হেলেন

গ্রিক পুরাণ অনুসারে হেলেন (গ্রিক ভাষা: Ἑλένη, Helénē) হল জিউসলেডার কণ্যা এবং স্পার্টার রাজা মেনিলাউসের স্ত্রী। হেলেন সাধারণত ট্রয়ের হেলেন নামে বিশেষ পরিচিত। তার ভাই-বোনদের নাম হচ্ছে: ক্যাস্টর, পলিডিউসিস এবং ক্লিটেমনেসট্রা। ট্রয়ের রাজপুত্র প্যারিস হেলেনকে নিয়ে স্পার্টা থেকে ট্রয়ে পালিয়ে এসেছিল। এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্যই মেনিলাস যুদ্ধযাত্রা করে এবং ট্রোজান যুদ্ধের সূত্রপাত হয়।

("হেলেন'" এখানে পুনর্নির্দেশ হয়। "হেলেন নামের অন্যান্য চরিত্রদের জন্য দেখুন হেলেন (দ্ব্যর্থতা নিরসন))
হেলেন। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর একটি ভেসের চিত্র

বুৎপত্তি

হেলেন শব্দটি সম্ভবত আলোকবর্তিকা বা corposant শব্দের গ্রিক প্রতিশব্দ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। আবার এটি selene শব্দের সাথেও সম্পর্কিত হতে পারে। selene শব্দের অর্থ চাঁদ।[1] এছাড়া হেলেন শব্দটির একটি ইন্দো-ইউরোপীয় বুৎপত্তিও রয়েছে। এটি সম্ভবত প্রাক-ইন্দো ইউরোপীয় কোন একটি মূলের অনুসর্গ থেকে এসেছে। মূল হিসেবে কয়েকটি শব্দকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন: wel যার অর্থ উল্টানো বা ঘোরানো কিংবা আচ্ছাদিত করা বা আবদ্ধ করা (বরুণার সাথে তুলনীয়) ; sel যার অর্থ প্রবাহিত হওয়া বা দৌড়ানো। পরবর্তী মূলটি অনেকটা বেদীয় সংস্কৃতে উল্লেখিত Saraṇyū'র সাথে মিলে যায়। এই নামটি ঋগ্বেদের ১০.১৭.২ অংশে উল্লেখিত আছে। প্রাক ইন্দো ইউরোপীয় পুরাণের এখানেই হেলেনের সমগোত্রীয় একটি চরিত্রের দেখা পাওয়া যায়। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে গ্রিক শব্দ Hellenes এর সাথে এই হেলেন নামের কোন সম্পর্ক নেই যদিও মাঝে মাঝে তা দাবী করা হয়। Hellenes শব্দটির মূল হচ্ছে sed যার অর্থ বসা বা স্থায়ী হওয়া।

ভূমিকা

তিন হাজার বছরেরও আগের কথা। মাত্র একজন নারীকে উদ্ধার করতে এজিয়ান সাগর পাড়ি দিল এক হাজার জাহাজ।তখনও দুনিয়ার সেরা সুন্দরী হিসেবে তাকেই মনে করা হতো। যদিও এই সৌন্দর্যের কারনেই সুখী হতে পারেননি তিনি । তার জন্য ট্রয়ের যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ দিল হাজার হাজার যোদ্ধা। ধুলোয় মিশে গেলে সুখী ও সমৃ্দ্ধিশালী একটি জনপদ -ট্রয়। সেই তিনি হচ্ছেন হেলেন। হেলেন শব্দটি এসেছে প্রাচীন গ্রিক শব্দ ‘টর্চ’ থেকে। তবে গ্রিক ভাষায় হেলেন শব্দের মূল শব্দ হচ্ছে ‘ জ্বলন্ত কিছু’ । যদিও গ্রিকরা তাকে ডাকত হেলেন বলে। কারণ হেলেন শব্দটি পুরুষবাচক। অনেকে মনে করেন হেলেন নামে কেউ ছিলেনই না। দেবী আফ্রোদিতিই হেলেন নাম নিয়ে মর্ত্যে নেমে এসেছিলেন। তারপর আশ্রয় নিয়েছিলেন স্পার্টার রাজা টিন্ডারাসের প্রাসাদে। স্পার্টার দক্ষিণ-পূর্বের থেরেপনিতে হেলেনের মন্দির পাওয়া গেছে ১৮৩৩ এবং ১৮৪১ সালে । কারো মন্দির পাওয়া মানে হলো, একসময় তাকে পূজা করা হতো। পুজো তো আর দেব-দেবী ছাড়া সাধারণ মানুষকে করা হতো না, তা সেই মানুষটা যতই ক্ষমতাবান হোক না কেন। স্পার্টার মানুষ হেলেনকে দেবী হিসেবেই পুজো করত। যদিও জিউসকণ্যা হিসেবেও হেলেনের একটা আলাদা পরিচয় ছিল।হেলেনের মন্দির নিয়ে বিস্তর গবেষণা করে প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা হেলেন ছিলেন উর্বরতা আর নিরামিষের দেবী। হেলেনের মন্দির যখন আবিষ্কৃত হয়েছে, তখন ট্রয়ও আছে নিশ্চয়েই। ট্রয় নগরীটা কোখায় ছিল? গ্রিক ভাষায় ট্রয়কে বলা হয় ত্রাইয়া বা ইলিয়ন। প্রাচীন গ্রিসের অনেক মহাকাব্যেই ট্রয়ের উপস্থিতি দেখা যায়। হোমারের দুই মহাকাব্যর একটি ইলিয়াড। ইলিয়াডের অনেক খানি অংশ জুড়ে আছে ট্রয়। তবে হোমারের কাহিনীতে কল্পকাহিনীর পরিমাণ এতো বেশি ছিল যে, অনেকে মনে করতেন বাস্তবে ট্রয় নামে কোনো নগরের অস্তিত্ব ছিলই না। ধ্বংসপ্রাপ্ত এ নগরীকে খুঁজে বের করেন হাইনরিখ স্লাইম্যান নামে এক জার্মান ব্যবসায়ী। ট্রয়ের তুর্কি নাম ত্রুভা। তুরস্কের আনাতোলিয়া অঞ্চলের হিসারলিক নামক জায়গায় এর অবস্থান। অর্থ্যাৎ এখনকার হিসারলিক শহরটাই হচ্ছে প্রাচীন ট্রয় নগরী। তুরস্কের কানাক্কাল প্রদেশের সমুদ্র সৈকতের কাছে এবং আইডা পর্বতের নিচে দার্দানেলিসের দক্ষিণ পশ্চিমেই হিসারলিক শহর। ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের জায়গায় যুক্ত হয় ট্রয়।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.