সন্ত পিতর
সন্ত পিতর বা সেন্ট পিটার (সিরীয়/আরামীয়: ܫܸܡܥܘܿܢ ܟܹ݁ܐܦ݂ܵܐ, হিব্রু : שמעון בר יונה), যাঁকে আমরা সিমন পিতর নামেও চিনি, নতুন নিয়ম অনুসারে তিনি হলেন প্রভু যিশু খ্রিষ্টের বারোজন বাণীপ্রচারকদের বা প্রেরিতদূতদের একজন৷ ক্যাথলিক মতানুসারে খ্রিষ্টের দ্বারা তার পৌরোহিত্যাভিষেক হয় মথি ১৬:১৮ "মণ্ডলীর প্রস্তর" মন্তব্যে৷ তাকে সাধারণত রোমের প্রথম বিশপ এবং অ্যান্টিওকের প্রথম প্যাট্রিয়ার্ক মানা হয়৷ সমস্ত প্রাচীন খ্রিষ্টীয় সম্প্রদায় পিটারকে একজন প্রধান সন্ত এবং রোমীয় খ্রিষ্টমণ্ডলী ও অ্যান্টিওকের খ্রিষ্টমণ্ডলীর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে শ্রদ্ধা করে থাকে, কিন্তু তার বর্তমানের উত্তরাধিকারীদের কর্তৃত্ব সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করে৷
পোপ সন্ত পিতর | |
---|---|
বাণীপ্রচারক, পোপ, প্যাট্রিয়ার্ক এবং ধর্মশহীদ | |
গির্জা | প্রাচীন খ্রিষ্টীয় মহামণ্ডলী |
বিশপের এলাকা | ক্যাথলিক মত অনুযায়ী রোমের প্রথম বিশপ (পোপ), পূর্ব খ্রিষ্টীয় মত অনুযায়ী অ্যান্টিওকের প্রথম বিশপ (প্যাট্রিয়ার্ক) |
পরবর্তী | রোমের বিশপ - লাইনাস, অ্যান্টিওকের বিশপ - ইভোডিয়াস |
আদেশ | |
বিন্যাস | ৩৩ খ্রীস্টাব্দ যিশু |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম নাম | সিমন |
জন্ম | বেথসাইদা, সিরীয়া, রোমীয় সাম্রাজ্য |
মৃত্যু | রোম, ইতালি, রোমীয় সাম্রাজ্য |
মাতাপিতা | যোনা ও তাঁর স্ত্রী |
পোপের আখ্যা | |
উৎসবের দিন | ২৯ জুন |
শ্রদ্ধাজ্ঞাপন | সকল খ্রিস্টীয় সম্প্রদায় |
উপাসনাগৃহ | সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা, রোম |
নূতন নিয়ম ইঙ্গিত করে যে পিতরের পিতার নাম ছিল যোহন (বা যোনাঃ) এবং গালিলি প্রদেশ বা গোলান প্রদেশের বেথসাইদা গ্রাম থেকে তিনি এসেছিলেন৷ তার ভাই অ্যান্ড্রু (বা আন্দ্রেয়) তারই মত একজন প্রেরিতদূত ছিলেন৷ মূলত একজন জেলে, তিনি বাণীপ্রচারকদের নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন এবং বেশ কিছু বিশেষ মুহূর্তে যীশুর সঙ্গে ছিল, যেমন যীশুর দিব্যরুপান্তরণ৷ গস্পেলের মতে, পিতর স্বীকার করেছিলেন যে যীশুই হলেন মশীহ; পরে তিনি তিনবার যীশুকে অস্বীকার করেন এবং তার কাজের পরিণাম বুঝতে পেরে কেঁদেছিলেন; তিনি পেন্টেকস্টের দিনে বাণীপ্রচার করেছিলেন।
খ্রিস্টান মত অনুযায়ী, পিতর রোমসম্রাট নেরো অগাস্টাস সিজারের অধীনে রোমে ক্রুশবিদ্ধ হন৷ মনে করা হয় যে তিনি নিজের অনুরোধে ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন উলটিয়ে, কারণ তিনি নিজেকে যীশুর ভঙ্গীতে ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার অযোগ্য মনে করেছিলেন। বলা হয় যে ক্লেমেন্টাইন চ্যাপেলে তাকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল। বলা হয় যে তার দেহাবশেষ সেন্ট পিটার্স বেসিলিকাতে রয়েছে, যেখানে পোপ ৬ষ্ঠ পল ১৯৬৮ সালে প্রথম শতাব্দীর রোমান কবরস্থান আবিষ্কারের ঘোষণা করেছিলেন। ক্যাথলিক মত অনুযায়ী, সেন্ট পিতরের সরাসরি উত্তরাধিকারী হলেন বর্তমান পোপ, সম্প্রতি পোপ ফ্রান্সিস।
