সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার

সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার (১৯ জুন ১৯৪০) একজন বাংলাদেশি জাতীয় পার্টির রাজনীতিবিদ, সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী; যাকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত থেকে হত্যার মতো মানবতাবিরোধী কার্যক্রমে সাহায্য করার অভিযোগে আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।[1] তিনি হবিগঞ্জ-৪ (তৎকালীন সিলেট-১৭) আসন থেকে ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়ে প্রথমবার এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে ১৯৮৬১৯৮৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয়বারেরমত বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮৮ সালে এরশাদের মন্ত্রীসভায় তিনি কৃষি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।[1]

সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার
কৃষি প্রতিমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৯৮৮  ১৯৯১
হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
১৯৮৮  ১৯৯১
উত্তরসূরীএনামুল হক মোস্তফা শহীদ
সংখ্যাগরিষ্ঠজাতীয় পার্টি
কাজের মেয়াদ
১৯৮৬  ১৯৮৮
সংখ্যাগরিষ্ঠজাতীয় পার্টি
কাজের মেয়াদ
১৯৭৯  ১৯৮৬
পূর্বসূরীএনামুল হক মোস্তফা শহীদ
সংখ্যাগরিষ্ঠবাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1940-06-19) ১৯ জুন ১৯৪০
হবিগঞ্জ, ব্রিটিশ ভারত
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
রাজনৈতিক দলজাতীয় পার্টি
পেশারাজনীতি
মন্ত্রীসভাএরশাদের মন্ত্রীসভা

২০১৩ সালে কায়সারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়।[2] ২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তার বিরূদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগ আনা হয়।[3] একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর ১৬টি অভিযোগের মধ্যে প্রদত্ত বিচারের রায়ে ১৪ অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, দুটিতে খালাস দেওয়া হয় এবং সাতটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে।[3] স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি নিজ নামে 'কায়সার বাহিনীর' গঠন করে তার মাধ্যমে অপরাধগুলো সংগঠিত করেন।[1]

প্রারম্ভিক ও ব্যক্তিগত জীবন

কায়সার ১৯৪০ সালের ১৯ জুন হবিগঞ্জের মাধবপুরের ইটাখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[4] তার পিতার নাম সৈয়দ সঈদউদ্দিন ও মাতার নাম বেগম হামিদা বানু।[4] সঈদউদ্দিন সিলেট-৭ আসন থেকে ১৯৬২ সালে কনভেনশন মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে এমএনএ নির্বাচিত হন৷ বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামা থেকে জানা যায় কায়সার আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন এবং বিএ ডিগ্রি লাভ করেন।[4] তবে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে তার আরমানিটোলায় পড়ার দাবীটির প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে।[4]

রাজনৈতিক জীবন

কায়সার ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান মুসলিম লীঢগের সিলেট জেলা শাখার সদস্য ছিলেন।[4] ১৯৭০ সালের পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে প্রথমে মুসলীম লীগের মনোনয়নের জন্য আবেদন করেন। পরে আবেদন প্রত্যাখ্যান করার পর সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর তিনি কিছুকাল রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি পুনরায় সক্রিয় হন এবং ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন সিলেট-১৭ (বর্তমান হবিগঞ্জ-৪) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[5] সংসদ সদস্য হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) যোগদান করেন। এ সময় তিনি হবিগঞ্জ জেলা শাখা বিএনপির সভাপতি হন।[6] ১৯৮২ সালে তিনি বিএনপির শাহ আজিজুর রহমান অংশের যুগ্ম-মহাসচিব নির্বাচিত হন।

এরপর জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন এবং হবিগঞ্জ জেলার শাখার সভাপতি হন। এ দলের প্রার্থী হিসেবে হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে ১৯৮৬১৯৮৮ নির্বাচন করে তৃতীয়চতুর্থ জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[7][8]

১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদে তিনি ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এরশাদের মন্ত্রীসভায় কৃষি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রতিদ্বন্দীতা করে পরাজিত হন।[4]

যুদ্ধাপরাধ ও অন্যান্য অভিযোগ

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে কায়সার পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেন এবং নিজে নামে ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করেন। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভের পূর্ব পর্যন্ত কায়সারের নেতৃত্বে তার বাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে মিলে হবিগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর, নাসিরনগর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হত্যাযজ্ঞ, লুটপাট, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মত মানবতাবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত হয়। ২০১৩ সালের ১৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। ১৬ মার্চ তাকে ঢাকার ভাটারা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে অনুষ্ঠানিকভাবে মানবতাবিরোধী ১৬টি অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর ১৬টি অভিযোগের মধ্যে প্রদত্ত বিচারের রায়ে ১৪ অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, দুটিতে খালাস দেওয়া হয় এবং সাতটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে।[9]

তথ্যসূত্র

  1. "মৃত্যুদন্ড: কায়সার বাহিনীর প্রধান কেন অপরাধী?"বিবিসি বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৯
  2. "সৈয়দ কায়সার গ্রেফতার"বাংলা নিউজ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৯
  3. "সাবেক প্রতিমন্ত্রী কায়সারের মৃত্যুদণ্ড"ডয়েচে ভেলে। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৯
  4. বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম। "যুদ্ধাপরাধী কায়সারের সর্বোচ্চ সাজা"bangla.bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৯ Authors list-এ |শেষাংশ1= অনুপস্থিত (সাহায্য)
  5. "২য় জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (PDF)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা।
  6. "সৈয়দ কায়সারের ফাঁসির আদেশ"যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৯
  7. "৩য় জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (PDF)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা।
  8. "৪র্থ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা"জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ৯ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৯
  9. "সৈয়দ-মোহাম্মদ-কায়সারের-আপিল-শুনানি-শুরু"এনটিভি। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৯
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.