হানবালি

হাম্বলি বা হানবলি (আরবি: حنبلى) হল প্রসিদ্ধ চার সুন্নি ইসলাম সম্প্রদায়ভুক্ত একটি মাযহাব। এই মাযহাবের নামকরণ আহমদ ইবনে হাম্বল নামে এবং এর বিস্তার তার সঙ্গী ও ছাত্রদের দ্বারা হয়েছে।

এ মাযহাবের একটি প্রসিদ্ধ বই হলো, "আল মুগনি", যা ইমাম ইবনে কুদামাহ্ আল মাকদিসী(রহিমাহুল্লাহ্) লিখেছেন। এতে অন্য মাযহাবের(ফিকহের) মাস'আলাসমূহ লিপিবদ্ধ থাকায় একে "তুলনামূলক ফিকহের (আল ফিকহ্ আল-মুকারান) " এর অন্তর্ভূক্ত বই বলা হয়।

এ ফিকহের আরও বই রয়েছে, তন্মধ্যে কয়েকটি হলো, "উমদাতুল ফিকহ্", "মুখতাসার আল-খিরাকী", "যাদুল মুসতাকনি" ইত্যাদি।

মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল(রহিমাহুল্লাহ্)

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল হচ্ছে এই মাযহাবের ইমাম, অর্থাৎ এই মাযহাবের পরবর্তীরা ইমাম আহমদের উসুল অনুসরণ করে চলেন। ইমাম আহমদের বিশেষত্ব হচ্ছে তিনি ছিলেন দশ লক্ষ হাদিসের হাফিয, এবং তিনি সেসকল হাদিসের সনদ মুখস্ত করেছেন এবং হাদিসের মান নির্ণয় করতে পারতেন। এই কারণে, হাম্বলি মাযহাব হাদিসের তাহকিকের ক্ষেত্রেও ইমাম আহমদের উপর জোরালোভাবে নির্ভরশীল। আর স্বাভাবিকভাবেই ইমাম আহমদ ছিলেন আহলুল-হাদিস ধারার ফকিহ, এবং মুহাদ্দিসগণের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ অথবা শ্রেষ্ঠ ফকিহগণের একজন। সুন্নাহর ব্যাপারে ইলম সম্পর্কে ইবনে রজব আল-হাম্বলি বলেনঃ

"এ তো সুপ্রসিদ্ধ এবং সর্বজবিদিত বিষয়। এ ব্যাপারে সকলের ইজমা রয়েছে। তিনি ছিলেন হাদিস সুন্নাহর ঝাণ্ডাধারী; তাঁর সময়ে রাসুলের হাদিস এবং সাহাবা- তাবিয়িনের বক্তব্যের ব্যাপারে তিনি ছিলেন সবচে বেশি অবগত।" [মাযহাব বিরোধিতার খণ্ডন; পৃষ্ঠা- ৩৪]

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ছিলেন সুন্নিদের মধ্যে চার ইমামের শেষ ইমাম। তিনি ইমাম শাফেয়ির ছাত্র ছিলেন এবং পূর্ববর্তী ইমামগণ হতে উপকৃত হয়েছিলেন। এছাড়া ইমাম আহমদ তার যুহদের জন্যে এবং তাকওয়ার জন্যে খুবই বিখ্যাত ছিলেন। মিশরীয় হানাফি আলিম মুহাম্মাদ আবু জাহরা তার রচিত ইমাম আহমদের জীবনীতে বলেনঃ

"কেউ যদি বলে আহমাদ ইবনে হানবাল জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত, তাহলে সেই ব্যক্তিকে এর জন্যে তিরস্কার করা হবে না। কারণ আপনি যদি খোরসানে যান, আপনি সেখানে মানুষকে বলতে শুনবেন 'আহমাদ ইবনে হানবাল একজন ন্যায়নিষ্ঠ/ধার্মিক মানুষ।' একই ব্যাপার খাটে যদি আপনি সিরিয়ায় যান, তারাও বলবে- 'আহমাদ ইবনে হানবাল একজন নিষ্ঠাবান/ধার্মিক মানুষ।' একই ব্যাপার ঘটবে যদি আপনি ইরাকে যান, তারাও বলবে- 'আহমাদ ইবনে হানবাল একজন নিষ্ঠাবান/ধার্মিক মানুষ।' এটা হচ্ছে ইজমা [ঐক্যমত্য], সুতরাং সেই ব্যক্তিকে যদি তাঁর মতের জন্যে তিরস্কার করা হয়, ব্যাপারটা হবে অনেকটা বলার মত যে, এই ইজমাটি ভুল ছিল।'

এটা হচ্ছে ইমাম আহমদ (র) সম্পর্কে তাঁর সমসাময়িক একজন মুহাদ্দিসের বক্তব্য। তিনি ইমাম আহমদ (র) সম্পর্কে তাঁর অভিমত ব্যক্ত করে ফুটিয়ে তুলেছেন (ইমাম আহমদ-এর) সকল সমসাময়িকের চোখে তিনি কেমন ছিলেন। মুসলিম উম্মাহর সকল জায়গার মানুষই একমত হয়েছেন যে ইমাম আহমদ (র) একজন নিষ্ঠাবান ব্যক্তি ছিলেন, এবং তাঁর নিষ্ঠা, আল্লাহর প্রতি ভয়, প্রচণ্ড সতর্কতা, বিশ্বাসের দৃঢ়তা এবং যুহদ-এর ব্যাপার সুপরিচিত ছিল এবং কেউ এগুলো নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেননি। "

মাযহাবের অন্যান্য আলিমসমূহ

৪. আবুল ক্বাসিম খিরাকী(রহিমাহুল্লাহ্);

৫. ইমাম ইবনুল জাওযী(রহিমাহুল্লাহ্);

৬. ইমাম ইবনে কুদামাহ্ আল-মাকদিসী(রহিমাহুল্লাহ্);

৭. ইমাম তাকিউদ্দীন ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ্);

৮. ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম জাওযীয়্যাহ্(রহিমাহুল্লাহ্);

৯. ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী(রহিমাহুল্লাহ্) ;

১০. ইমাম আলাউদ্দীন আল-মারদাওয়ী রহিমাহুল্লাহ্;

১১. শরফুদ্দীন মূসা আল হাজ্জাওয়ী(রহিমাহুল্লাহ্);

১২.ইমাম মনসুর আল-বুহুতি রহিমাহুল্লাহ্;

১৩. ইমাম আস-সাফফারীনি রহিমাহুল্লাহ্;

১৪. ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়হাব (রহিমাহুল্লাহ্);

১৫. ইব্রাহিম আলুশ শাইখ রহিমাহুল্লাহ্;

১৬. আবদুল্লাহ ইবনে আকিল রহিমাহুল্লাহ

১৭. শাইখ ইবনে জিবরীন (রহিমাহুল্লাহ্);

১৮. শাইখ সালিহ আল উসাইমীন রহিমাহুল্লাহ্;

১৯. শাইখ নাসির আল-ক্বুয়াইমি হাফিযাহুল্লাহ্;

২০. ড. মুহাম্মাদ বাজাবির

২১. ড. আমির বাহজাত

২২. ড. মুহাম্মাদ সায়্যিদ আল-হাম্বলি

এই মাযহাবের বিস্তার প্রধানত সৌদি আরব এবং কাতারে।তবে সিরিয়া, জর্দান কুয়েত এবং এর আশেপাশেও এ মাযহাব প্রসিদ্ধ।উপমহাদেশে কিছু সংখ্যক হাম্বলি রয়েছে ।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.