হরু ঠাকুর

হরু ঠাকুর (মৃত্যু ১৮২৪) কবিওয়ালা। কলকাতার এক ব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতৃদত্ত নাম হরেকৃষ্ণ দিঘাড়ী; কিন্তু কবিখ্যাতি লাভের পর তিনি ‘হরু ঠাকুর’ নামে পরিচিত হন। দারিদ্রের কারণে হরু ঠাকুরের পক্ষে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণ সম্ভব হয়নি। তাই স্বভাবকবির প্রতিভাগুণে বাল্যকাল থেকেই তিনি গান রচনা ও সুরারোপ করে গাইতেন। তার গুরু ছিলেন রঘুনাথ দাস। গুরুর দলে দোহারের কাজ করে তিনি প্রথমে গানের জগতে প্রবেশ করেন; পরে নিজেই দল গঠন করে স্বাধীনভাবে গান করেন।[1]

হরু ঠাকুর শৌখিন গায়ক হিসেবে প্রথমদিকে পারিতোষিক নিতেন না; কিন্তু পরে পেশাদার শিল্পী হিসেবে গান গেয়ে প্রচুর অর্থের মালিক হন। তিনি কলকাতা, বর্ধমান, কৃষ্ণনগর, বিষ্ণুপুর প্রভৃতি স্থানে ধনাঢ্যদের গৃহে গান পরিবেশন করতেন। বিশেষত কলকাতার শোভাবাজারের রাজা নবকৃষ্ণের পৃষ্ঠপোষকতা ও সভাসদের আসন লাভ করে তিনি মর্যাদা ও প্রতিপত্তির অধিকারী হন। ভোলা ময়রা, ভবানী বেনে, নীলু ঠাকুর প্রমুখ কবিয়াল তার শিষ্য ছিলেন। পরে তারা স্বাধীনভাবে দল গঠন করলে হরু ঠাকুর গান লিখে ও তাতে সুর দিয়ে তাদের সাহায্য করতেন। তাদের কারো কারো সঙ্গে তিনি কবির লড়াইয়েও অবতীর্ণ হতেন। গুরু-শিষ্যের এই লড়াই বেশির ভাগ নবকৃষ্ণের গৃহপ্রাঙ্গণেই অনুষ্ঠিত হতো। উতোর-চিতেন পর্বে তিনি খুত দ্রুত ছড়া বাঁধতে পারতেন; চটকদার ছড়া গেয়ে আসর মাত করা কবিগানের এক বিশেষ কৌশল।

হরু ঠাকুর বিজয়া, সখীসংবাদ, বিরহ, খেউড় ও লহর (কবির লড়াই) রচনায় নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। সখীসংবাদ ও বিরহের গান গেয়ে প্রশংসা অর্জন করলেও খেউড় ও লহর গেয়ে তিনি অশ্লীলতা-দোষে নিন্দার ভাগী হন। তিনি ভবানী ও রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক গানে মানবীয় আবেদন সঞ্চার করে শ্রোতাদের অভিভূত করতেন। পৃষ্ঠপোষক রাজা নবকৃষ্ণের মৃত্যু হলে হরু ঠাকুর শোকে ভেঙে পড়েন এবং সঙ্গীতজগৎ থেকে নিজেকে ক্রমশ গুটিয়ে নেন।

তথ্যসূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.