] একই বছর নভেম্বরে বিএনপি সরকার গঠন করলে প্রথমে তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও পরবর্তীতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০০৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন।

মির্জা ফখরুল ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেনের প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে পরাজিত হন।[3] ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি একই সাথে ঠাকুরগাঁও-১ ও বগুড়া-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন লাভ করেন এবং বগুড়া-৬ আসনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।[3]

২০০৯ সালের ডিসেম্বরে বিএনপির ৫ম জাতীয় সম্মেলনে মির্জা ফখরুলকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব পদে নির্বাচিত হন। এই পদটিতে এর আগে তারেক রহমান বহাল ছিলেন। তারেক রহমান এই সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যানের পদ লাভ করেন।[4] একই সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং মির্জা ফখরুল বিরোধী দলীয় মুখপাত্র হিসেবে গণমাধ্যমে পরিচিতি পান।

২০শে মার্চ ২০১১ বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব খন্দকার দেলওয়ার হোসেন মৃত্যুবরণ করার পর দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ঘোষণা করেন।[5] ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর দলের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতা এই মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। কেউ কেউ বলেন বিএনপির সংবিধানে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের কোন বর্ণনা নেই।[6][7] কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া ২১ মার্চ ২০১১ তারিখে সৌদি রাজপরিবারের আমন্ত্রণে সৌদি আরব যাবার আগমুহুর্তে মির্জা ফখরুলকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ঘোষণা করে গেলে এই সংক্রান্ত বিভ্রান্তির অবসান ঘটে।[5] ২০১৬ সালের ১৯শে মার্চ দলটির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে মির্জা ফখরুল মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন।[8][9]

বিরোধী দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালনকালে মির্জা ফখরুল বিভিন্ন ইস্যুতে আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। এছাড়া দেশব্যাপী বিএনপির একাধিক বিক্ষোভ ও আন্দোলন কর্মসূচীর নেতৃত্ব দেন, যেগুলো অধিকাংশেরই কেন্দ্রে ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবী।[10]