শাহজাদা মুস্তাফা

শাহজাদা মুস্তাফা (১৫১৫ -১৫৫৩) ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের শাহাজাদা এবং সুলতান সুলাইমানমাহিদেভ্রান সুলতান এর প্রথম সন্তান। তিনি বয়োজ্যেষ্ঠ সন্তান হিসেবে উসমানীয় সাম্রাজ্যের উত্তরাধীকারী ছিলেন এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু তার পিতা তাকে রুস্তম পাশা এবংং হুররেম সুলতান এর সাজানো মিথ্যা বিদ্রোহের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।

মুস্তাফা
শাহজাদা মুস্তাফা অটোমান রাজ্যপাল
জন্ম১৫১৫
মানিসা, উসমানীয় সাম্রাজ্য
মৃত্যু০৬ অক্টোবর ১৫৫৩ (৩৭–৩৮ বছর বয়সে)
কোনয়া, উসমানীয় সাম্রাজ্য
সমাধিমুরাদায়ে কমপ্লেক্স, বুরসা
দাম্পত্য সঙ্গীমেহেরুন্নেসা সুলতান
ফাতিমা সুলতান [তার স্ত্রীদের মধ্যে যথেষ্ট প্রভাবশালী ছিলেন তিনি]
এফসুন হাতুন
আয়শা হাতুন
নৌরিচিহান হাতুন
রুমেসা সুলতান
হেতিক সুলতান
হান্দান হাতুন
নুরবেগম সুলতান
বংশধরনারগিস সুলতান
শাহজাদা মেহমেদ
শাহজাদা ওরহান
শাহ সুলতান
মিহ্-রিশাহ্ সুলতান
হেতিক সুলতান
হান্দান সুলতান
রাজবংশউসমানীয় রাজবংশ
পিতাপ্রথম সুলাইমান
মাতামাহিদেভ্রান সুলতান

কর্মজীবন

মুস্তাফা উসমানীয় সাম্রাজ্যের মানিসার গভর্নর (১৫৩৩-১৫৪১), আমাসিয়ার গভর্নর (১৫৪১-১৫৪৯) এবং উসমানীয় সাম্রাজ্যের কোনয়ার গভর্নর (১৫৪৯-১৫৫৩) ছিলেন।

তৎকালীন সময়ের অনেক ঐতিহাসিকগন মনে করতেন, মুস্তাফা ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের সবচেয়ে যোগ্য এবং মেধাবী শাহজাদা। ইতিহাস মতে, প্রজা এবং সৈন্যদের মনে পরবর্তী সুলতান হিসেবে সবথেকে গ্রহণযোগ্য শাহজাদা ছিলেন শাহজাদা মুস্তাফা।

মৃত্যু

প্রধান উজির রুস্তম পাশা ও প্রথম সুলাইমানের স্ত্রীর হুরুরেম সুলতান উভয়ই সুলাইমানকে মুস্তফার বিরুদ্ধে উসকিয়ে দেন এবং মুস্তফাকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। ঐতিহাসিক সূত্র দ্বারা জানা যায় ১৫৫৩ সালে সফভীয় ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানকালে রুস্তম পাশা সুলাইমানকে অবহিত করেন মুস্তাফা বিদ্রোহ করেছেন এবং সুলাইমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিশাল সৈনাবাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসছেন। বিপরীতে মুস্তাফাকে বলা হয় ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় সুলতান সুলাইমান বিপদে পরেছেন এবং শাহজাদা মুস্তাফার সহায়তা চেয়েছেন। যার পরিণতিতে মুস্তাফা তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে সুলতানকে সাহায্য করার জন্য রওনা হন। কিন্তু এগুলো সব ধারনামত্র। কোনো ইতিহাসবিদ আজ পর্যন্ত তার মৃত্যুর পিছনের আসল রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি। আধুনিক ইতিহাসবিদদের মতে মুস্তাফার মৃত্যুর পিছনে হুররেম সুলতান এবং রুস্তম পাশার ষড়যন্ত্র সম্পূর্নই ভিত্তিহীন এবং লোক-বানানো কথা। এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সুলতানের তাবুর কাছে সৈন্যসমেত পৌঁছানর পর তাকে জানানো হয় ভেতরে সুলতান তার জন্য অপেক্ষা করছেন। মুস্তাফাকে নিরস্ত্র করে তাবুর ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। শাহজাদা মুস্তাফা সুলতান সুলায়মানের তাবুতে প্রবেশ করলে সুলাইমানের নির্দেশে আগে থেকে ওত পেতে থাকা গুপ্ত ঘাতকেরা নিরস্ত্র মুস্তাফাকে আক্রমণ করে এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।[1]

