সামাজিক শ্রেণী

সামাজিক শ্রেণি বা শুধুই "শ্রেণি", যা শ্রেণিভিত্তিক সমাজে, হচ্ছে সমাজের স্তরবিন্যাসের মডেলের উপরে কেন্দ্র করে গঠিত সমাজবিজ্ঞানের ধারণা এবং রাজনৈতিক তত্ত্ব। এটি হচ্ছে জনগণ বা দলের ক্রমবিভক্ত সামাজিক বিভাগের একটি সমষ্টি[1] যেগুলোর সবচেয়ে পরিচিত হচ্ছে উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন শ্রেণিসমূহ।

বর্মি প্রভু এবং তাঁর চাকরেরা

তাত্ত্বিক প্রতিমানসমূহ

মার্কসবাদী

“সামাজিক উৎপাদনের ইতিহাস-নির্দিষ্ট ব্যবস্থায় নিজেদের স্থান, উৎপাদনের উপায়ের সংগে তাদের সম্পর্ক (অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা আইন রূপে বিধিবদ্ধ), শ্রমের সামাজিক সংগঠনে তাদের ভূমিকা, সুতরাং যে সামাজিক সম্পদ তাদের হাতে রয়েছে তার কতটা অংশ ও পাবার উপায় অনুসারে লোকেদের পৃথক বড়ো বড়ো দলকে বলা হয় শ্রেণি। শ্রেণি হলও লোকেদের তেমন সব গ্রুপ, সামাজিক অর্থনীতির নির্দিষ্ট ব্যবস্থায় তাদের বিভিন্ন স্থানের দরুন একদল অপর দলের শ্রম আত্মসাৎ করতে পারে।"

ভ্লাদিমির লেনিন, একটি মহা আরম্ভ - জুন, ১৯১৯[2]

খুব সহজ ভাষায় শ্রেণি বলতে বুঝতে হবে, একই প্রণালীতে জীবনযাত্রা নির্বাহ করে সমাজের এরূপ এক একটি অংশ হলো এক একটি শ্রেণি। শ্রেণি বলতে বুঝতে হবে, সমাজের একাংশের শ্রমকে অপরাংশ আত্মসাৎ করতে পায় যার মাধ্যমে তাই হলও শ্রেণি। সমাজের একাংশ সমস্ত ভূমি আত্মসাৎ করলে হয় ভূস্বামী শ্রেণি ও কৃষক শ্রেণি। যদি সমাজের একাংশ হয় কলকারখানা, শেয়ার এবং পুঁজির মালিক, আর অন্য একটা অংশ কাজ করে ওইসব কলকারখানায়, তাহলে হয় পুঁজিপতি শ্রেণি এবং প্রলেতারিয়ান শ্রেণি অর্থাৎ শ্রমিক শ্রেণি। শ্রেণিদের মধ্যে পার্থক্যের মৌল লক্ষণ হলো- সামাজিক উত্পাদনে তাদের স্থান, সুতরাং উত্পাদনের উপায়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে। প্রতিটি শ্রেণির থাকে উৎপাদনের উপায়ের সংগে সুনির্দিষ্ট নিজস্ব সম্পর্ক। এই লক্ষণ দিয়েই পার্থক্য করা যায় শ্রেণি আর অন্যান্য সামাজিক গ্রুপের মধ্যে যারা শ্রেণি নয়। যেমন, উত্পাদনের উপায়ের সাথে বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্ক নেই, তাই তারা শ্রেণি নয়, বুদ্ধিজীবীরা হলও বিভিন্ন শ্রেণির অংশবিশেষ নিয়ে একটা সামাজিক স্তর।[3]

অর্থাৎ শ্রেণি হচ্ছে বিশাল সংখ্যার একদল লোক যারা উৎপাদনের উপায়ের সংগে সম্পর্ক, শ্রমের সামাজিক সংগঠন, সামাজিক সম্পদ প্রাপ্তির প্রণালী আর পরিমাণের দিক থেকে পৃথক। এক্ষেত্রে শোষক দলটা সংখ্যায় অল্প, শোষিতরা অধিকাংশ। এই যে একদল লোক শোষক, উৎপীড়ক এবং অন্যদল শোষিত ও উৎপীড়িতরূপে সৃষ্ট হয়, তাদের বলা হয় বৈরী শ্রেণি, কারণ তাদের স্বার্থ আপোষহীন।[2]

তথ্যসূত্র

  1. Grant, J. Andrew (২০০১)। "class, definition of"। Jones, R.J. Barry। Routledge Encyclopedia of International Political Economy: Entries A-F। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 161। আইএসবিএন 978-0-415-24350-6।
  2. সাদি, অনুপ (ফেব্রুয়ারি ২০১৭)। মার্কসবাদ (২ সংস্করণ)। ঢাকা: ভাষাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৮৪। আইএসবিএন 978-984-91945-5-2।
  3. এম. আর. চৌধুরী সম্পাদিত; আবশ্যকীয় শব্দ-পরিচয়, প্রকাশক: হেলাল উদ্দীন, ঢাকা; এপ্রিল, ২০১২; পৃষ্ঠা- ১৪-১৫।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.