শান্তিপুরী শাড়ি

শান্তিপুরী শাড়ি একপ্রকারের সূক্ষ্ম সূতোর বিশেষ ধরনের হাতে বোনা শাড়ি যা পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলায় শান্তিপুরে[1] তৈরী হয়। এই হস্তশিল্প ভারতের ভৌগোলিক অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়।

শান্তিপুরী শাড়ি
ভৌগোলিক স্বীকৃতি
শান্তিপুরী শাড়ির গুটি ভাঁজ
বর্ণনাহাতে বোনা সুতির শাড়ি
ধরণহস্তশিল্প
অঞ্চলশান্তিপুর, নদিয়া জেলা, পশ্চিমবঙ্গ
দেশভারত
উপাদানসুতো, (তাঁত)
প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইটhttp://ipindia.nic.in/girindia/

নামকরণের ইতিহাস

শ্রী অদ্বৈত চারিয়া (১৪৬০-১৫৫৮ সাল)র অদ্বৈতমঙ্গলে শান্তিপুরের তাঁত হস্ত শিল্পের কথা লিখিত আছে। নথি অনুযায়ী এই হস্তশিল্প শান্তিপুরে আসে পঞ্চাদশ শতকের গৌড় এর রাজা গনেশের সময় কালে। পূর্বে বিভিন্ন জাতের তাঁতিদের একটি বড় অংশ বৈষ্ণব ধর্মে দিক্ষিত হয়ে, ধামরাই (অধুনা বাংলাদেশ) থেকে নবদ্বীপে স্থানান্তরিত হয়েছিল। তারা ভগবান মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের পায়ে থিতু হতে চেয়েছিল। মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যদেব তাদের উপদেশ দিয়েছিলেন, শান্তিপুরের শ্রী অদ্বৈত চারিয়া র কাছে যেতে। তারা তখন শান্তিপুরে বসবাস করতে শুরু করেন এবং তাদের চিরাচরিত তাঁত শিল্প চালিয়ে যেতে থাকে। শান্তিপুরের এই তাঁত শিল্প কারখানার আকার নেয় নদিয়ার রাজা রাজ রুদ্র রায় (১৬৮৩-১৬৯৪) সাল এবং মুঘল শাসনের সময়কালে। পরবর্তী কালে তাদের তৈরী শাড়ি শান্তিপুরী শাড়ি নামে পরিচিত হয়।[2]

অভিনবত্ব

শান্তিপুরী শাড়ির বিশেষত্ব হল এই শাড়ির পাড়। তাঁতিরা বুননের মাধ্যমে শাড়ির পাড়ে বিভিন্নধর্মী নক্সার সৃষ্ট করে যেমন- ফুল, জ্যামিতিক আকৃতি। এছাড়াও বিভিন্ন পৌরানিক ঘটনাবলী, মন্দির এর নক্সা শাড়ির আঁচলেও দেখা যায়। শাড়ির জমি অনেক সময় নক্সা ছাড়া আবার অনেক সময় বুটি যুক্ত দেখা যায়। শাড়ির পাড়ে সাধারনতঃ যে সকল নক্সা দেখা যায় তা হল-

  • নীলাম্বরী
  • গঙ্গা যমুনা - এই ধরনের পাড়ের দু'দিকে দুটি ভিন্ন রঙ এর পাড় দেখা যায়।
  • বেংকিপা - এই ধরনের পাড়ে জরি এবং মুগা সুতোর কাজ দেখা যায়।
  • ভোমরা - এই ধরনের পাড়ে নামকরণ মৌমাছি থেকে আগত। এই পাড়ে তুঁতে, কালো, লাল এবং চকোলেট রঙ এর আধিক্য দেখা যায়।
  • রাজমহল - এই ধরনের পাড়ে রুইতন এর নক্সা দেখা যায়।
  • আঁশ পাড় - এই ধরনের পাড়ে মাছের আঁশের মতো নক্সা দেখা যায়। যাতে সোনালি এবং রুপোলী রঙ এর জরির কাজ করা থাকে।
  • চান্দমালা - এই ধরনের পাড়ে গোলাকার সোনালী বর্নের নক্সা দেখা যায়। চাঁদ এর অনুসারে এই চান্দমালা নামকরণ হয়েছে।
  • বৃন্দাবনি ময়ূর পাড় - এই পাড়ে এক জোড়া ময়ূর দেখা যায়।[2]

এই শান্তিপুরী শাড়িকে যে ভাবে ভাঁজ করে বাইরে বিক্রয় করা হয়, তাকে গুটি ভাঁজ বলে।

চিত্রসম্ভার

তথ্যসূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.