মৃত্যু পরবর্তী অবস্থা

১৫৫৩ সালে সুলাইমান মুস্তাফাকে প্রাণদণ্ড দেয়ার পর সৈন্যদের মধ্যে একটি বড়মাপের অসন্তুষ্টি ও অস্থিরতার উত্থান হয় যারা রুস্তম পাশাকে মুস্তফার মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন। এ সময় চৌকশ জেনিসারি ও আনাটোলিয়ান সৈন্য বাহিনী বিদ্রোহ ঘোষণা করে কারণ উসমানীয় সাম্রাজ্যের নিয়ম মোতাবেক ভবিষ্যৎ সুলতান হবেন শাহাজাদা মুস্তাফা যিনি ছিলেন জনপ্রিয় এবং একজন বীর যোদ্ধা। সে সময় ইস্তাম্বুলের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ছিল চাপা ক্ষোভ এবং এর ফলশ্রুতিতে হাজার হাজার মানুষ উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রাসাদে আক্রমণ চালায় যারা এই অন্যায় মৃত্যুদণ্ড মেনে নিতে পারে নি।

মুস্তাফার মৃত্যুর পর উসমানীয় সাম্রাজ্যের অ্যানাটোলিয়া বিশেষ ভাবে আমাসিয়া, মানিসা এবং কোনয়া নামক স্থানে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হয় কারণ সেসব স্থানের মানুষ মুস্তাফাকে হবু সুলতান হিসেবে মেনে নিয়েছিল। অ্যানাটোলিয়ার অধিকাংশ মানুষ মুস্তাফাকে "সুলতান মুস্তাফা" হিসেবে মনে করত কারণ তিনি ছিলেন সিংহাসনের উত্তরসূরি। Taşlıcalı Yahya নামক একটি শোকগাথা শাহাজাদার মর্মান্তিক হত্যাকান্ডকে উদ্দেশ্য করে রচিত হয়। শাহাজাদা মুস্তাফার জীবনী তুরষ্কের অ্যানাটোলিয়ানের সাহিত্যের অংশ হয়ে যায়।

শাহাজাদা মুস্তাফার মৃত্যুর ঘটনায় উসমানীয় সাম্রাজ্যের জনগণ প্রথম সুলতানের স্ত্রী হুরুরেম সুলতান, জামাতা রুস্তম পাশা এবং কন্যা মেহেরিমাকে দায়ী করে। যার ফলশ্রুতিতে প্রথম সুলায়মান রুস্তম পাশাকে বরখাস্ত করেন এবং ১৫৫৩ সালে কারা আহমেদ পাশাকে প্রধান উজির হিসেবে নিয়োগ দেন এবং ঘোষণা করেন শাহাজাদা মুস্তাফাকে ইস্তাম্বুলে রাজকীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করা হবে এবং পরবর্তীতে তাকে তুরষ্কের বুরসায় সমাধিস্থ করা হয়।

কারা আহমেদ পাশাকে প্রধান উজির হিসেবে নিয়োগের দুই বছর পর, কারা আহমেদ পাশাও হুররেম সুলতানের চক্রান্তের স্বীকার হন, কারণ হুররেম তার জামাতা রুস্তম পাশাকেই আবারও প্রধান উজির হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। ১৫৫৫ সালে কারা আহমেদ পাশাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় এবং রুস্তম পাশাকে আরও একবার প্রধান উজির (১৫৫৫-১৫৬১) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

১৫৬১ সালে, হুররেমের মৃত্যুর তিন বছর পর, ফরাসি লেখক গ্যাব্রিয়েল বোনিন মুস্তাফার মৃত্যুতে হুররেম সুলতানের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে "লা সুলতানে" নামে একটি ট্র্যাজেডি নাটিকা লেখেন। তুরস্কের বিভিন্ন লোক কাহিনীতে মুস্তাফাকে আজও সম্মানের সাথে স্মরণ করা হয়।

সহধর্মীনি এবং সন্তান

১৫২৫ খ্রিষ্টাব্দে, মুস্তফা ক্রিমিয়ার বংশোদ্ভুত মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[2]

  • নেগ্রিসাস সুলতান (১৫৩৬, মানিশা – ১৫৯২, আঙ্কারা) মুস্তাফা এর প্রিয় কন্যা সন্তান। ১৫৫৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আনাতোলিয়া এর গভর্নর দমাত সেনাব্ধা আহমেদ পাশাকে বিয়ে করেন। তিনি তার পিতার সমাধির পাশে সমাহিত হন।
  • শাহজাদ ওহান (? – ১৫৫২, কন্যা).
  • শাহজাদ মেহমিদ (১৫৪৭, আমাসিয়া – ১৫৫৩, বুরসা) Following his father's execution, Mehmed was also executed as his grandfather Suleiman had considered him a potential threat. He's buried in Mustafa's tomb.
  • Şah Sultan (1547, Konya – 2 October 1577). She was married to Damat Abdülkerim Pasha, Amasya's governor.[2]

তথ্যসূত্র

  1. A General History of the Middle East, Chapter 13: Ottoman Era, Suleiman the Magnificent
  2. Yılmaz Öztuna, Kanuni Sultan Süleyman (Pages: 174-189), Babıali Kültür Publications, 2006
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.