নূতন নিয়মের দুটি ধর্মপত্র পিতরের রচিত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তবে বর্তমানে পণ্ডিতরা সাধারণত উভয়ের পিতররচিত হওয়াকে প্রত্যাখ্যান করে থাকেন। তার নাম বহন করে এমন বেশিরভাগ বই - অ্যাক্ট্স অব পিটার, পিটারের সুসমাচার, পিটারের প্রচার, পিটারের রহস্যোদ্ঘাটন এবং পিটারের বিচার - প্রাচীন খ্রিস্টীয় ধর্মাবলম্বীদের রচনা হিসেবে ধরা হয় এবং সেগুলোকে বাইবেলের ক্যাননগুলিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
নাম এবং ব্যুৎপত্তি
.jpg)
পিটারের আসল নাম ছিল সিমন (গ্রীক Σίμων) বা সিমেওন (গ্রীক : Συμεών)। পরবর্তীকালে তাকে কেফা (আরামীয় : כֵּיפָא) বা পেট্রস (গ্রীক : Πέτρος) নাম দেওয়া হয়। এই নামটির অনেকেই অনেকরকম ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন, যেমন শক্ত পাথর, মূল্যবান মণি ইত্যাদি। তবে অধিকাংশ পণ্ডিতরাই মেনে থাকেন যে এই নামটির দ্বারা সিমনের সদাসহিষ্ণু চরিত্রই দর্শানো হয়েছে। এই নামটিই কালানুক্রমে ভাষান্তরে ল্যাটিন ভাষায় পেট্রাস ও ইংরেজিতে পিটার হয়ে দাঁড়ায়। নূতন নিয়মে Σίμων Πέτρος (সিমন পেট্রস) নামটিকে ১৯ বার উল্লেখ করা হয়েছে। সিরীয়রা তাকে সিমন কেফাস বলেও ডাকেন। বাংলায় সাধারণতঃ তাকে সিমন পিটার বা সিমন পিতর নামেই ডাকা হয়ে থাকে।
নূতন নিয়মে পিটারের বর্ণনা
সকল বাণীপ্রচারকদের সুসমাচার, শিষ্যচরিত, হিব্রুদের সুসমাচার ইত্যাদি গ্রন্থগুলিতে পিটারের জীবনকাহিনীর উল্লেখ আছে। পিটার বেথসাইদার একজন জেলে ছিলেন। তার নাম ছিল সিমন, যোনার পুত্র। প্রথম তিনটি বাণীপ্রচারকদের সুসমাচারই বর্ণনা করে যে পিটারের শাশুড়ী যীশুর দ্বারা ব্যাধি থেকে সুস্থ হয়ে ওঠেন কাফারনাউমে তার বাড়িতে; এর দ্বারা এটি স্পষ্ট যে পিটার বিবাহিত ছিলেন।
প্রথম তিনটি বাণীপ্রচারকদের সুসমাচারগুলির মধ্যে, পিটার (তখন সিমন) তার ভাই, অ্যান্ড্রু এবং জেবডির দুই পুত্র - জেমস ও যোহনের মত একজন জেলে ছিলেন। মথি এবং মার্কের সুসমাচারে প্রভু যীশু সিমন ও তার ভাই অ্যান্ড্রুকে ''মানবজাতির জেলে '' হওয়ার জন্যে তাকে অনুসরণ করতে বলেছিলেন।
মথি, মার্ক ও যোহনের সুসমাচারে যীশুর জলের উপর দিয়ে হাঁটার ঘটনাটির উল্লেখ আছে। মথির সুসমাচারে এর সাথে রয়েছে ক্ষণিকের জন্যে পিটারের জলের উপর চলার কাহিনীর বর্ণনা। অবশ্য, মুহূর্তের মধ্যেই পিটার ডুবতে শুরু করে, কারণ তখনও যীশুর উপর তার সম্পুর্ণ বিশ্বাস জাগেনি।
যীশুর অন্তিম সান্ধ্যভোজে তিনি যখন তার শিষ্যদের পা ধুয়ে দিতে চাইলেন, পিটার আপত্তি জানিয়েছিলেন। তবে যীশুর কথাই তাকে মানতে হয়েছিল। আজও বেশ কিছু খ্রীস্টধর্মাবলম্বি মন্ডি থার্সডে-র দিন এই পা ধোয়ার অনুষ্ঠান পালন করে থাকে।
তিনটি প্রধান সুসমাচারেই উল্লেখ আছে যে, যীশুকে যখন বন্দি করা হয়, তার এক সঙ্গী প্রধান যাজকের এক ভৃত্যের ডান কান কেটে ফেলে। যোহনের সুসমাচার বলে যে পিটার ছিল সেই ঘাতক ও সেই ভৃত্যের নাম ছিল ম্যাল্কাস। লুক আরও উল্লেখ করে যে যীশু সেই কাটা কান সারিয়ে তোলেন এবং এটাই হয় তার ৩৭ অলৌকিক ঘটনার অন্তিম চমৎকার। সুসমাচার অনুযায়ী এরপর পিটার তিনবার যীশুকে প্রত্যাখ্যান করেন। তবে যীশুর পুনরুত্থানে যীশুর প্রশ্নে তিনি তিনবার তার প্রতি ভালোবাসা স্বীকার করেন।
মথির সুসমাচারে যীশু আত্মপরিচয় জানতে চাইলে পিটারই একমাত্র স্বীকার করেন যে তিনি মানবপুত্র হয়েও মশীহ, জীবন্ত ঈশ্বরের একমাত্র সন্তান। তখন যীশু পিটারকে '' মণ্ডলীর প্রস্তর '' বলে আখ্যান করেছিলেন এবং তার হাতে স্বর্গের চাবিকাঠি তুলে দেবার কথা বলেছিলেন।
রোমীয় শাসনে তাকে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়।