শব্দ

শব্দ এক ধরনের তরঙ্গ। এই শক্তি সঞ্চালিত হয় শব্দ-তরঙ্গের মাধ্যমে । শব্দ তরঙ্গ হলো অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ। কোনো মাধ্যমের কণাগুলোর বা স্তরসমূহের সংকোচন ও প্রসারণের সৃষ্টির মাধ্যমে এই তরঙ্গ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সঞ্চালিত হয়। শব্দের প্রতিফলন ও প্রতিসরন ঘটে।

পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় শব্দ

শব্দ হলো এক ধরনের তরঙ্গ যা পদার্থের কম্পনের ফলে সৃষ্টি হয়। মানুষের কানে এই কম্পন ধৃত হলে শ্রুতির অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এই তরঙ্গ বায়বীয়, তরল এবং কঠিন পদার্থের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় বাতাসের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শব্দের গতিবেগ ঘণ্টায় ৭৬৮.১ মাইল তথা প্রতি সেকেন্ডে ৩৪৩.৪ মিটার।[1] পদার্থের মধ্য দিয়ে শব্দ তরঙ্গ প্রবাহিত হওয়ার সময় ঐ পদার্থের সকল কণা স্পন্দিত হতে থাকে। প্রতি সেকেণ্ড একবার স্পন্দনকে বলা হয় ১ হার্জ। সকল স্পন্দন মানুষের কানে ধরা পড়ে না তথা শ্রুতির অনুভূতি সৃষ্টি করে না। সাধারণভাবে মানুষের কানে ২০ থেকে ২০,০০০ হার্জ স্পন্দনের শব্দ তরঙ্গ শ্রুত হয়।‌‌ পরিবেশের জন্য স্বাস্থ্যকর শব্দের তীব্রতা ৬০ ডেসিবল। এই পরিধির কম হলে শব্দকে হলা হয় ইনফ্রা সাউন্ড এবং এর বেশি হলে বলা হয় আল্ট্রা সাউন্ড। কোন বস্তু শব্দের চেয়ে বেশী গতিতে বাতাসের মধ্য দিয়ে ধাবিত হলে তাকে বলা হয় সুপারসনিক[2]

শব্দের গতি

কোনো বস্তুর কম্পনের ফলে শব্দ তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। শব্দ উৎস থেকে মস্তিস্কে বা কানে আসতে কিছুটা সময় নেয়। শব্দ কোনো মাধ্যমে একক সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে শব্দের গতি বলে।কঠিন পদার্থে শব্দের গতি সবচেয়ে বেশী। এসআই পদ্ধতিতে শব্দের গতির একক মিটার প্রতি সেকেন্ড(মিটার/সেকেন্ড বা মি/সে)। শব্দ সঞ্চালনের জন্য স্থিতিস্থাপক জড় মাধ্যমের প্রয়োজন হয়। শব্দের বেগ জড় মাধ্যমের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। তাই বিভিন্ন মাধ্যমে শব্দের বেগ বিভিন্ন হয়। এজন্য কঠিন, তরল ও বায়বীয় মাধ্যমে শব্দের বেগের তারতম্য হয়। ২০°C তাপমাত্রায় বায়ুতে, পানিতে ও লোহায় শব্দের বেগ যথাক্রমে ৩৪৪মি/সে, ১৪৫০মি/সে ও ৫১৩০মি/সে। বায়ুতে শব্দের বেগ কম, তরলে তার চেয়ে বেশি এবং কঠিন পদার্থে সবচেয়ে বেশি।[3] মাধ্যমের প্রকৃতি ছাড়াও তাপমাত্রা, বায়ুর আর্দ্রতার উপরেও শব্দের বেগ নির্ভর করে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে বায়ুতে শব্দের বেগ বৃদ্ধি পায় এবং একইভাবে বায়ুর আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেলেও শব্দের বেগ বৃদ্ধি পায়।[4]

অনুদৈর্ঘ্য এবং ট্রান্সভার্স তরঙ্গ

শব্দ গ্যাস, প্লাজমা এবং তরলের মধ্য দিয়ে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ হিসাবে সঞ্চারিত হয়, যাকে সংক্ষেপণ বা সংকোচন তরঙ্গও বলা হয়। এটির প্রবাহের জন্য একটি মাধ্যম প্রয়োজন। কঠিন মাধ্যমে, তবে এটি অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ এবং অনুপ্রস্থ তরঙ্গ উভয় ভাবেই সঞ্চালিত হতে পারে। অনুদৈর্ঘ্যিক শব্দ তরঙ্গগুলি অসম চাপ থেকে পরিবর্তিত চাপ বিচ্যুতির তরঙ্গ, সংকোচন এবং বিরলতার স্থানীয় অঞ্চলগুলির কারণ , যখন অনুপ্রস্থ তরঙ্গ (কঠিন পদার্থে) ডান কোণে পরিবর্তনের দিকের সাথে সঞ্চালন করে।

তথ্যসূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.