সুহ্মভূমি

সুহ্মভূমি বা সুব্ভভূমি বা দক্ষিণ রাঢ় বা তক্কণলাঢ়ম প্রাচীন বাংলার একটি জনপদ। জৈনদের আচারাঙ্গ সূত্রে রাঢ় জনপদকে বজ্জভূমি বা বজ্রভূমি এবং সুব্ভভূমি বা সুহ্মভূমি এই দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।

অবস্থান

ধোয়ী রচিত পবনদূত গ্রন্থে গঙ্গার তীরবর্তী সুহ্মের উল্লেখ রয়েছে এবং এই দেশের অন্তর্গত বর্তমানে হুগলী জেলায় অবস্থিত ত্রিবেণী সঙ্গম অতিক্রম করে লক্ষ্মণসেনের রাজধানী বিজয়পুরের দিকে একটি পথের ইঙ্গিত রয়েছে।[1]:১১৭ ৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে রচিত শ্রীধরাচার্য রচিত ন্যায়কন্দলী গ্রন্থে দক্ষিণ রাঢ়ের প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায়।[n 1] একাদশ শতকে কৃষ্ণমিশ্র কর্তৃক রচিত প্রবোধচন্দ্রোদয় নাটকে, মধ্য প্রদেশের অমরেশ্বর মন্দিরের লিপিতে এবং ১৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দে মুকুন্দরাম রচিত চন্ডীমঙ্গলকাব্যেও দক্ষিণ রাঢ়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। ন্যায়কন্দলী গ্রন্থে দক্ষিণ রাঢ়ের অন্তর্গত ভূরিসৃষ্টি গ্রাম (বর্তমান হাওড়া জেলার ভুরসুট গ্রাম), প্রবোধচন্দ্রোদয় নাটকে নবগ্রাম (বর্তমান হুগলী জেলায়) এবং চন্ডীমঙ্গলকাব্যে দামিন্যা গ্রামের[n 2] (বর্তমান বর্ধমান জেলার দামুন্যা গ্রাম) উল্লেখ রয়েছে। এর থেকে অনুমান করা হয়ে থাকে ভাগীরথী নদীর পশ্চিম তীরবর্তী দক্ষিণ ভূখণ্ড অর্থাৎ বর্তমান হাওড়া জেলা, হুগলী জেলার পশ্চিমাংশ এবং বর্ধমান জেলার দক্ষিণাংশে প্রাচীন সুহ্মভূমি বা দক্ষিণ রাঢ় অবস্থিত।[1]:১১৭, ১২০

লোক প্রকৃতি

আনুমানিক পঞ্চম শতাব্দীতে কালিদাস কর্তৃক রচিত রঘুবংশ কাব্যে রঘুর দ্বিগ্বিজয় বর্ণনাকালে সুহ্মদেশের অধিবাসীদের বর্ণনা করে বলা হয়েছে, যে তারা বেতসলতার মত অবনত হয়ে রঘুর কোপ হতে রক্ষালাভ করেছিলেন।[1]:১০৬ ভাগবত পুরাণে সুহ্মদের পাপ কোম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[4] কৃষ্ণমিশ্র তার প্রবোধচন্দ্রোদয় নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কে সুহ্মদেশের ব্রাহ্মণদের দাম্ভিকতার বর্ণনা করেছেন।[n 3]

পাদটীকা

  1. আসীদক্ষিণরাঢ়ায়াং দিজানাং ভূরিকর্মাণাম।
    ভূরিসৃষ্টিরিতি গ্রামো ভূরিশ্রেষ্ঠিজনাশ্রয়ঃ।।[2]
  2. সহর সেলিমাবাজ তাহাতে সজ্জনরাজ নিবসে নেউগী গোপীনাথ।
    তাহার তালুকে বসি দামিন্যায় চাষ-চষি নিবাস পুরুষ ছয় সাত।।[3]
  3. নাস্মাকং জননী তথোজ্জ্বলকুলা সচ্ছ্রোত্রিয়ানাং পুনর্‌
    ব্যুঢ়া কাচন কন্যকা খলু ময়া তেনাস্মি ততোধিকঃ।
    অস্মচ্ছ্যালকভাগিনেয়দুহিতা মিথ্যাভশপ্তা যতস্‌
    তৎসম্পর্কবশান্ময়া স্বগৃহিনী প্রেয়স্যপি প্রোজ্ঝিতা ।।[5]

তথ্যসূত্র

  1. নীহাররঞ্জন রায়, বাঙ্গালীর ইতিগাস - আদি পর্ব, প্রকাশক দে'জ পাবলিশিং, ১৩, বঙ্কিম চ্যাটার্জী স্ট্রিট, কলকাতা- ৭৩, প্রথম প্রকাশ, ১৩৫৬ বঙ্গাব্দ, ষষ্ঠ সংস্করণ মাঘ, ১৪১৪ বঙ্গাব্দ
  2. শ্রীধরাচার্য, ন্যায়কন্দলী
  3. মুকুন্দরাম, চন্ডীমঙ্গলকাব্য
  4. ভাগবত পুরাণ, পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত, পঞ্চম সংস্করণ, কলকাতা, ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ
  5. কৃষ্ণমিশ্র, প্রবোধচন্দ্রোদয়
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.