শর্করা

শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট (ইংরেজি: carbohydrate ) হল এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ যার প্রতিটি অণুতে কার্বনের(C) সাথে হাইড্রোজেন(H) এবং অক্সিজেন(O) থাকে, যেখানে হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে অক্সিজেন পরমাণুর অনুপাত হয় ২:১(জলের অণুর মতই)। সরল কথায় এটির স্থুল সংকেত হল C m(H2O)n, যেখানে m এর মান এবং n এর মান ভিন্ন হতে পারে এবং n হল ৩ বা তদূর্ধ্ব সংখ্যা।। কিছু ব্যতিক্রমও অবশ্য আছে, যেমন: ডিঅক্সিরাইবোজ(এটি ডিএনএ তে চিনি হিসেবে থাকে) এর স্থুল সংকেত হল C5H10O4। একটু বৈজ্ঞানিক ভাবে বললে, শর্করা হল আসলে 'Hydrates of Carbon' কিংবা 'Polyhydroxyaldehyde' (পলিহাইড্রোক্সিঅ্যালডিহাইড) বা 'Polyhydroxyketon' (পলিহাইড্রোক্সিকিটোন)। [1] রসায়নের ভাষায়, যে সকল পলিহাইড্রোক্সিঅ্যালডিহাইড বা পলিহাইড্রোক্সিকিটোন বা জৈব যৌগ অম্লীয় আর্দ্রবিশ্লেষণের ফলে পলিহাইড্রোক্সিঅ্যালডিহাইড বা পলিহাইড্রোক্সিকিটোন উৎপন্ন করে তাদেরকে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা বলে।[2]

কার্বোহাইড্রেটের শ্রেণীবিভাগ

শর্করার কাজ

  • জীবদেহের শক্তির প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে।
  • উদ্ভিদের সাপোর্টিং টিস্যুর গাঠনিক উপাদান হিসেবে কাজ করে।
  • উদ্ভিদের দেহ গঠনকারী পদার্থগুলোর কার্বন কাঠামো প্রদান করে।
  • হাড়ের সন্ধিস্থলে লুব্রিকেন্ট হিসেবে কাজ করে।
  • উদ্ভিদের ফুলে ও দলে মধু এবং কাণ্ড ও মূলে সুক্রোজ থাকে।
  • উদ্ভিদে অল্প পরিমাণে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ সঞ্চিত খাদ্য হিসেবে থাকে।
  • ফ্যাটি এসিড এবং এমিনো এসিড বিপাকে সাহায্য করে
  • ক্যালভিন চক্র ও ক্রেবস চক্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ চক্রে কার্বোহাইড্রেট সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।

শর্করার শ্রেণীবিভাগ

  • স্বাদের ভিত্তিতে শর্করা দুই প্রকার, যথা-
  1. শ্যুগারঃ শ্যুগার শর্করা স্বাদে মিষ্টি। সকল মনোস্যাকারাইড এবং অলিগোস্যাকারাইড শ্যুগার। যেমনঃ গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, গ্যালাক্টোজ, সুক্রোজ ইত্যাদি।
  2. নন-শ্যুগারঃ সকল প্রকার নন-শ্যুগার শর্করা হলো পলিস্যাকারাইড। যেমনঃ স্টার্চ, সেলুলোজ ইত্যাদি।
  • সকল কার্বোহাইড্রেট কার্বন, অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেনের সমন্বয়ে গঠিত একপ্রকার জৈব যৌগ যার মধ্যে কার্বনের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ভিত্তিতে শর্করা তিন প্রকার, যথা-
  1. মনোস্যাকারাইডঃ শর্করা জগতে এরা সবচেয়ে ক্ষুদ্র একক। যাদের পানি বিয়োজন করলে এর চেয়ে ক্ষুদ্র এককের কোনো শর্করা পাওয়া যায়না। এদের অণুতে কার্বন পরমাণুর সংখ্যা ৩-১০ টি। ৩ টি হলে ট্রায়োজ, ৪ টি হলে টেট্রোজ, ৫ টি হলে পেন্টোজ, ৬ টি হলে হেক্সোস ইত্যাদি। কিন্তু কার্বন সংখ্যা ১০ এর বেশি হলেই তা অলিগোস্যাকারাইড কিংবা পলিস্যাকারাইড হিসেবে গণ্য হবে। যেমনঃ গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ইত্যাদি।
  2. অলিগোস্যাকারাইডঃ অলিগোস্যাকারাইড হচ্ছে এমন শর্করা যাদের পানি বিয়োজন তথা হাইড্রোলাইসিস করলে ২-১০ টি মনোস্যাকারাইড অণু পাওয়া যায়। যেমনঃ ৱ্যাফিনোজ, যাকে পানি বিয়োজন করলে ৩ ধরনের মনোস্যাকারাইড পাওয়া যায়।
  3. পলিস্যাকারাইডঃ পলিস্যাকারাইড হচ্ছে যে সকল অণুতে অসংখ্য মনোস্যাকারাইড অণু পাওয়া যায়। তথা মনোস্যাকারাইড অণুর পলিমারকেই পলিস্যাকারাইড বলে। যেমনঃ স্টার্চ।
  • বিজারণ ক্ষমতার ভিত্তিতে সকল কার্বোহাইড্রেট ২ প্রকার, যথা-
  1. বিজারক চিনি(Reducing sugar) যাদের অন্য পদার্থকে জারণ করার ক্ষমতা আছে। সাধারণত এসব চিনির জারণ ক্ষমতা প্রদর্শনের কারণ এতে অ্যাল্ডিহাইড মুলক (-CHO) কিংবা কিটোন মূলক (-C=O) এর উপস্থিতি। দুটি মূলকেরই বিজারণ ক্ষমতা থাকায় যেসকল চিনিতে এদের উপস্থিতি আছে তারা বিজারক চিনি হয়। যেমনঃ গ্লুকোজ। এটি একটি বিজারক চিনি কারণ এতে একটি অ্যাল্ডিহাইড মুলক আছে। সুকরোজ ছাড়া সকল মনোস্যাকারাইড এবং অলিগোস্যাকারাইড বিজারক চিনি।
  2. অবিজারক চিনিঃ সুকরোজ এবং সকল পলিস্যাকারাইড অবিজারক শর্করা। সুকরোজের বিজারণ ক্ষমতা প্রদর্শন না করার কারণ হলো এর গঠন। সুকরোজ এক অণু গ্লুকোজ এবং এক অণু ফ্রুক্টোজের সমন্বয়ে তৈরি হয়। গঠিত চিনিতে অ্যাল্ডিহাইড অথবা কিটোন মূলক না থাকাতে এটি বিজারণ ক্ষমতা প্রদর্শন করে না।

তথ্যসূত্র

  1. জীববিজ্ঞান, ১ম পত্র (জুন)। "৪"। জীববিজ্ঞান ১ম -একাদশ শ্রেণি (জুন, ২০১৬ সংস্করণ)। ঢাকা: হাসান বুক হাউস। পৃষ্ঠা ৬৭। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |year= / |date= mismatch (সাহায্য);
  2. রসায়ন, ২য় পত্র (এপ্রিল)। "১১"। রসায়ন ২য় -দ্বাদশ শ্রেণি (এপ্রিল, ২০১৩ সংস্করণ)। ঢাকা: হাসান বুক হাউস। পৃষ্ঠা ৫৮৬। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |year= / |date= mismatch (সাহায্য);
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.