সোরিয়াসিস
সোরিয়াসিস ত্বকের একটি প্রদাহজনিত রোগ। এটি একটি জটিল রোগ। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যে কোনো বয়সীরা এ রোগে আক্তান্ত হতে পারে। তবে ত্রিশোর্ধ্বরা বেশি আক্রান্ত হয়। এটি সংক্রামক রোগ নয়, কাজেই সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায় না।[1] মানুষের ত্বকের কোষস্তর প্রতিনিয়ত মারা যায় এবং নতুন করে তৈরি হয়। সোরিয়াসিসে এই কোষ বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। যেমন ত্বকের সবচেয়ে গভীরের স্তর থেকে নতুন কেরাটিনোসাইট কোষ ওপরের স্তরে আসতে স্বাভাবিকভাবে সময় নেয় ২৮ দিন, আর এ ক্ষেত্রে তা পাঁচ থেকে সাত দিন। কয়েক মিলিমিটার থেকে কয়েক সেন্টিমিটার জায়গাজুড়ে এই সমস্যা দেখা দেয়।[2][3] পৃথিবীতে ১ থেকে ২ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত।[4]
সোরিয়াসিস | |
---|---|
![]() সোরিয়াসিসে আক্রান্ত নারীর পিঠ। | |
শ্রেণীবিভাগ এবং বহিঃস্থ সম্পদ | |
বিশিষ্টতা | ত্বকবিজ্ঞান |
আইসিডি-১০ | L৪০ |
আইসিডি-৯-সিএম | ৬৯৬ |
ওএমআইএম | ১৭৭৯০০ |
ডিজিসেসডিবি | ১০৮৯৫ |
মেডলাইনপ্লাস | ০০০৪৩৪ |
ইমেডিসিন | emerg/489 Dermatology:derm/৩৬৫ plaque derm/৩৬১ guttate derm/৩৬৩ nails derm/৩৬৬ pustular Arthritis derm/৯১৮ Radiology radio/৫৭৮ Physical Medicine pmr/১২০ |
মেএসএইচ | D০১১৫৬৫ (ইংরেজি) |
রোগের ইতিহাস

খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে গ্রিক দার্শনিক সেলসাস প্রথম এই রোগের বর্ণনা দেন। এর আগে সোরিয়াসিস ও কুষ্ঠরোগকে একই রোগ বলে ধারণা করা হতো।[4]
সংক্রমণের স্থান
সোরিয়াসিস কেবল ত্বক নয়, আক্রমণ করতে পারে শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও। সাধারণত কনুই, হাঁটু, মাথা, হাত ও পায়ের নখ আক্রান্ত হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে মাথার ত্বক আক্রান্ত হতে পারে এবং হাতের নখের রঙ নষ্ট হয়ে যায় এবং গর্ত হয়ে যায়।[1][2][3]
ক্ষতিকারক দিক
সরাসরি সূর্যালোক ও শুষ্ক ত্বক সোরিয়াসিস রোগীর জন্য ক্ষতিকর। তাই সরাসরি রোদে অনেকক্ষণ থাকা যাবে না। ত্বক আর্দ্র রাখতে নিয়মিত অলিভ ওয়েল, নারকেল তেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা যায়।[2]
লক্ষণ ও উপসর্গ
- Plaque of psoriasis
- Plaque of psoriasis
- An arm covered with plaque type psoriasis
- Psoriasis an den Knien
- Typische Psoriasis am linken Oberschenkel
- Gruebchenbildung
ত্বক পুরু হয়ে যায় এবং লালচে দাগ পড়ে। ত্বক চুলকায় অথবা ব্যথা হয়। আক্রান্ত অংশ রুপালি সাদা আঁশ দ্বারা আবৃত, উজ্জ্বল লালচে বর্ণের প্লাক/খত দেখা যায়।[1][3]
কারণ
বংশগত কারণ ছাড়া সোরিয়াসিস রোগের নির্দিষ্ট কোনো কারণ নির্ণয় করা দুরূহ। কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে দ্রুত বৃদ্ধি হতে পারে, যেমন কোন ধরনের সংক্রমণ, ত্বকে আঘাত জনিত কারণে, আবহাওয়াজনিত শীতে বেশি এবং কিছু ওষুধ সেবনের কারণে।[1]
যে অবস্থায় রোগ ছড়িয়ে পরতে পারে

কিছু কিছু শারীরিক অবস্থায় এই রোগ পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যেমন-
- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকজনিত সংক্রমণ (ইনফেকশন), টনসিলাইটিস বা মুখগহ্বরের সংক্রমণ;
- ত্বকে আঘাত, কাটা-ছেঁড়া, রোদে পোড়া ইত্যাদি;
- কিছু কিছু ওষুধ, যেমন উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, ম্যালেরিয়ার ওষুধ, লিথিয়াম, কর্টিকোস্টেরোইড ইত্যাদি;
- ধূমপান ও মদ্যপান;
- শারীরিক ও মানসিক আঘাত-অসুস্থতা ইত্যাদি।
এসব পরিস্থিতিতে সরিয়াসিস পুরো শরীরে ছড়িয়ে ইরাইথ্রোডার্মার মতো মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে, যাতে মৃত্যুও হতে পারে।[4]
চিকিৎসা


রোগের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে, অল্প অংশ আক্রান্ত হলে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ক্রিম, লোশান, জেল ইত্যাদি ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়ে থাকে। বেশি অংশে ছড়িয়ে পড়লে মুখে খাবার ওষুধ, আলট্রাভায়োলেট থেরাপি, বায়োলজিক্যাল থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ রোগ কখনোই পুরোপুরি ভালো হয় না এবং কখনোই জীবনহানির কারণ হয় না। নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।[1] রোগ যত পুরোনো হয়, ততই জটিল হতে থাকে। তাই দ্রুত শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার আওতায় আসা জরুরি। আক্রান্ত ব্যক্তিকে আজীবন চিকিৎসা নিতে হয়। তাই নির্দিষ্ট সময় নিয়মিত চেকআপ এবং ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।[2]
খাদ্যাভ্যাস ও প্রভাব
সোরিয়াসিস রোগের ক্ষেত্রে খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাসের কোনো সরাসরি প্রভাব নেই। ডায়াবেটিসের মতো এই রোগে দীর্ঘমেয়াদে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের ওপর প্রভাব আছে; যেমন আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, লিভারের রোগ, রক্তে স্নেহজাতীয় পদার্থের ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি। রোগীর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এই রোগের মারাত্মক প্রভাব রয়েছে।[4]
তথ্যসূত্র
- সোরিয়াসিস নিয়ন্ত্রণে করণীয়,ডা. এম আর করিম রেজা, চর্ম ও এলার্জি বিশেষজ্ঞ, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ৫ ডিসেম্বর ২০১১ খ্রিস্টাব্দ।
- রোগের নাম সোরিয়াসিস,ডা. এম মনিরুজ্জামান খান, চর্ম বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল। দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ২৫-০৩-২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।
- জটিল রোগ সোরিয়াসিস ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৬-০৩-০৫ তারিখে,যমুনা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ২৫ মার্চ ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।
- দীর্ঘমেয়াদি চর্মরোগ সরিয়াসিস,ডা. মো. সাইফুল ইসলাম ভুঞা,সহকারী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। দৈনিক কালের কণ্ঠ। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।
আরও পড়ুন
- Baker, Barbara S. (২০০৮)। From Arsenic to Biologicals: A 200 Year History of Psoriasis। Beckenham, UK: Garner Press। আইএসবিএন 0-9551603-2-4।